পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



757

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 এই জেলার তাহের পুর থানা ও সুছানাঘাঁটি মুক্তিবাহিনী সম্পূর্ণ ঘিরে রেখেছে। মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের মুখে পাকসেনারা শ্রীহট্টে শহরের ভিতর ঢুকে নিরাপদ আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। শ্রীহট্টে ও সুনামগঞ্জের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মুক্তিবাহিনীর নৌকমাণ্ডোদের ভয়ে পাক জাহাজ বাংলাদেশে ভিড়তে পারছে না।

 মুজিবনগর, ২৮ নভেম্বর- বাংলাদেশের বীর গেরিলারা বর্তমানে নৌ বন্দরে ও নদীপথে তাদের প্রচণ্ড প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে। এদের দুর্বার আক্রমণে ভীতসন্ত্রস্ত পাক নৌযানগুলো বাংলার অকূল সাগরে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

 খবরে প্রকাশ, গত ২৬শে নভেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের নদীপথে দুটি জাহাজ ও ছটি নৌযান ডুবিয়ে দিয়েছে। তন্মধ্যে নাকি আবার চীনের একটা বাণিজ্যিক জাহাজও ছিল। ফলে অবস্থা বেগতিক দেখে পাক কর্তৃপক্ষ করাচি বন্দরেও রাত্রিবেলায় জাহাজ নোঙ্গর করা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। এমন কি করাচী বন্দরের ১২০ কিলোমিটরের মধ্যে নিজেদের দায়িত্ব ছাড়া কোন জাহাজকে প্রবেশ করতে বারন করা হয়েছে। কারণ, বলা তো যায় না, কখন আবার বন্ধু রাষ্ট্রের জাহাজগুলোর অবস্থাও বেগতিক হয়ে গেছে।

 আমাদের মুক্তিবাহিনীর সদর দফতর জানাচ্ছে যে, চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় এক হাজার টনের একটি তৈলবাহী জাহাজ, মেঘনা নদীতে চীনের একটি বানিজ্যিক জাহাজ, চাঁদপুরের কাছে চারটি বড় ষ্টিমার ও পাক নৌবহরের একটি গানবোট মুক্তিযোদ্ধাদের নীে আক্রমণে নিমজ্জিত হয়ে গেছে।

 উল্লেখ্য, থাকে যে, ডুবে যাওয়া ওই সব জলযানে খাদ্যসামগ্রী ও বাণিজ্যিক পণ্য বোঝাই ছিল। মুক্তিবাহিনীর নৌবহরের এইরুপ দুর্বার আক্রমণে চাঁদপুরের জলপথে এখন জাহাজ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।

এবার বাঁচাও

(স্টাফ রিপোর্টার)

 মুজিবনগর, ২৯শে নভেম্বর- বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা দিকে দিকে জঙ্গীশাহীর মৃত্যু ভেরী বাজিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আর হানাদার পাক দস্যুরা অবরুদ্ধ হয়ে সমস্বরে আর্তনাদ করছে, এবার বাঁচাও মোদের।

 গত ২৮শে নভেম্বর সকালে মুক্তিবাহিনী পাক সামরিক জান্তাদের ব্যুহ ভেদ করে যশোর দুর্গের দিকে এগোতে থাকে। হানাদার বাহিনী মরিয়া হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রগতি রোধের চেষ্টা করে। মুক্তিযোদ্ধারা তখন ভৈরব নদীর তীরে একটি পাকসেনাদের ইউনিট পর্যুদস্ত করে। বহু পাকসেনা প্রাণ হারায়।

 সন্ধ্যা হতে না হতেই মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ আরো তীব্র হয়ে ওঠে। অনন্যোপায় পাক সেনারা তাদের সদর দফতরের উদ্দেশে জরুরী বেতার সংকেত তৎক্ষণাৎ সাহায্য পাঠাবার জন্য আর্ত আবেদন জানায়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তিশালী বেতার যন্ত্রে পাক জান্তাদের উক্ত জরুরী সঙ্কেত ধরা পড়ে যায়। সদাসতর্ক বেঙ্গল রেজিমেণ্টের অফিসারগণ সঙ্কেতের অর্থ বুঝতে পারেন।

 মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে পাকিস্তানী সৈন্যদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে। তাই আত্মরক্ষার জন্য তারা এখন দ্বিতীয় ফ্রণ্ট খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।এই সকল ফ্রণ্ট থেকে তারা শেবারের মতো মরণ কামড় দেবার চেষ্টা চালাতে পারে।

পাক সেনারা এখন পালাবার পথ রক্ষার চেষ্টা পাচ্ছে

(নিজস্ব প্রতিনিধি)

 পূর্ব বাংলায় এখন পাক সামরিক কর্তৃপক্ষের পলায়নপর্ব শুরু হয়েছে। মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমণের সামনে দাঁড়াতে না পেরে এখন তারা দুটাে পন্থা নিয়েছে। সমগ্র পূর্ব বাংলায় চার-পাঁচটা ক্যাণ্টনমেণ্ট শহর বেছে