পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (অষ্টম খণ্ড).pdf/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(여 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : অষ্টম খন্ড լլ Ջbr եւ খাজা কামরুল হক গ্রাম-নওয়া পোঃ-কিশোরগঞ্জ ময়মনসিংহ সর্বপ্রথম ১৯৭১ সালের ১৮ই এপ্রিল পাক হানাদার বাহিনী কিশোরগঞ্জ মহকুমার সদর এরলাকায় প্রবেশ করে। ভৈরব হতে ট্রেনযোগে প্রায় দুই শতাধিক হানাদর সৈন্য ভারী অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঐদিন বিকেল ৪ ঘটিকায় কিশোরগঞ্জ রেলওয়ে ষ্টেশনে উপস্থিত হয়। এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরের সমস্ত লোক তাদের বাড়িঘর ত্যাগ করে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে গ্রামের দিকে পালিয়ে যায়। মুক্তি সংগ্রামীরাও তাদের হালকা অস্ত্ৰ-শস্ত্র ফেলে দিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। পাক সৈন্যরা শহরের মধ্যে প্রবেশ করে পলায়নপর লোকদের উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। তাদের প্রথম বলি হয় জনৈক রিক্সাওয়ালা এবং একজন আহবান জানায়; কিন্তু এত কেউ কর্ণপাত করেনা। এ সময় জনৈক ধর্মান্ধ দালালের ইশারায় তারা এখানকার পতিতালয়টি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত করে দেয়।এরপর তারা বহু বাড়ীঘর বিশেষ করে হিন্দুদের বাড়ী সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে জুলিয়ে দেয়। পরদিন পাক সৈন্যরা মাইকযোগে পুনরায় লোকজনকে ফিরে আসার আহবান জানায়। যে সমস্ত দোকানপাট হিন্দুদের ছিল সেগুলির তালা ভেঙ্গে লুট করার জন্য জনসাধারণকে বাধ্য করতে থাকে। ভীতসন্ত্রস্ত জনগণ লুটের মাল মাথায় নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় পাক সেনারা সে অবস্থায় তাদের কিছুসংখ্যকের ফটো তুলে নেয় এবং তারপর সঙ্গে সঙ্গে গুলি করে হত্যা করে। মে মাসের প্রথম দিকে ভৈরব থেকে আরও কিছু সংখ্যক সৈন্য আসার পর তারা স্থানীয় ডাকবাংলোয় ঘাঁটি স্থাপন করে এবং পি.ডি.পি জামাতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, নেজামে ইসলামের লোকজনকে নিয়ে এক শান্তি কমিটি গঠন করে। এরপর হানাদার সৈন্যরা স্থানীয় দালালদের সহায়তায় রাজাকার ও আল-বদর বাহিনী গঠন করে। এদের সহযোগে তারা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে নির্বিচারে ও কোথাও কোথাও বেছে বেছে লোককে হত্যা করতে থাকে। ১৮ই এপ্রিল থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এই আট মাসে পাক হানাদাররা কিশোরগঞ্জ সদর এলাকায় ৩০০ থেকে ৪০০ লোককে হত্যা করেছে এবং ১ কোটি টাকার মত সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করেছে। গাঙ্গাকিয়া গ্রামের বিশিষ্ট পরোপকারী জমিদার ভূপতি বাবুকে নির্মমভাবে হত্যা করে। জুন-জুলাই মাসের দিকে একদিন পাক সেনারা ভূপতি বাবুর বাড়ী ঘেরাও করে তাঁকে ধরে ফেলে। স্থানীয় জনগণকে তাঁর বাড়ী লুট করাতে বাধ্য করে। ভূপতি বাবুর অন্তিম ইচ্ছা কি পাক ক্যাপ্টেন তা জানতে চাইলে তিনি প্রথমে প্রাণের বিনিময়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেবার কথা জানান; কিন্তু পাক ক্যাপ্টেন তা সঙ্গে সঙ্গে নাকচ করে দেয়। তখন ভূপতি বাবু জীবনের শেষবারের মত একটা গান গাইতে চান। উল্লেখযোগ্য তিনি একজন গুনী সঙ্গীত শিল্পীও ছিলেন। তার আরজি মঞ্জুর হলে তিনি যে গানটি গান তাতে উপস্থিত জনগণ কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। পাকহানাদাররাও সঙ্গীতের মূর্ছনায় বিগলিত হয়ে পড়ে, কিন্তু এতদসত্ত্বেও ভূপতি বাবু রক্ষা পান নাই। পরে তাঁকে অমানুষিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র চিস্তিসহ কয়েকজন ছাত্রকে পাক ফৌজরা হত্যা করেছে। কিশোরগঞ্জ থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে যুবতী মেয়েদেরকে তারা ধরে এনে ধর্ষণ করতো। প্রায় শতাধিক জনের উপর তারা নির্যাতন চালিয়েছে। স্বাক্ষর/ ৫/৪/৭৩