পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



765

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: একাদশ খণ্ড

 এই রিপোর্টে বলা হইয়াছে যে বুড়িগঙ্গার অপর পাড়ের এই গ্রামটিতে অন্ততঃ ৮৭ জনকে সামরিক বাহিনীর লোকেরা হত্যা করিয়াছে। ইহাদের অধিকাংশই যুবক। নারী এবং শিশুরাও তাহদের হাত হইতে রক্ষা পায় নাই।

 ঢাকায় এই মর্মে খবর ছড়াইয়াছে যে এই সকল এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা চরম আঘাত হানার জন্য প্রস্ততি গ্রহণ করিতেছে। গত সপ্তাহে একজন সামরিক অফিসার স্বীকার করিয়াছে যে, মুক্তিযোদ্ধারা তাহদের তৎপরতা বৃদ্ধি করিয়াছে।

 এই সামরিক অফিসারটি তাহদের এই অভিযানকে মুক্তিযোদ্ধাদের ঠাণ্ডা’ করার অভিযান বলিয়া বর্ণনা করে এবং বলে কয়দিন অপেক্ষা করুন।

 জিঞ্জিরা হইতে চার্চ এবং রিলিফ কর্মীদের বক্তব্য উদ্ধৃত করিয়া এক রিপোর্টে বলা ইহয়াছে যে ঢাকার উত্তরে ১০ মাইল এলাকা ব্যাপিয়া হানাদার বাহিনী গণহত্যা এবং গণনির্যাতন চালাইয়া যাইতেছে। রাঙামাটি ব্যাপটিষ্ট মিশনে হানাদার বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হইয়া চার্লস আর, হাউজার নামক একজন ধর্মযাজক এবং বহু বাঙালি ‘নান নিহত হন।



-বাংলার বাণী, ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১
* * * * *

বিভিন্ন ঘাঁটি হইতে পাকবাহিনীর পশ্চাদপসরণ

(নিজস্ব সংবাদদাতা)

 আমাদের দুর্ধর্ষ মুক্তিবাহিনী ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন রণাঙ্গনে শক্র সেনাদের উপর চূড়ান্ত আঘাত হেনে চলেছেন। মুক্তিবাহিনী আর মিত্রবাহিনীর সম্মিলিত চরম আঘাতে নাজেহাল হয়ে পাকবাহিনী একরের পর এক তাদের ঘাঁটিগুলি ছেড়ে দিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে। শত্রসেনারা এখন কয়েকটি ক্যাণ্টনমেণ্টে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী তাদেরকে সর্বদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। তাদের পালাবার আর কোন পথ নেই। যশোর রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনী মিত্রবাহিনীর সহেযাগিতায় দুর্ভেদ্য যশোর ক্যাণ্টনমেণ্ট দখল করে নিয়েছেন। যশোর বিমান বন্দর সম্পূর্ণ শত্রমুক্ত করে আর এক তুমুল সংঘর্ষের পর ঝিনাইদহ শহরটি মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী দখল করে নেয়। যশোর এখন সম্পূর্ণ শত্রমুক্ত। রংপুরের লালমনিরহাট বিমানবন্দরে আমাদের মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী দখলে এসেছে। দিনাজপুর শহর দখল করার জন্য মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী শত্রুছাউনির উপর প্রবল আক্রমণ চালিয়েছে। সেখানে এখন তুমুল যুদ্ধ চলছে। কুমিল্লা রণাঙ্গনে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় কুমিল্লা বিমানবন্দর এবং কুমিল্লা শহর দখল করে নিয়েছেন। ময়নামতি ক্যাণ্টনমেণ্ট এখন সম্পূর্ণ অবরুদ্ধ। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী পাকসেনাদের সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে তাদেরকে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। মোমেনশাহী জেলায় কিশোরগঞ্জ, শেরপুর ও জামালপুর শত্রুকবল থেকে মুক্ত করে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর বীর সোনারা মোমেনশাহী শহর ও ক্যাণ্টনমেণ্টের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। লাকসাম ও আখাউড়া আমাদের বীরসেনা ও মিত্রবাহিনীর পূর্ণ দখলে। আখাউড়া ও কুমিল্লার সংঘর্ষে ৭ শতাধিক খানসেনা নিহত হয়েছে। ছাতক ও শ্রীহট্ট শহর সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত হয়েছে। ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ মহকুমমা শক্রকবল থেকে মুক্ত। চারিদিক থেকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী ঢাকার দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে। নারায়নগঞ্জ থেকে মাত্র ১২ মাইল দূরে মেঘনার তীরে দাউদকান্দি পর্যন্ত আমাদের বীরসেনারা ও মিত্রবাহিনী এসে পৌছেছেন। তাদের সুবিশাল দৃষ্টি এখন ঢাকার দিকে।

তোমরা মরবে কেন? অস্ত্র ছেড়ে দাও- জেঃ ম্যানেকশ

 ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনালে ম্যানেকশ বাংলাদেশে হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যদের প্রতি উদ্দেশ করে বলেন, ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তোমরা যদি বাঁচতে চাও ভারতীয় বাহিনীর সামনে অস্ত্র