পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



753

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

৪৫০ জন সৈন্য নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে প্রচুর। কয়েকজন অফিসারসহ বেশ কিছুসংখ্যক দখলদারী সৈন্য মুক্তিবাহিনীর হাতে বন্দী হয়েছে। একটি ট্যাংক ঘায়েল হয়েছে।

 জয়পুরহাট শহরটি হল দিনাজপুর জেলার এবং বগুড়া জেলার মাঝামাঝি স্থানে। হিলি থেকে জয়পুরহাটের দূরত্ব মাত্র ১০ মাইল।

  জয়পুরহাটের ওই চিনি কারখানার উপর থেকে পাকবাহিনী ক্রমাগত ভারতের হিলির উপর গোলবর্ষণ করছিল। সন্ধ্যার আগেই পাকিস্তান বাহিনী তাদের শেফি ট্যাঙ্ক নিয়ে পালাবার চেষ্টা করলে মুক্তিবাহিনী বগুড়া সড়কের দুদিক ঘিরে অক্রমণ শুরু করে। সংঘর্ষের সময় পাকবাহিনী ট্যাংক, ভারীকামান থেকে প্রচুর গোলাবর্ষন করে। রবিবার মুক্তিবাহিনী ওই সেক্টরে মোট চারটি ট্যাংক ঘায়েল করেছে।

-আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৯ নভেম্বর, ১৯৭১
* * * * *

মুক্তিফৌজের নিয়ন্ত্রণে ফেনীঃ শ্রীহট্টের ১৫ মাইল দূরে তুমুল যুদ্ধ

 ফেনী শহর সোমবার মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু শহরের আশপাশ থেকে পাকিস্তানী সৈন্যদের নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত মুক্তিবাহিনী সরকারীভাবে ফেনী দখলের সংবাদ ঘোষণা করছেন না। আজ সকালে রেডিও পাকিস্তান ফেনী শহরের বুকে তুমুল লড়াইর কথা স্বীকার করেছে।

 ফেনী দখলের ফলে উত্তরে লাকসাম থেকে দক্ষিণে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে চলেছে। ফেনী থেকে লাকসামের রেল দূরত্ব ২৪ মাইল ও চট্টগ্রামের রেল দূরত্ব ৪০ মাইল। ফেনী শহরের কাছে সিলুনিয়া নদীর আশেপাশে এলাকাগুলি গতকাল মুক্তিবাহিনী দখল করে।

 মুক্তিবাহিনী এই সেক্টরে আজ আর একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছে শ্রীহট্টে। আজ সন্ধ্যায় মুক্তিবাহিনী শ্রীহট্ট শহর থেকে পনের মাইল দূরে এসে পৌঁছেছে এবং সেখানে শাহবাগে তুমুল যুদ্ধ চলছে।

 যশোর ক্যাণ্টেনমেণ্টে মুক্তিবাহিনীর অবরোধ আরও তীব্র হয়েছে। জানা গেছে, যে, যশোর সেক্টরে কয়েকটি বিক্ষিপ্ত এলাকা থেকে পাকিস্তানী ফৌজদের সরিয়ে ক্যাণ্টনমেণ্টে আনা হয়েছে। ঝিকরগাছায় এখনও বিক্ষিপ্ত যুদ্ধ চলছে।

 টাঙ্গাইল সম্পূর্ণ মুক্ত হয়েছে এবং কিশোরগঞ্জ মহকুমা শহরকে মুক্তিবাহিনী চার দিকে থেকে অবরোধ করেছে।

 কুষ্টিয়া সেক্টরে মুক্তিবাহিনী গতকাল পাকিস্তানীদের কয়েকটি বাংকার দখল করে ২০ জন পাকিস্তানী সৈন্য ও একজন মেজরকে বন্দী করেছে।

 কুষ্টিয়ার জীবননগর থেকে যশোরের চৌগাছা পর্যন্ত প্রায় ২২ মাইল এলাকা থেকে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানী সৈন্যদের হটিয়ে দিয়েছে।

 মুক্তিবাহিনী পূর্বে শ্রীহট্ট ও ময়মনসিংহ জেলা এবং পশ্চিমে যশোর ও খুলনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্ত করেছে। বিভিন্ন রণাঙ্গনে শক্রসেনার ওপর মুক্তিবাহিনী সর্বাত্বক আক্রমণ চলছে। কয়েক স্থানে নতুন করে শত্রর ওপর আক্রমণ করা হয়েছে।

 শ্রীহট্ট জেলায় গতকাল জয়মতীপুরের দক্ষিণে ছোট খেল এলাকা মুক্ত হয়েছে। কানাইঘাটে পাক আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছে।