পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



730

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 আর এক সংবাদে প্রকাশ, গত ২৪শে অক্টোবর আমাদের মুক্তিবাহিনী নির্ভিক জোয়ানগণ ময়মনসিংহ জেলার কামালপুর অঞ্জলে আক্রমণ পরিচালনা করে ৬৭ জন পাক সেনাদের খতম করে এবং বহুসংখ্যক পাক সেনাকে আহত করে বেশ কিছু অস্ত্র ও গোলা-বারুদ হস্তগত করে। মুক্তিফৌজের সাফল্যজনক এই অভিযান পরিচালনা করেন মুক্তিফৌজের অধিনায়ক মেজর আবু তাহের।

 বিলম্বে পাওয়া এক সংবাদে প্রকশ গত ১৭ ও ১৮ই অক্টোবর আমাদের দুঃসাহসিক গেরিলা বাহিনী পৃথক পৃথক দুইটি অভিযানে ময়মনসিংহ-ঢাকা রেল পথ ও তার যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। 

-অগ্রদূত, ২৭ অক্টোবর, ১৯৭১
* * * * * * * * *

মুনাফেকীর পরিণাম

 ফুলবাড়িয়া, ২৫শে অক্টোবর, ডফুলবাড়িয়া থানার কালীগঞ্জ বাজারে আমাদের বীর জোয়ানরা রাজাকার ঘাঁটি আক্রমণ করে ত্রিশজন রাজাকারকে হত্যা ও পচিশজনকে আহত করেন।

 ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করবে এই মর্মে এক খবর মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটিতে প্রেরণ করে। আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধারা তাদের কথায় বিশ্বাস করে ঘাঁটিতে আসতে অনুমতি দেন। সন্ধ্যার সময় মুক্তিযোদ্ধারা যখন ঘাঁটির ভিতরে ইফতার করতে ব্যস্ত ঠিখ সেই সুযোগে প্রায় পঞ্চাশজন রাজাকার অতর্কিতে আক্রমণ করে তিনজন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে যায়। এই সংবাদ ভালুকা শাখা মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক জনাব আফসার সাহেব পাওয়া মাত্রই কালীগঞ্জে গিয়ে রাজাকার ঘাঁটিতে আক্রমণ চালান এবং ঐ তিনজন মুক্তি সেনাকে উদ্ধার করে ত্রিশজন রাজাকারকে গ্রেপ্তার করেন। মুক্তিবাহিনীর বীর জোয়ানরা শক্র ঘাঁটিটি সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেন এবং ঘাঁটির পচিশটি রাইফেলসহ বহু গোলাবারুদ হস্তগত করেন। এ যুদ্ধে স্থানীয় জনসাধারন বিরাট সাহসিকতার পরিচয় দেন, তারা পলায়নরত রাজাকারদের উপর দা, বল্লম, লাঠি সড়কী নিয়ে আক্রমণ করেন। ফলে দু’জন রাজাকার ঘটনাস্থলেই মারা যায় এবং আটজন আত্মসমর্পণ করে।

কাদেরের নেতৃত্বেঃ কালিহাতী

 টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী থানার রতনগঞ্জে গত ৪ঠা কার্তিক পাক বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর ১৬ ঘণ্টাব্যাপী এক প্রচণ্ড সম্মুখযুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধে ৪০ জন পাক সেনা খতম হয় এবং অনেকে আহত হয়। আমাদের মুক্তিবাহিনীর তিনজন শহাদাতবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহে.....রাজিউন)

১৫ দিনে গেরিলাণ্ড

 বর্তমান মাসের গত ১৫ দিনে আমাদের দুঃসাহসী গেরিলারা ১০৩৪ টি স্থানে হামলা করে ১০৯০ জন শত্রুসৈন্য খতম করেছেন। এখানে উল্লেখযোগ্য যে এ সময়ে বাংলার কুখ্যাত মীরজাফর মোনায়েম খাঁসহ আরও নয়শত জন দালালকে আমাদের আমাদের মুক্তিবাহিনীরা হত্যা করেছেন।

ডিনামাইট দিয়ে পুল উড়িয়ে দেয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ ট্রেন চলাচল ব্যাহত

 গফারগাঁও,—গত ২৮শে আশ্বিন, শুক্রবার রাত ১২টায় দুঃসাহসী গেরিলারা মুশাখালী ষ্টেশনের অগ্রবর্তী ২৫ হাত লম্বা হুরচুংগীর পুর ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন। ঐ রাতেই গেরিলারা লাইন পাহারারত শক্রবাহী একটি ট্রেন অতর্কিত আক্রমণ করেন। এতে উনিশজন শক্রসেনা নিহত হয় এবং প্রচণ্ড আক্রমণে টিকতে না