পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



755

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 রংপুর জেলার সীমান্ত এলাকা চিলমারী ভুরুঙ্গামারীতে বাংলার গেলিা বাহিনী বিশেষ তৎপরতা চালিয়ে পাকসৈন্য ঘাঁটিগুলি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। বহু খানসেনা খতম হয়েছে।

 গেরিলারা শান্তাহার ও পারবতীপুরের মধ্যবর্তী রেলসেতুটি ডিনামাইট বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়েছেন।

রণাঙ্গন সংবাদ

   বাংলার মুক্তি সংগ্রামের সূদীর্ঘ আট মাসের ইতিহাসে গত এক সপ্তাহের মধ্যে প্রত্যেকটি রণাঙ্গন থেকে আমাদের বীর মুক্তিবাহিনীর অভূতপূর্ব অগ্রগতি ও সাফল্যের সংবাদ বিভিন্ন বেতার কেন্দ্র ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া গিয়েছে তা যেমনি উৎসাহব্যঞ্জক ও মহিমামণ্ডিত তেমনি বাংলার স্বাধীনতা সূর্যের উদয়নের নিশ্চিত সংকেতসূচক।

 গত এক সপ্তাহে রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, পটুয়াখালী, চিটাগাং, সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল ও নোয়াখালী প্রভৃতি জিলার রণাঙ্গনগুলিতে আমাদের দুর্বার সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা অভূতপূর্ব বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে দস্যু পাক বাহিনীর বিপুল ক্ষতিসাধন করে তাদের সুরক্ষিত ঘাঁটিগুলি থেকে হটিয়ে দিয়ে প্রত্যেকটি জিলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল মুক্ত করেছে এবং উক্ত মুক্ত অঞ্চলে স্বাধীন বাংলা সরকারের বেসামরিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। বর্তমানে মুক্তি সেনারা সদ্য মুক্ত অঞ্চলগুলিতে নিজেদের অবস্থানগুলি সুদৃঢ়করত আরও অগ্রগতির জন্য শক্রসেনার উপর প্রবল চাপের সৃষ্টি করে চলেছে।

 এই সপ্তাহের মুক্ত অঞ্চলগুলির মধ্যে রংপুরে নাগেশ্বরী থানা, দিনাজপুরের পচাগড় মহকুমা, টাঙ্গাইল জেলার অবশিষ্টাংশ সিলেট জেলার শমসের নগর, শহর নোয়াখালীর পরশুরাম থানা, ছাগলনাইয়া প্রভৃতি স্থাপন দখল অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও শত্রপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান যশোর দুর্গ, ফেনী শহর, সুনামগঞ্জের উত্তরাঞ্চল, দর্শনা এখন মুক্তিফৌজের দ্বারা সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ এবং এসব অঞ্চলে শত্রুপক্ষের সঙ্গে আমাদের মুক্তিবাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে।

 এ সপ্তাহে আমাদের বীর মুক্তিবাহিনীর নৌবাহিনীর গেরিলাদের অত্যন্ত তৎপর দেখা দিয়েছে। তাদের তৎপরতার ফলে শক্রসেনাদের ৪টি জলযান ধ্বংস সাধন ও ২টি আমাদের করতলগত হয়েছে।

 শক্র পক্ষের মোট তিনটি বিমান ও সতেরটি ট্যাঙ্কের ধ্বংস সাধন এ সপ্তাহের বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা।

কালির বাজার অভিযান

 রৌমারী। ২৯ শে নভেম্বর। আমাদের নিজস্ব প্রতিনিধি পরিবেশিত সংবাদে প্রকাশ, গত ২৯ শে নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর দুর্বার সাহসী জোয়ানগণ গাইবান্ধা মহকুমার কালির বাজারে এক অভিযান পরিচলনা করে ৬ জন পাক পুলিশ ও রাজাকারকে গ্রেফতার করে এবং নয়টি রাইফেলসহ প্রায় চারশত গুলি হস্তগত করে।এই অভিযানে আমাদের একজন মুক্তিসেনা শাহাদাৎ বরণ করে।

 অন্য আর একটি অভিযানে কুড়িগ্রামের মোগলপুর অঞ্চলের অদুরে রাজাকারদের অবস্থান থেকে আমাদের দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধারা পাঁচটি রাইফেল ও প্রায় দুইশত গুলি অধিকার করে নেয়।

নাগেশ্বরী অভিযানে মুক্তিফৌজের বিরাট সাফল্য

 কুড়িগ্রাম। ৩০ নভেম্বর। আমাদের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি পরিবেশিত সংবাদে প্রকাশ যে, গত দুই সপ্তাহ পূর্বে যুদ্ধে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পর দস্যু পাকসেনারা বাধ্য হয়ে ভুরুঙ্গামারী ছেড়ে নাগেশ্বরীতে তাদের অবস্থান গড়ে তোলে এবং আমাদের মুক্তিবাহিনীর বীর জোয়ানরা তিন দিক থেকে তাদের ঘিরে ফেলে এবং প্রায় দশদিন যাবত