পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○ 〉○ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ বেগম মুজিব কিভাবে কাটিয়েছেন দৈনিক বাংলা ৪ জানুয়ারা, ১৯৭২ মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি বেগম মুজিবের বিষাদঘন দিনগুলোর কয়েকটি কথা দিকে। বাইরের ঘরেই বসেছিলেন বেগম শেখ মুজিব। হাসিমুখেই আহবান জানালেন আমাকে। বাড়ীটার উল্লেখ করতেই হেসে বললেন- এটাতো তবুও একটা মাথা গুজবার ঠাই, কিন্তু ২৫শে মার্চের পর পুরো দেড় মাস তাও কোথাও পাইনি। আজ এখানে কাল সেখানে, এমনি করে সেই মাসে কম করে হলেও চোঁদ পনেরটা বাসা বদল করেছি। হাসছিলেন বেগম মুজিব, কিন্তু দেখলাম হাসি মাঝে কেমন জানি অস্পষ্ট এক বিষগ্নতার ছোঁয়ায় করুণ হয়ে উঠেছে তাঁর চোখের দৃষ্টি। ২৫শে মার্চের সেই ভয়াবহ রাত। অন্ধকার শোবার ঘরটাতে বিছানায় শুয়ে শেখ সাহেব শুনছিলেন বাইরে বোমায় বিধ্বস্ত ঢাকার আর্তনাদ। উত্তেজনায় এক এক সময় উঠে বসছিলেন তিনি। ঠিক এমনি এক মুহুর্তে গুলির একটি টুকরো জানালা ভেদ করে ছোট ছেলে রাসেলের পায়ে আস্তে করে লাগে। অন্ধকারে হাতড়ে গুলিটা কুড়িয়ে নিয়েছিলেন শেখ সাহেব। আর সেই দুঃসহ রাতেই নরপিশাচরা তাকে বন্দী করে নিয়ে গিয়েছিল। বাড়ীতে তখন ছিলেন বেগম মুজিব, আর তার দু'ছেলে। ২৬শে মার্চ- সমস্ত দিন ছিল কারফিউ। গোলাগুলির শব্দ তখনও থামেনি। নিস্তব্ধ বাড়ীটা জুড়ে যেনো এক ভৌতিক বিভীষিকা মাথা খাড়া করে উঠেছে। সামনে ধানমণ্ডি বালিকা বিদ্যালয়ে তাক করে রাখা বড় বড় কামানের মুখগুলো আমার বাসার দিকে। ভয়ে জানালাগুলো পর্যন্ত বন্ধ করে দিতে পারিনি। দুপুরে কারফিউর মধ্যেই এ বাসা ও বাসা করে বড় ছেলে কামাল এসে পৌঁছালো। রাত এলো। সেই আধার কাল রাত। ইয়াহিয়া খানের হিংস্রভাবে চিবিয়ে চিবিয়ে বলা বিবৃতি শুনেই নিজেদের অবস্থা বুঝতে পারলেন বেগম মুজিব। তাই কালবিলম্ব না করে ছোট ছেলে আর মেঝ ছেলেকে নিয়ে পাঁচিল টপকে প্রতিবেশী ডাক্তার সাহেবের বাড়ীতে আশ্রয় নিলেন। অন্যদিকে বড় ছেলে কামাল এবং মহিউদ্দীন সাহেব পালালেন অন্যদিকের পাঁচিল ডিঙ্গিয়ে। রাত ১১টা থেকেই তোপদাগার শব্দে কানে তালা লাগার জোগাড়। কতকটা চেতন কতকটা অচেতন অবস্থায় বেগম মুজিব ২৬শে মার্চের সেই ভয়াবহ রাতে শুনলেন তাঁর আদরের বাড়ীতে গোলাগুলির শব্দ। রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত। সে রাতে এভাবে না পালালে তাঁর এবং তাঁর সন্তানদের ভাগ্যে কি যে ঘটতো আজও তিনি তা ভাবতে পারেন না। ২৭শে তারিখ সকালে বাচ্চা দু’টো সাথে নিয়ে তিনি আবার পালালেন। পুরো দেড় মাস এ বাসা ও বাসা করেন। শেষে মগবাজারের এক বাসা থেকে পাক বাহিনী তাঁকে আঠারো নং রোডের এই বাসায় নিয়ে আসে। ১৮নং রোডে আসবার পূর্বকার মুহুর্তটি স্মরণ করে গম্ভীর হয়ে গেলেন বেগম মুজিব। বললেন‘আমি তখন মগবাজারে একটা বাসায় থাকি। আমার বড় মেয়ে হাসিনা তখন অন্তঃসত্ত্বা। সে, জামাই, আমার দেওর, জা, মেয়ে রেহানা, পুত্র রাসেলসহ বেশ কয়েকজন একসাথে ছিলাম মগবাজারের বাসাটাতে। হঠাৎ একদিন