পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



739

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 কয়েকদিন পুর্বে মুক্তিবাহিনী সিলেটের বানিয়াচঙ এবং ধর্মপাশা থানা দুটি মুক্ত করেছিল। এখন ঐ দুটি এলাকায় আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের শক্তি আরও দৃঢ় করেছে।

 মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড শেল ও মেশিনগানের গুলীবর্ষণের মুখে পাকিস্তানী সেনারা তাদের পূর্বতন অবস্থান থেকে ক্রমাগত পেছনে হটে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

 মুক্তিবাহিনীর প্রবল গোলবর্ষণে ঢাকা-আজমিরীগঞ্জ, শেরপুর নৌপথ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সিলেটের সরবরাহ প্রধানতঃ এই নৌ পথটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার ফলে সিলেট সেক্টরে পাক বাহিনীর জরুরী সরবরাহ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত এক পক্ষকালে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের ফলে এই নদী পথে ছ’টি জলযান ডুবে যায়। এই জলযানগুলো ঢাকা থেকে সিলেটে জরুরী সরবরাহ নিয়ে যাচ্ছিল।

পাক সেনা নিহত

 জয়ন্তিপুর ও সারিঘাট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এত সোমবার মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে আটজন পাক সেনা নিহত হয়েছে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা খুমারঘাট বিধ্বস্ত করেছে এবং সিলেট শহরের দু’টি বিদ্যুৎ পাইলন ধ্বংস করেছে।

ঢাকা ক্যাণ্টনমেণ্টে দিনরাত কাফন তৈরী হচ্ছে

 মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা ঢাকায় বর্তমানে খুবই সক্রিয়। গেরিলাদের তৎপরতার ফলে পাক সেনারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১৮৯ জন পাকিস্তানী সেন নিহত হচ্ছে। ছুতাদের মৃত অফিসারদের কফিন তৈরী করার জন্য ক্যাণ্টনমেণ্টে দিনরাত কাজ করেছে। কবরস্থ করার জন্য পাক সৈন্যদের লাশ এই সব কফিনে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানো হয়।

 সম্প্রতি লণ্ডনের সানডে টাইমস’ প্রত্রিকায় প্রকাশিত রিপোটে একথা বলা হয়েছে।

 বাংলাদেশ থেকে সানডে টাইমস’-এর সংবাদদাতা তাঁর রিপোর্টে সম্প্রতি ঢাকায় একাধিক সরকারী ভবনের উপর আটশ'রও বেশী গেরিলার ধারাবাহিক আক্রমনের কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকটি সরকারী বাড়ী শহরের প্রধান ব্যবসা কেন্দ্রে অবস্থিত।

 উক্ত রিপোর্টে আরো বলা হয় যে, গেরিলা আক্রমণের ফলে পাক বাহিনী বিমান বন্দর সুরক্ষিত রাখার জন্য বিমান বন্দর পর্যন্ত প্রধান সড়কের দু’পাশে পিল বক্স’ স্থাপন করতে বাধ্য হয়েছে। 

-জয় বাংলা, ১২ নভেম্বর, ১৯৭১
* * * * *

চৌগাছায় তুমুল লড়াই

 বনগাঁ সীমান্ত, ২৭শে নভেম্বর- যশোর থেকে অসামরিক লোকদের অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক অসমর্থিত সংবাদে জানা গেছে যে, যশোর শহরের কিছু লোক ভারতের ২৪ পরগনা সীমান্তে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে আশ্রয় চেয়েছে।

 রেডিও পাকিস্তান আজ স্বীকার করেছে যে, যশোরের চৌগাছায় তুমুল লড়াই চলেছে। চৌগাছা যশোর ক্যাণ্টনমেণ্ট থেকে প্রায় ১২ মাইল পশ্চিমে। যশোর ক্যাণ্টনমেণ্টের লড়াইয়ে পাকিস্তানী ফৌজের জয়লাভের জন্য রেডিও পাকিস্তান মসজিদে মসজিদে প্রার্থনা করতে অনুরোধ জানিয়েছে। যশোর রক্ষার জন্য প্রতিটি সৈন্য ও প্রতিটি লোককে সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে বলা হয়েছে।