পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



678

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

কুমিল্লায় অতর্কিত আক্রমণ

  আগরতলা থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, মুক্তিবাহিনী কুমিল্লার সালদা নদীতে পাক সৈন্যবাহিনী একটি মোটর লঞ্চ আক্রমণ করে আটজন খান সেনাকে খতম করেছেন। নয়নপুরে ও মউলাভাগের অর্ধাংশ সম্প্রতি মুক্তি এলাকায় পরিণত হয়েছে। মউলাভাগে বাজারের পাক সৈন্য শিবিরও আক্রন্ত হয়েছে।

 মুক্ত এলাকায় দখল করার জন্য পাক সৈন্যরা ২৩ শে আগষ্ট থেকে গ্রামে গোলবর্ষণ করেছে। মুক্তিবাহিনীও পাল্টা আক্রমণ করেছেন। পাক সৈন্যরা রঘুরামপুর, কাশীরামপুর, কুলাপাথর, চারুয়া, চাঁদখোলা, মন্দভাগ, কাইমপুর, মোনিপুর, কমলপুর, দাউশ, গিকরা, জৈকালি প্রভৃতি এলাকায় গোলাবর্ষণ করে জনসাধারণের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। বহু লোক আহত হয়েছেন।



-আনন্দবাজার, ২৫ আগষ্ট, ১৯৭১
* * * * *

মুক্তিবাহিনীর সাফল্য

 পাক-হানাদার বাহিনী আজ বিপর্যস্ত। চারিদিকে। সর্বত্র নদীতে, বন্দরে। শহরে গঞ্জে। হাটে ঘাটে বাংলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত।

 পাক-দস্যুদের জাহাজ ডুবেছে জাহাজের পশুগুলো তলিয়ে যাচ্ছে বাংলার নদীতে। অতলে। সড়কে জীপ উড়ে যাচ্ছে কত শার্দুল মুক্তিযোদ্ধাদের মাইনে। মস্তক চলে যাচ্ছে মেশিনগানে, মটারে। ছাউনিতে উড়ে যাচ্ছে আঘাতে ছাই কুটার মত। চারিদিকে একই অবস্থা। হানাদার বাহিনীর পরাজয় আসন্ন। মীরজাফরের গোষ্ঠীকে শেষ করতে হচ্ছে শয়তানের সাথে। নির্মুল হচ্ছে অবাঞ্ছিতের দল। এদিকে মুক্তাঞ্চল গড়ে উঠেছে একের পর এক স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের বিজয় পতাকা উড়ছে সেখানে।

 বেসামরিক প্রশাসন নেবে এসব এলাকা। অন্যান্য স্বাধীন সার্বভৌম দেশের মত বাংলাদেশে সরকারকে দিচ্ছে ট্যাক্স খাজনা। এসব এলাকায় গড়ে উঠছে এক বলিষ্ঠ শক্তিশালী জনগোষ্ঠি। সমরিকবেসামরিক।

 খুলনা সাতক্ষীরা মহকুমা আজ সম্পূর্ণ মুক্ত। গত ১৯ শে আগষ্ট মক্তিযোদ্ধারা অর্ধ ডজন দেশী বিদেশী জাহাজ তলিয়ে দিয়েছে মঙ্গলার বন্দরে পথে জলে। হত্যা করেছে শতাধিক হানাদার বাহিনী। ধরে নিয়ে এসেছে বনবালা নামে দুটো অস্ত্র বোঝাই লঞ্চ গ্রেফতার করেছে ৪ জন দালাল ফরেষ্ট অফিসার। তাদের সাথে আগ্নেয়াস্ত্রগুলোও বাদ যায়নি। এ ছিল রণাঙ্গণের সর্ববৃহৎ সাফল্য।

 খুলনার শ্যামনগরে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়ছে। এ অঞ্চল এখন সম্পূর্ণ মুক্ত। এ ছাড়া এ জেলার সাতক্ষীরা, পাইকগাছা, আশামুখী, বাগেরহাটও মুক্ত।

 ফরিদপুরের রাজবাড়ী, আলফাডাঙ্গা, গোপাকাণ্ডে হানাদার বাহিনী নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। জনগণ স্বাধীন সার্বভৌম জীবনযাপন করছে এসব এলাকায়।

 বরিশালে গৌরনদী, উজিপুর এসব এলাকার প্রায় ৪০ বর্গমাইল মুক্ত।

 পটুয়াখালীর গৌরনদী, উজিপুর এসব এলাকার প্রায় ৪০ বর্গমাইল মুক্ত।

  পটুয়াখালী জেলার সড়ক ছাড়া সর্বত মুক্ত। জেলা সদরে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার পাক-দস্যুদের উপর আঘাত হেনে যাচ্ছে। পতন আসন্ন।

 গত ১৮-১৯ শে আগষ্ট রাতে শ্যামনগরে হানাদার বাহিনীর ৩৩ জন দসু্য নিহত হয়। ১৭ই আগষ্ট কালীগঞজ দিয়ে যাবার সময় মুক্তিবাহিনীর সাথে হানাদার বাহিনীর ৬ ঘণ্টাব্যাপী এক সংঘর্ষ বাধে। এখানে