পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



712



বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

শ্রীহট্টে ছাতক শহরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড্ডীন

 ১৬ই অক্টোবর- মুক্তিবাহিনী ছাতক সিমেণ্ট কারখানা ও শহরের ওপর বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছে। শ্রীহট্ট জেলার সুরমা নদীর উত্তর তীরে এই শিল্পনগরীটিকে পুনরায় অধিকার করার পর এই পতাকা উত্তোলন করা হয়।

 দক্ষিণ তীরে ছাতক বাজারের জন্য তুমুল যুদ্ধ চলছে। সীমান্তের ওপার থেকে এই খবর এসে পৌছেছে।

 মুক্তিবাহিনী ছাতক ও জেলা সদর কার্যালয় শহর শ্রীহট্ট টাউনের মধ্যে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ছাতক বাজার মুক্তিবাহনীই দখল করবে বলে মনে হচ্ছে।

 মুজিবনগর থেকে ইউএনআই এর খবরে প্রকাশ, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, মাদিরবাড়ী, মাদিনঘাট, চাঁদপুরে চারটি পাওয়ার সাবষ্টেশন ধ্বংস করে দিয়েছে, ফলে টাউন ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল অন্ধকারে ঢেকে দিয়েছে। এখানে বাংলাদেশ বাহিনীর সদর কার্যালয়ে এক যুদ্ধ বুলেটিনে এ খবর জানা গেছে।

 ৭ই অক্টোবর চট্টগ্রামের কাপতাই লাইনে গেরিলাবাহিনী বৈদুতিক লাইন ধ্বংস করে দিয়েছে।

 ১২ই অক্টোবর পাক বাহিনীর সঙ্গে এক সংঘর্ষে মুক্তিফৌজ তিনজন পাক সেনাকে খতম করে। গুথুমা ও পূর্ব দেবপুরে পাক সৈন্যরা ওপর দুটি পৃথক আক্রমনে দু’জনকে খতম করে ও আটজনকে জখম করে।

  নোয়াখালী জেলার ছাগলনাইয়া থানায় হানা দিয়ে মুক্তিবাহিনী চারজন পাক সৈন্যকে খতম করেছে। গত সপ্তাহে ঢাকা জেলায় হরিরামপুর ও মালুচিম বাজারে তারা ২৫ জন পাক সৈন্যকে হত্যা করে।

মুক্তিবাহিনী মারমুখী: নিজস্ব নৌবহর তৈরি, বৈমানিকরা সংগঠিত

 কৃষ্ণনগর, ১৬ অক্টোবর- বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী এখন মারমুখী। আর শুধু গেরিলা লড়াই নয়, অ্যামবুশ বা চোরাগোপ্তা গুলি চালানো নয়, তারা এনকাউনটার বা সম্মুখ সমরের জন্য তৈরি। প্রমাণ? প্রমাণ পশ্চিম সেক্টরে দু’জায়গায় তাঁরা চবিবশ গণ্টায় ৬৬ জন পাকিস্তানী সেপাইকে নিহত করেছেন। ঢাকাতে এক জায়গায় ২৫ জন পাক ফৌজ তাঁদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে।

 কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টরেও মুক্তিবাহিনী দারুণ সক্রিয়। পাকিস্তানীরা মরছে তাদের হাতে। এই অঞ্চলে তাদের মৃত্যুর হার এখনও খুচরো ধরনের। কোথাও দুই, কোথাও চার। জখম হচ্ছে অনেক।

 নৌবহর, বৈমানিক সমিতি। মুজিবনগর থেকে দুটি তাৎপর্যপূর্ণ খবর এসেছে। একটি হল: বাংলাদেশের কোন এক জায়গায় মুক্তিবাহিনীর নিজস্ব নৌবহর সংগটিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নামে এই নৌবহরের নাম দেওয়া হয়েছে। আপাতত এতে আছে পাঁচটি মোটরবোট সব কয়টি পাক ফৌজের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া।

 দ্বিতীয় সংবাদটি হল: বাংলাদেশের বিমানকর্মী ও বৈমানিকরা মিলিত হয়ে একটি সংস্থা গঠন করেছেন। তার কো-অরডিনেটার হয়েছেন শ্রী এসএ হোসেন। এর আগে পাক বিমান বহর ও পাকিস্তান ইনটারন্যাশনাল এয়ারওয়েজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

 উপরের সব খবর পিটিআই ও ইউএনআই-এর সুত্রে পাওয়া। 

-আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৭ অক্টোবর, ১৯৭১
* * * * *