পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



767

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 একদল সুদক্ষ মুক্তিযোদ্ধা এক অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণের ফলে ৩টি আড়াই টনী কারগো ধ্বংস হয়ে যায়। এখানে ২৭ জন রেঞ্জার পুলিশ নিহত ও ১৩ জন রেঞ্জার পুলিশ আহত হয়।

 কাঁঠালীতে সংঘর্ষ: ২৩শে নভেম্বর। সেকশন কমাণ্ডার এমদাদুল হক (দুলু) ও নাজিম উদ্দিন তাদের সেকশন নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাঁঠালী গ্রামের ধূপজান খালের উত্তর পাশে পাকসেনাদের উপর আক্রমণ করে ৯ জন রেঞ্জার পুলিশ ও ৩৪ জন রাজাকার খতম করেন। এখানে ৪ জন রাজাকার আহত হয়।

 ধূপজানে সংঘর্ষ: ২৬শে নভেম্বর। ভালুকা থানার কাঁঠালী গ্রামে ঢাকা ময়মনসিংহ সিএণ্ডবি রোডের ধূপজান খালের পাড়ে মুক্তিবাহিনীর বীর জোয়ানরা এক প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে ৩জন পাকসেনা ও ৪ জন রাজাকার নিহত করেন।

 ভাওলিয়াবাজুতে প্রচণ্ড যুদ্ধ: ৩০শে নভেম্বর। কমাণ্ডার হালিমের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর বীর জোয়ানরা বাওলিয়াবাজুতে পাক রেঞ্জার ও রাজাকারের উপর এক প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে ২৭ জন রাজাকার নিহত ও বহুসংখ্যক আহত হয়। এই দিন একজন স্বদেশপ্রেমিক রাজাকার, তার কমাণ্ডারকে হত্যা করে ৩টি রাইফেল নিয়ে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে চলে আসে।

 ধামশুরে ৪ জন পাকসেনা ও ১৩ জন রাজাকার নিহত: ধামশুর ২রা ডিসেম্বর। প্লাটুন কমাণ্ডার নাজিম উদ্দিন, দুলু ও সুবেদার মোসলেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে কাঁঠালী গ্রামের বড় রাস্তায় পাকদস্যু ও রাজাকারের এক বিরাট দলের সাথে এক প্রচণ্ড সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সংঘর্ষে ৪ জন পাকসেনা ও ১৩ জন রাজাকার নিহত হয়।

 রাইফেল উদ্ধার: গত ২৮শে নভেম্বর বিকেল ৪ ঘটিকার সময় হবিবাড়ী ইউনিয়নের রক্ষীবাহিনী কুখ্যাত দালাল আবুল হাসেমের বাড়ীতে তল্লাসী চালিয়ে মোরগের খোয়াড়ে ৯০ রাউণ্ড গুলিসহ ১টি ৩০৩ রাইফেল উদ্ধার করে।

 গোলাঘাট সেতু ধ্বংস: সম্প্রতি কাওরাইদ ও সাতখামারের মাঝে অবস্থিত গোলাঘাট রেল সেতুটি মুক্তিযোদ্ধাদের এক দুর্ধর্ষ গেরিলা পার্টি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেন। উল্লেখ করা যেতে পারে এই ৪০ হাত লম্বা সেতুটি বহুদিন যাবত পাকদসু্যদের দ্বারা সুরিক্ষত অবস্থায় ছিল। বর্তমানে ঢাকা ময়মনসিংহ রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যন্ত।

 খা খা খা বক্ষীলারে খা, পাকসেনারে খা: ১লা ডিসেম্বর। কালিয়াকৈর থানার এক পরিত্যক্ত বাঙ্কারে ডিফেন্স নেওয়ার জন্য ৫জন খানসেনা প্রবেশ করে। বাঙ্কারের মধ্যে কবে অলক্ষ্যে এক বিষধর সাপ শীতকালীন ঘুমের প্রয়োজনে আশ্রয় নিয়েছিল, খানসেনারা তা জানত না। কিন্তু উত্ত্যক্ত সাপটি সকল সমরায়োজনকে তুচ্ছ করে নিজের উপস্থিতির চিহ্ন বসিয়ে দেয় বলিষ্ঠ পাঁচ-পাঁচটি শরীরের উপর। পরে এদেরকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় বাংকারটিতে। বিচ্ছিন্নতাবাদী সাপটিকে অবশ্য সেখানে আর দেখতে পাওয়া যায়নি।

 চাপড়বাড়ীতে তিনজন রাজাকার নিহত: ৪ঠা ডিসেম্বর। ভালুকা থানার চাপড়বাড়ীতে বাংলাদেশের দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের সাথে এক যুদ্ধে লিপ্ত হন। ফলে ৩ জন রাজাকার নিহত হয়।

 তল্পিতল্পাসহ নিয়াজীর পশ্চিম-যাত্রা: ৬ইি ডিসেম্বর শ্রুত গায়েবী বেতারের এক ঘোষণায় জানা যায় বাংলাদেশ থেকে ওয়ার্ল্ডের বেষ্ট সোলজারদের নায়ক আয় মেরা জান, আসমানকে চীন, আঁখকে তারা, পেয়ারে দামান, লেঃ জেঃ এ এ কে নিয়াজী তমঘায়ে পাকিস্তান যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশী আক্রমণের সামনে বেকায়দা বুঝে তল্পিতল্পাসহ পশ্চিমে পাড়ি জমিয়েছে।

 এদিকে বাংলাদেশের কেদায় তার মুছোয়াগুলোর সামনে চরম পত্র দাখিল করেছেন মিত্রবাহিনীর চীফ অব-স্টাফ। বলা হয়েছে, তারা যদি জীবনের মায়া রাখে তাহলে যেন অবিলম্বে আত্মসমর্পণ করে।