পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

183 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খন্ড হয়েছেন, তারা অস্থাবর সম্পত্তি নন যে বিনিময়ে তাদেরকে হাতবদল করা হবে। সমান ও মর্যাদার সঙ্গে নিজ বাসভূমে ফেরার জন্মগত অধিকার তাদের আছে এবং তারা সেখানে সেভাবেই ফিরে আসবেন আর আমি বলছি যে, তার খুব বেশী দেরী নেই। ঠিক এই সময়ে এই উপমহাদেশের তথ্য সংগ্রহের জন্য একটি বিশেষ দল পাঠিয়ে প্রেসিডিন্ট নিকুন কি উদ্দেশ্য সাধন করতে চান? তার দেশের কূটনীতিবিদ ও আইন সভার সদস্যের অবগত নন এমন কি নতুন তথ্য তিনি জানতে ইচ্ছুক? দশ লক্ষ বাঙালীকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা এবং প্রায় এক কোটি মানুষকে বাস্তত্যাগে বাধ্য করা সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকারকে তার প্রশাসন নিন্দা করেননি। এখন তথ্য সংগ্রাহক পাঠিয়ে কি ফল তারা লাভ করতে চান, জানি না। তবে এতে আমাদের সংকল্পের কোন ব্যত্যয় হবে না। সে সংকল্প হল দেশকে শত্রমুক্ত করে নিজেদের অভিপ্রেত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। অশ্রু ও রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতার জন্য আমরা লড়ছি, সে স্বাধীনতা লাভের দিনটি নিকটতর হয়েছে। কিন্ত তার জন্য আরও আতুত্যাগ, কণ্ঠস্বীকার ও জীবনদানের প্রয়োজনে হবে। স্বাধীনতার ধারণা অশেষ অর্থগর্ভ। স্বাধীনতার তাৎপর্য নির্ভর করে যুদ্ধবস্থায় এর জন্য আমরা কি মূল্য দিই এবং শান্তির সময়ে এর কি ব্যবহার করি, তার উপর। শত্রসংহারে প্রতিজ্ঞা গ্রহনের সঙ্গে সঙ্গে তাই শহীদদের রক্তের উপযুক্ত সমাজ গঠনের প্রতিজ্ঞার আমাদেরকে নতুন করে নিতে হবে। বাংলাদেশের শহরে ও গ্রামে তরুণেরা যে যুদ্ধ লিপ্ত, তা বিদেশের দখলদারদেরকে বিতাড়িত করার সংগ্রাম এবং অসাম্য ও সুবিধাভোগের অবসান ঘটানোর ংগ্রাম। আমাদের আজকের সংগ্রাম সেদিনই সার্থক হবে, যে দিন আমরা বঙ্গবন্ধু-প্রতিশ্রুতি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ঠব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হই। সমাজের যে ভবিষ্যত রূপ এখন ংলাদেশের জনসাধারন প্রত্যক্ষ করছেন সেখানে সমানাধিকারের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবন গঠিত হবে এবং উন্নয়ন ও পরিপূর্ণতার সাধারন লক্ষ্যে উপনীত হবার প্রয়াসে সকলে অংশগ্রহণ করবেন। বাংলাদেশের জনসাধারণের অবিসংবাদিক নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজও পাকিস্থানের সামরিক চক্রের হাতে বন্দী হয়ে রয়েছেন। আমাদের দৃড়বিশ্বাস, তাঁকে মুক্ত করার একমাত্র উপায় হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে হানাদার সৈন্যদের নিষ্ক্রমণের সকল পথ রুদ্ধ করে দেওয়া। জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে শত্রকে আমরা চরম আঘাত হানব আর তখনই জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্রুর সত্যের মুখোমুখি হবেন। বাংলাদেশের জনগণের কাছে আমার আহবানঃ মুক্তিসংগ্রামের বর্তমান পর্যায়কে চূড়ান্ত স্তরে নিয়ে চলুন। যেসব সরকারী কর্মচারী রাজাকার, পুলিশ বা অন্যান্য ব্যক্তি বিবেকের নির্দেশের বিরুদ্ধে হানাদারদের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা সামরিক চক্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার সুযোগ গ্রহণ করুন। শত্রপক্ষের সঙ্গে যাঁরা স্বেচ্ছায় হাত মিলিয়েছেন, তাঁদেরকে আমি শেষবারের মত বলতে চাইঃ বিশ্বাসঘাতকতার পথ পরিহার করুণ। অনুপাতহীন বিশ্বাসঘাতকদের আর তাদের বিদেশী প্রভূদের পরিণতি একই হবে আর তা হল গ্লানিকর মৃত্যু। হাজার হাজার মুক্তিসেনা আজ শত্রকে ঘিরে রেখেছে, তার অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলেছে। সকলে প্রস্তুত থাকুনঃ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আহবানে চরম মুহুর্তে যেন সর্বশক্তি দিয়ে শত্রকে একযোগে চরম আঘাত করতে পারেন। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে যারা সাফ্যল্যের বর্তমান স্তরে নিয়ে এসেছেন, সেই বীর শহীদ, সেই অকুতোয়ভয় যোদ্ধা ও সংগ্রামী জনগণকে আমি সালাম জানাই। জয় বাংলা।