পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ג(5י বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড পাকসেনাদের গুলির আঘাতে অনেকে প্রাণ হারায়। বেলা তিনটায় পাক সেনারা তাঁতিবজারের বাহির পথ ও মালিবাগের পুলের পশ্চিম পার্শ্বে হিন্দু মন্দিরের উপর শেলিং করে মন্দিরটি ধ্বংশ করে দেয়। ইংলিশ রোডের আগুন বাসাবো এলাকে অতিক্রম করে সুইপার কলোনীর দিকে ধেয়ে আসতে থাকলে আমি সুইপারদের কলোনীটি রক্ষা করার জন্য অগ্রসর হলে আমরা পাক সেনাদের গুলির মুখে চলে আসি। ১৯৭১ সনের ২৮শে মার্চ সকালে রেডিও মারফত সকল সরকারী ও বেসরকারী কর্মচারীকে অবিলম্বে কাজে যোগদান করতে হবে এ নির্দেশ পেয়ে পরদিন আমি সকাল দশটার সময় ঢাকা পৌরসভায় ডিউটি রিপোর্ট করলে ঢাকা পৌরসভার তৎকালীন কনসারভেন্সি অফিসার মিঃ ইদ্রিস আমাকে ডোম নিয়ে অবিলম্বে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকা লাশ তুলে ফেলতে বলেন। ইদ্রিস সাহেব অত্যন্ত ক্রদ্ধভাবে বলতে থাকেন সাহেব আলি বের হয়ে পড়, যদি বাচতে চাও তবে ঢাকার রাজপথ ও বিভিন্ন এলাকা থেকে লাশ তোলার জন্য বের হয়ে পড়। কেউ বাঁচবে না কাউকে রাখা হবে না, সবাইকে পাক সেনাদের গুলিবর্ষনে মরতেহবে, সবাইকে কুকুরের মত হত্যা করা হবে। পেীসভার তৎকালী চেয়ারম্যান মেজর সালামত আলী খান শুর আমাদের সাথে কুকুরের মত উত্তেজিত হয়ে, অত্যন্ত কর্কশস্বরে ক্রদ্ধভাবে বকাবকি করতে থাকেন। সেখানে আমি, সুইপার ইন্সপেক্টর আলাউদ্দিন, সুইপার ইন্সপেক্টর কালিচরণ, সুইপার সুপারভাইজার পাঞ্চাম, সুইপার ইন্সপেক্টর আওলাদ হোসেন আমরা পাঁচজন উপস্থিত ছিলাম। আমাকে পরদেশী ডোম, মন্টু ডোম, লেমু ডোম, ডোম গোলাপ চান, দুঘিলা ও মধু ডোমকে নিয়ে ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতাল থেকে লাশ তুলে স্বামীবাগ আউটকলে ফেলতে বলা হয়। ১৯৭১ সনের ২৯শে মার্চ আমার দল ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালের লাশ ঘর থেকে দুট্রাক লাশ তুলেছে। আমার দল যে সকল লাশ তুলেছে আমি স্বচক্ষে তা দেখেছি। অধিকাংশই ছিল সরকারী কর্মচারী, পুলিশ, আনসার ও পাওয়ারম্যানদের খাকী পোশাক পরা বিকৃত লাশ লাশ তুলতে তুলতে পরদেশী নামে আমার জনৈক ডোমের হাতে এক ষোড়শী রূপসীর উলঙ্গ ক্ষবিক্ষত লাশ দেখলাম, দেখলাম সেই যুবতীর পবিত্র দেহে অসংখ্য ক্ষত চিহ্ন, তার বুক থেকে স্তন সজোরে তুলে নেওয়া হয়েছে, লজ্জাস্থান ক্ষতবিক্ষত হয়ে আছে, পিছনের মাংস তুলে নেওয়া হয়েছে। হরিণের মত মায়াভরা মধুময় বড় বড় চোখ ঘুমিয়ে আছে, সারাদেহে সৃষ্টিকর্তা যেন দুধের সর দিয়ে আবৃত করে দিয়েছে, মাথায় কালো কালো চুল তার কোমর পর্যন্ত লম্বা হয়ে পড়েছিল, তার দুই গালে আঘাতের চিহ্ন দেখলাম। পরক্ষণেই দেখলাম দশ বছরের এক কিশোরীর উলঙ্গ ক্ষতবিক্ষত লাশ। অপরূপা রূপসী ফলের মত টক টকে চেহারা, সারাদেহে বুলেটের আঘাত। ১৯৭১ সনের ৩০শে মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল থেকে ভারপ্রাপ্ত পাক সেনাদের মেজর পৌরসভায় টেলিফোনে সংবাদ দেন রোকেয়া হলের চারিদিকে মানুষের লাশের পচা গন্ধে সেখানে বসা যাচ্ছে না, অবিলম্বে ডোম পাঠিয়ে লাশ তুলে ফেলা হোক। আমি ছয়জন ডোম নিয়ে রোকেয়া হলে প্রবেশ করে রোকেয়া হলের সমস্ত কক্ষে তন্ন তন্ন করে খুঁজে কোন লাশ না পেয়ে চারতলা ছাদের উপর গিয়ে আঠার বছরের জনৈক রূপসী ছাত্রীর উলঙ্গ লাশ দেখতে পেলাম। আমার সাথে দায়িতুরত জনৈক পাক সেনাকে জিজ্ঞাসা করলাম এ ছাত্রীর দেহে গুলির কোন ফেটে পড়ে বললো আমরা সকল পাকসেনা মিলে ওকে ধর্ষণ করতে করতে মেরেছি। পচা-ফুলা সেই রূপসীর উলঙ্গ দেহ পড়ে আছে দেখলাম। ডাগর ডাগর চোখ ফুলে বের হয়ে আছে, মাথার চুল নিকটেই ছিড়ে ফেলা হয়েছে, লজ্জাস্থান তার পেট থেকে ফুলে অনেক উপরে উঠে আছে, যোনিপথ রক্তাক্ত। তার দুদিকে গালে পশুদের কামড়ের চিহ্ন দেখলাম, বক্ষের স্তনে মানুষের দাঁতের দংশনের চিহ্ন দেখলাম। আমি একটি চাদর মালীদের স্ত্রী পরিজনদের পাঁচটি লাশ এবং আটটা পুরুষের লাশ (মালী) পেয়েছি। লাশ দেখে মনে হলো মৃত্যুর পূর্বক্ষণে সবাই শুয়ে ছিল। আমি ট্রাক নিয়ে ঢাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিব্বাড়ীর তেতলা থেকে জনৈক হিন্দু অধ্যাপক, তার স্ত্রী ও দুই ছেলের লাশ তুলেছি। স্থানীয় জনতার মুখে জানতে পারলাম তার দুই মেয়ে বুলেটবিদ্ধ হয়ে হাসপাতে আছেন। সংগৃহীত লাশ স্বামীবাগ আউটকলে ফেলে দিয়ে আমরা ট্রাক নিয়ে ঢাকা