পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

85, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড ી ૨૦ | মোহাম্মদ মাহমুদুল আশরাফ গ্রাম ও পোঃ ঘোড়াশাল কালীগঞ্জ, ঢাকা নভেম্বর মাসের ১৭ তারিখ ঘোড়াশাল ষ্টেশনে মিলিটারী ক্যাম্প থেকে ৫০/৫৫ জনের একটি দল ভোর ৬টায় ষ্টেশনের দক্ষিণ দিকের দু’তিনটা পথ দিয়ে খিলপাড়া ও আটিয়া গ্রামের দিকে অগ্রসর হয়। আমি ঘাড়াশাল থেকে তার একদিন পূর্বে বৈয়ম গ্রামে চলে যাই। পাক বাহিনী প্রথমে খিলপাড়া গ্রামে প্রবেশ করে। খিলপাড়া গ্রামের জনৈক দোকানদার ইসলামের সাথে পাক বাহিনী সাক্ষাৎ করে। বিশেষ করে উল্লেখ্য যে, পাক বাহিনী পূর্বেই ইসলামকে দোকানদার হিসেবে চিনত। পাক বাহিনী ইসলামকে সাহায্য করতে বলে। উপায়ন্তর না দেখে ইসলাম বাধ্য হ’ল পাক বাহিনীর সাহায্য করতে। এরপর শুরু হয় পাক বাহিনীর ধ্বংসলীলা। একের পর এক বাড়ী ধ্বংস করতে থাকে এবং লোকজনকের এক এক করে গুলি করে হত্যা করে। প্রকাশ, ইসলাম একজন ধর্মভীরু লোক। তিনি কোরআন শরীফ পাঠ করছিলেন। হয়ত বা অনেক লোক পাক বাহিনীর ভয়ে পালাচ্ছে। সেই মুহুর্তে পাক বাহিনী গুলি কের ওখানেই তাদেরকে শেষ করেছে। এমনকি শিশু, নারী-পুরুষ কেউই তাদের নৃশংস হত্যা হতে নিস্তার পায়নি। হত্যার সাথে সাথে অগ্নিসংযোগ চালিয়ে যায়। এত মর্মান্তিক ধ্বংসলীলাকে তৈমুরের ধ্বংসলীলার সাতে তুলনা করা যায়। এমনিভাবে দু’গ্রামের প্রায় ২০০ নারী, পুরুষ ও শিশুকে হত্যা করে। অনেক লোক রাস্তায়, কেউ ঘরে আবার কেউ সেতুর নীচে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। পাক বাহিনীর এ অভিযান প্রায় ৮ ঘন্টা পর্যন্ত চলে। পাক বাহিনীর সাহায্যকারী ইসলাম তাদের এ অপকার্যে সাহায্য করেছিল। যখন পাক বাহিনী দেখল তাদের সাহায্যের আর প্রয়োজন নেই তখন পাক দস্যরা ইসলামকেও হত্য করে। প্রায় ২০০ মৃতদেহের মধ্যে জনগণ ২ জনের মৃতদেহকে সমাহিত করেছিল। ঘোড়াশালের রেল ষ্টেশনের পাক বাহিনীর একটা ক্যাম্প ছিল। দৈনন্দিন খাওয়ার যাবতীয় জিনিসপত্র গ্রামের নিরীহ লোকদের নিকট হ’তে জোর করে নিয়ে যেত। পাক পশুরা তাদেও পশুতু চরিতার্থ করার জন্য গ্রামের যুবতী মেয়েদের উপর মাঝে মাঝে পাশবিক অত্যাচার চালাত। সত্যি কথা বলতে কি পাক বাহিনী সমগ্র ঘোড়াশালে একটা সন্ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে। ঘোড়াশাল বাজার বন্ধ হয়ে যায়, স্কুলে কোন ছাত্র আসত না। গ্রাম পায়ই জনশূন্য ছিল। যদি দু’একজন বাংগালী দেখত তাদের ধরে নিয়ে যেত কাজ করার জন্য। তখন মনে হতো আমার জীবনের মূল্য ১ পায়সাও নয়। হঠাৎ একদিন পাক বাহিনী আমাকে এবং আরও অনেক লোককে ধরে ফেলে। মুসলমান ছিলাম বলে বেঁচে যাই। স্বাক্ষর/মোঃ মাহমুদুল আশরাফ