পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



759

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 স্বাধীনতা যোদ্ধার মরণোত্তর সম্মানঃ সিলেট, ২৬শে নভেম্বর- বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর হাই কমাণ্ড কাম্যাণ্ডো লীডার শ্রীজগৎজ্যোতি দাসকে বীরত্বের জন্য মরণোত্তর সম্মান দানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জগৎজ্যোতিকে গেরিলা যোদ্ধা বলেও বর্ণনা করা হয়। তিনি শত্রর বুলেটে নিহত হবার আগে ১৭ জন পাক সেনাকে খতম করেছেন। এবং কিছু অস্ত্র দখল করেছেন।

 এই সংঘর্ষ শ্রীহট্টের দক্ষিণ পশ্চিমে আজমীর গঞ্জে হয়েছে। তার সঙ্গী দেশপ্রেমিক গেরিলারা শত্রুর চেষ্টা ব্যর্থ করে নিহত শ্রী দাসের মৃতদেহ নিয়ে সামরিক মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন করে।

বালুরঘাট হিলি এলাকায় পাকিস্তানের আরও চারখানা ট্যাঙ্ক ধ্বংস

 মুজিবনগর, ২৯শে নভেম্বর- সপ্তাহখানেক যাবৎ বালুরঘাট-হিলি এলাকায় দারুণ উত্তপ্ত হাওয়া বয়ে চলেছে। ভারতীয় সৈন্যরা প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে গিয়ে এই এলাকায় গত সপ্তাহে ৪ খানা পাকিস্তানী ট্যাংক ধ্বংস করে দেন। উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বেও এই এলাকায় আর একখানা পাক ট্যাঙ্ক বিধ্বস্ত করে দেয়া হয়।

 গত শুক্রবারে বয়রা সেক্টরে ১৩ খানা পাকিস্তানী শাফি ট্যাঙ্ক সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল।

 এই নিয়ে গত সপ্তায় পাকিস্তান মোট ১৮ খানা ট্যাঙ্ক হারালো। বয়রা এলাকায় পাকিস্তানী শেলের আঘাতে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর একজন জোয়ান নিহত হন এবং অপর দু’জন আহত হন। এখানে পাকিস্তানের একখানা সামরিক গাড়ীও ধ্বংস হয়।

পতনের মুখে যশোর ক্যাণ্টনমেণ্টঃ বরিশালে পাকসেনাদের নতুন ঘাঁটি স্থাপনের উদ্যোগ

(রণাঙ্গন প্রতিনিধি)

 মুজিবনগর, ৩০শে নভেম্বর-বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে যশোহর ক্যাণ্টনমেণ্টই হচ্ছে পাক সেনাদের সর্ববৃহৎ ও সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ঘাঁটি। কিন্তু এখানে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে খানসেনারা মুক্তিবাহিনীর হাতে মার খাচ্ছে। তাদের বহু সৈন্য হতাহত হয়েছে। কয়েকখানি ট্যাঙ্ক ও সামরিক গাড়ী ধ্বংস হয়ে গেছে। সর্বোপরি ক্যাণ্টনমেণ্টসহ সমগ্র যশোর শহরটিই মুক্তিযোদ্ধারা অবরোধ করে রেখেছেন।

 মুক্তিযোদ্ধাদের ধারণা, যশোর ক্যাণ্টনমেণ্টের পতন অতি আসন্ন। এ এলাকার পাক সেনারা ত্রাহি ত্রাহি রবে আকাশ ফাটাচ্ছে।

 অতএব দস্যুবহিনী এখন মরিয়া হয়ে একটা নতুন আশ্রয়স্থল বা ঘাঁটি স্থাপনের স্বপ্ন দেখছে। তাদের এই স্বপ্নের ঘাঁটি হিসেবে তারা বরিশাল শহরকেই বেছে নিয়েছে। ইতিমধ্যেই তারা বরিশাল শহরের চতুর্দিকে প্রচুর গান বোট, স্পীড বোট ও নৌসেনাদের দিয়ে কড়া বেষ্টনী গঠন করে ফেলেছে। কিছুকাল আত্মরক্ষার জন্য এবং মুক্তিবাহিনীর অপ্রতিরোধ্য আক্রমণ প্রতিরোধের দুরাকাঙক্ষা নিয়েই তারা বরিশাল শহরে একটি শক্তিশালী ঘাঁটি স্থাপনের প্রয়াস পাচ্ছে।



-সাপ্তাহিক বাংলা, ২ ডিসেম্বর, ১৯৭১

বিভিন্ন রণঙ্গনে পাকবাহিনীর লোটা কম্বল গুটানো শুরু

 মুক্তিবাহিনীর মারের চোটে বিভিন্ন এলাকা থেকে পাকবাহিনীর লোটা কম্বাল গুটানোর সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন রণাঙ্গনে একের পর এক পাকবাহিনীর ঘাঁটিগুলি পতন ঘটে চলেছে। খান সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের বহুমুখি আক্রমণের সম্মুখে পর্যুদস্ত হয়ে একের পর এক এলাকা ছেড়ে দিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে। যশোর রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের অগ্রাভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারা যশোর শহরে শত্রুশিবিরের উপর অবিরাম গোলাবর্ষণ করে চলেছে। মুক্তিবাহিনীর দুর্বার অভিযানে দিনাজপুরের পচাগড় শহরটি তাদের পূর্ণ দখলে আসে। ময়মনসিংহ