পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৬৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

659 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খন্ড পাক সেনা অধিকৃত যশোর মাগুরায় ছিল বাড়ী। পড়ত চুয়াডাঙ্গা ডিজে গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে। নবম মানের ছাত্র। বাপকা বেটা তরুণ হোসেন। বাপ থাক তার নামটা উহ্য মুক্তিফৌজের সেনা। তরুণও তাই। কণিষ্ঠতম। তরুণ তিন ভাইয়ের মেঝ। তারও ছোট আছে। হবে সেও মুক্তিসেনা। মা আছেন। তরুণ ট্রেনিং নিয়েছে লাইট মেশিন গান, ষ্টেনগান, রাইফেল চালাতে হাতবোমা ছুড়তে; নিয়েছে গেরিলা প্রশিক্ষণও শিখছে স্কাউটিং স্বাধীন বাংলাদেশ হানাদার সেনামুক্ত করবেই এই তার পণ। তার মুখের দিকে তাকিয়ে এ কথা বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয়। তার মুখে যেন সরল বিশ্বাসের দীপ্ত আভা। একা তরুণ নয়। ওর সঙ্গে ১৬,১৭,১৮,২০,২২ বছরের আরও ১০০ তরুণ নিয়েছে রণশাস্ত্রের দীক্ষা। সবাই ছাত্র। তাদের আগে হাজার তিনেকের মত প্রশিক্ষন পেয়ে গেছে। শিক্ষাকাল দেড় মাস। জিগগেস করেছিলামন্ড কেন, শুধু ছাত্র কেন? চাষী বা মজুর নয় কেন? বলল তাড়াতাড়ি শিখতে হবে তো তাই একটু লেখাপড়া জানা দরকার বালিষ্ঠ আশা, শিগগির একটা কিছু হবে, বড় রকমের হবে। এখানকার শেখা শেষ হলে বাছাই করা অনেককে আরও বড় কিছু শেখাবার জন্যও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওর চোখের সামনে সেই বড় দিনটা ভাসছে। স্বাধীন বাংলা বেতার ও শোনে। অনেকে শোনে। বাংলাদেশেও । কিন্তু কেউ শুনছে জানলে মৃত্যুদন্ড। হয়েছেও কয়েকজনের। ছুটি নিয়ে কলকাতায় এসেছে ঔৎসুক্য মেটাতে খোলাখুলিই বলল। হাওড়া ব্রিজ দেখবে, দেখবে সংবাদপত্রের অফিস। দেখে এবার ফিরে যাবে। কিন্তু বেশ বুঝছি, মাঝে মাঝে নিজের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে। ওর চোখে ফ্রন্টের স্বপ্ন। এখনো গাছ ছাড়া লক্ষভেদ করেনি। এবার আসল লক্ষভেদ শ্রত্ৰসেনা। হাতের টিপ ঠিক আছে, এবার ফ্রন্ট। ওর মুখে-চোখে উল্লাস ও ফ্রন্টে যাবে। -যুগান্তর, ২৪ জুলাই, ১৯৭১ 米米米米米米米米米米米米 বল্লা রণাঙ্গনে প্রচন্ড যুদ্ধ ৫১ জন হানাদার সেনা খতম : ক্যাপ্টেন সহ ৬০ জন ঘেরাও গত ১৫ জুলাই থেকে বর্বর হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিফৌজের অবিরাম যুদ্ধ চলছে। দুর্বনিত সাহস এবং অসীম মনোবল নিয়ে দস্য হানাদারদের খতম করার জন্য বল্লায় শত্রু ঘাঁটিতে মুক্তিবাহিনী তিনদিক থেকে শাঁড়াসী আক্রমণ অব্যাহত রেখেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মুক্তিবাহিনীর দুঃসাহসীক বীর যোদ্ধারা শত্রসেনাদের বিপুল ক্ষয়সাধন করে তাদের অবরোধ করে রেখেছেন। তারা পালিয়ে যাবার ব্যর্থ চেষ্টা করে নিজেদের ক্ষয়ক্ষতিই শুধু বৃদ্ধি করেছে। ১৬ই জুলাই বল্লাতে আটক সেনাদের উদ্ধাদের জন্য ৫ নৌকা ভর্তি পাক সেনা বিপুল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বল্লার দিকে এগোতে থাকে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধারা চারানে পাক সেনাদের অতর্কিতে আক্রমণ করেন। এই অতর্কিত হামলায় দসু্য সেনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনীর গুলিতে হানাদার সেনা ভর্তি তিনটি নৌকা বিধ্বস্ত হয়ে পানিতে ডুবে যায় এবং প্রত্যেকটি সেনার সলিল সমাধি হয়। প্রচন্ড গুলিবর্ষণ করে মুক্তিবাহিনী ১৫/১৬ জন শত্রসেনা খতম করেন। পাক সেনাদের মধ্যে যারা নদীর তীল দিয়ে হেঁটে আসছিল তারা বল্লার দিকে ভাগতে চেষ্টা করে। বল্লার পাক সেনারা এই ভাগোয়াট পাকসেনাদের মুক্তিফৌজ মনে করে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ এবং মর্টারের শেলিং করে। প্রচুর গুলি বিনিময়ে বহুসংখ্যক পাক সেনা হতাহত হয়। সকাল ৭টা থেকে