পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



710

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

রণাঙ্গন থেকে বলছি

 গত ছয় মাসে স্বাধীনতাকামী মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের তৎপরতা দিনের পর দিন সাফল্যের সিংহ দ্বারে গিয়ে পৌছতে আরম্ভ করেছে। সাম্প্রতি পাক বাহিনী তহ্যদের বহু ঘাঁটি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

 কুমিল্লা: মুক্তিবাহিনীর গেরিরারা কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন অঞ্চলে সাফল্যজনক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি কুমিল্লা জেলা স্কুল ও কান্দির পাড়ে গ্রেনেড চার্জ করে ও দখলদার বাহিনীর ক্ষতি সাধন করে।

 অপর একটি সংবাদে প্রকাশ মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা জালুয়ার পাড়ায় একজন পাক মেজর ও তার ৬ সঙ্গীকে খতম করে ও তাদের অস্ত্রাদি নিয়ে আসে।

 কুমিল্লায় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কুমিল্লা খণ্ডে ফেনী ও বেলোনিয়ার মধ্যবর্তী ফুলগাজি রেল সেতুটি মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের হাতে বিধ্বস্ত হয়। এ সপ্তাহের গোড়াতেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে বাংলাদেশ বাহিনীর হেড কোয়টার থেকে প্রকাশিত যুদ্ধ বুলেটিন বলা হয়েছে।

 ফেনী ও বিলোনিয়াতে এখনও পর্যন্ত পাক জল্লাদদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের প্রচণ্ড লড়াই চলছে।

 গত ৪ঠা অক্টোবর কুমিল্লা জেলার কসবার কাছে তৃতীয় পাঞ্জাব রেজিমেণ্টের একটি লঞ্চ গেরিলারা ডুবিয়ে দেয়। এত বহু পাক সেনা খতম হয়।

 বাঞ্ছারামপুরে আরেকটি লঞ্চ গেরিলারা ডুবিয়ে দেয়। এতে দশজন পাক সেনা মারা যায়।

 ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে ওই একই অঞ্চলে গেরিলারা তিনটি দ্রুতগামী ষ্টিমার ডুবিয়ে দিয়েছে। এছাড়া পাক সেনারা দশটি নৌকারও ক্ষতি করেছে।

 গত সপ্তাহে কুমিল্লা জেলার কসবার কাছে মুক্তিবাহিনী অতর্কিত একটি পাক সৈন্যবাহী লঞ্চ আক্রমণ করে দুইশ জন পাঞ্জাবী সৈন্য খতম করে। বাঞ্ছারামপুরেও পাক বাহিনীর আর একটি লঞ্চ ডুবিয়ে দিয়ে দশজন ও ঐ এলাকায় অপর এক আক্রমণে ৩টি গানবোট ডুবিয়ে ও ১০ টি নৌকা ক্ষতি সাধন করে একজন লেফটেনেণ্ট কর্নেল ও একজন ক্যাপ্টেনসহ ১৪ জন শত্রসৈন্য খতম করে। আমড়াতলীতে নয়নপুরে রেলষ্টেশনের কাছে ৩ জক পাক হানাদারকে খতম করে।

 নোয়াখালীতে: ফেনী অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের উপর দুর্বর আক্রমনের জন্য পরশুরাম ও অনন্তপুরে ঘাটি করে। নিজেদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে মুক্তি সেনারা মর্টারসহ ছোট ও ভারি অস্ত্র নিয়ে প্রবল আক্রমণের পর ১৯ জন পাক সেনা খতম করে। তাতে পাক সেনারা পিছনে হটতে থাকলে মুক্তিবাহিনীর বীরেরা এগিয়ে সরাসরি আক্রমণে লিপ্ত হয়ে আরও ৪০ জনকে খতম করে। এরপর অনন্তপুরে মুক্তিবাহিনীর ঘাটি আক্রমন করলে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৩০ জন সৈন্যকে ঘায়েল করে। গেরিরা রণকৌশল অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা সাময়িকভাবে পিছিয়ে যায়। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নতুন উদ্যম নিয়ে আবার অধিকতর শক্তিতে আক্রমন করলে অষ্টাদশ পাঞ্জাব রেজিমেণ্টের ৩০ জন সৈন্য খতম হয়। আবার পুনরায় নিজেদের ঘাঁটি দখল করে।

 বর্তমান খবর অনুসারে ফেনী এবং বিলোনিয়ার গেরিরা ও পাক হানাদারদের মধ্যে প্রবল যুদ্ধ চলাকালে একজন জেসিওসহ ২৭ জন শত্রু সৈন্য খতম হয় এবং গেরিলারা ফেনী ও বিলোনিয়ার সংযোগ রক্ষকারী ফুলগাজী রেল সেতুটি উড়িয়ে দেয়।

 রাজশাহী: এ মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজশাহী ও নবাবগঞ্জের মধ্যবর্তী রেল পথে গেরিলারা এক দুর্ধর্ষ আক্রমন চালিয়ে একটি সৈন্যবাহী ট্রেন বিধ্বস্ত করার ফলে ২৩ জন পাক সেনা খতম হয়।