পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৬৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

647 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খন্ড স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের খবরে প্রকাশ, চট্টগ্রামের বহু গ্রামাঞ্চলে এখন মুক্তিফৌজের দখলে এবং এইসব এলাকার গৃহশীর্ষে স্বাধীন বাংলার পতাকা শোভা পাইতেছে। অপর এক সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা যায় যে, দুই দিনব্যাপী প্রচন্ড লড়াইয়ের পর ৮ই জুলাই মুক্তিফৌজ দিনাজপুর জিলার ঠাকুরগাঁও মহকুমা শহরটি দখল করে। উল্লেখযোগ্য যে, ঠাকুরগাঁও মহকুমা একটি কমিউনিষ্ট প্রভাবিত এলাকা এবং এখানকার লড়াইয়ে আওয়ামী লীগ ও ন্যাপ কর্মীদের সহিত কমিউনিষ্ট কর্মীবৃন্দও সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। আমাদের সংবাদদাতা জানাইতেছেন, ঢাকা জিলার নারায়ণগঞ্জ মহকুমার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে মুক্তিফৌজ গত কিছুদিনে বহুসংখ্যক পাক হানাদার সেনা খতম করেন এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ রেল ও সড়ক সেতু ধ্বংস করেন। এই মুক্তিফৌজ ইউনিটটি নরসিংদীর একজন কুখ্যাত মুসলিম লীগপন্থী বেইমানকে হত্যা করেন। এই এলাকার সংগ্রামে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও কৃষক সমিতির কর্মীরা নেতৃত্ব দেন। বি বি সির খবরে স্বীকার করা হয়েছে যে, সাম্প্রতিককালে মুক্তিফৌজের তৎপরতা উলেস্নখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাইয়াছে এবং ঢাকা অদূরে মুক্তিফৌজের সহিত পাক বাহিনীর বহু সংঘর্ষ ঘটে। খোদ ঢাকা শহরে মুক্তিফৌজ কর্তৃক অভিজাত নিউ মার্কেট এলাকায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটান হইলে সামরিক কর্তৃপক্ষ গত সোমবার হইতে পুনরায় সান্ধ্যা আইনের কড়াকড়ি বৃদ্ধি করে বলিয়া বাংলাদেশ সরকারে সূত্রে জানা গিয়াছে। উল্লেখযোগ্য যে, ইতিপূর্বেও মুক্তিফৌজ ঢাকার বেতার কেন্দ্র, বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে ও ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলে এবং গভর্ণর ভবন ও সেক্রেটারীয়েটের সম্মুখে বোমা বিস্ফোরণ করে। আকাশবানীর এক খবরে বলা হয়, মুক্তিবাহিনী প্রচন্ড আক্রমণ চালাইয়া ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জিলার তিনটি থানাকে মুক্ত করেন। ইহা ছাড়াও বিভিন্ন রণাঙ্গন হইতে প্রাপ্ত খবরে প্রকাশ, সিলেট, কুমিল্লা, ফেনী, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ প্রভৃতি রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা উল্লেখযোগ্য রূপে বৃদ্ধি পাইয়াছে এবং সর্বত্র ইয়াহিয়া খানের দসু্যবাহিনী নাস্তানাবুদ হইতেছে। বিপুলসংখ্যক পাক সেনা মুক্তিফৌজের হাতে নিহত হইয়াছে। বরিশাল ও পটুয়াখালীর জলপথেও পাকফৌজকে অতর্কিত আক্রমণের শিকার হইতে হইয়াছে। অপরদিকে পাক ফৌজ শহর ও গ্রামাঞ্চলের নিরস্ত্র মানুষের উপর হামলা ও অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রাখিয়াছে এবং অগণিত নরনারী-শিশুকে হত্যা করিয়াছে। ঢাকা সফরকারী বৃটিশ পার্লামেন্টারী দলের নেতা লন্ডনে ফিরিয়া গিয়া মন্তব্য করেন যে, বাংলাদেশে গণহত্যা এখনও চলিতেছে। মুক্তিফৌজের সাফল্য গত সাতে তিন মাসের লড়াইয়ের ফলাফল পর্যালোচনা করিলে দেখা যায় বাংলাদেশের মুক্তিফৌজের সাফল্য মোটেই সামান্য নয়। মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনা চলিতে থাকাকালে ইয়াহিয়া বেইমানী করিয়া ২৫ শে মার্চ রাত্রের অন্ধকারে বাংলাদেশের জনগণের উপর যখন তাহার দসু্যবাহিনী লেলাইয়া দেয় তখনও জনগণের তরফে এইরূপ একটি সশস্ত্র ও সর্বাত্মক লড়াইয়ের বাস্তব প্রস্তুতি ছিল না বলিলেই চলে। অল্প সময়ের মধ্যে প্রথমদিকে বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআরের বিভিন্ন অংশের পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ কিম্বা যুদ্ধ তৎপরতার সমন্বয় সাধনের ব্যবস্থা ছিল না। তদুপরি অস্ত্রশস্ত্র, গোলা-বারুদ, যানবাহন প্রভৃতির অভাব ত ছিলই। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও মুক্তিফৌজ অতুলনীয় বীরত্বের সহিত লড়াই করিয়া বহু শত্রুসৈন্য হতাহত করেন। বাংলাদেশের