পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (একাদশ খণ্ড).pdf/৭৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



769

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : একাদশ খণ্ড

 ক্যাণ্টনমেণ্ট দখলের পর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যশোর শহরে প্রবেশ করে। শহর ছিল তখন জনমানবশূন্য, পরিত্যক্ত। মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর আগমণের সাথে সাথে হাজার হাজার মানুষ যাহারা যশোরের পথে পথে জনতা আনন্দ উল্লাসে মাতিয়া মিত্র বাহিনী ও মুক্তি বাহিনীকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানায়। পরিত্যক্ত বাড়ীঘরে ক্রমেই সকলে ফিরিয়া আসিতেছে ও হাট বাজার চালু হইয়াছে।

 দখলদার শত্ররা পলায়নের পথে যেসব সড়ক ও রেলসেতু ধ্বংস করিয়া গিয়াছিল সেগুলি মেরামত করিয়া যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর কাজ শুরু হইয়াছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ান ও মুক্তিবাহিনীর সাথে জনগণ এইসব কাজে হাত লাগাইয়াছে।

সিলেট ও কুমিল্লা দখল

 যশোর ক্যাণ্টনমেণ্ট পতনের দিনেই পূর্ব রণাঙ্গনে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী সিলেট ও কুমিল্লা শহর শত্রুমুক্ত করে। মিত্র বাহিনী হেলিকপ্টারে সিলেট অবতরণ করে এবং পাক বাহিনীকে শহর হইতে বিতাড়িত করিয়া শালুটিকর বিমানক্ষেত্র অবরোধ করিয়া রাখিয়াছে।

 কুমিল্লার ময়নামতি ক্যাণ্টনমেণ্টে কিছুসংখ্যক পাক বাহিনী অবরুদ্ধ হইয়া আছে। উহাদের পালানোর পথ নাই। এদিকে মিত্র বাহিনী দাউদকান্দি পর্যন্ত চলিয়া আসিয়াছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শত্রমুক্ত করিয়া আশুগঞ্জ হইতে মেঘনা পার হইয়া ভৈরবে উপনীত হইয়াছে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী।

দিনাজপুর-রংপুর

 বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও, পীরগঞ্জসহ সদর শহর ছাড়া দিনাজপুর জেলার সবটাই মুক্ত হইয়াছে। সদর শহর দখলের জন্য এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত লড়াই চলিতেছে।

 রংপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল মুক্ত হওয়ার পর সৈয়দপুরের সাব-ক্যাণ্টনমেণ্টে শত্ররা অবরুদ্ধ হইয়া আছে।



-মুক্তিযুদ্ধ, ১২ ডিসেম্বর, ১৯৭১
* * * * *

টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন জেলা সদর মুক্তঃ ঢাকার পতন আসন্ন

 ১২ই ডিসেম্বর। টাঙ্গাইল জেলা শহর মুক্ত করার জন্য স্থানীয় মুক্তিবাহিনী পূর্ব হতে বিভিন্ন দিক থেকে শত্রুর উপর আঘাত হানতে থাকেন, বিশেষ করে তাঁরা টাঙ্গাইল-ঢাকা রাস্তার বহু গুরুত্বপূর্ণ সেতু ধ্বংস করে দেন এবং বাসাইল মুক্ত করেন। ১২ই ডিসেম্বর ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও আমাদের সম্মিলিত আক্রমণ পরিচালনা করেন। এর আগে বহুসংখ্যক ভারতীয় ছত্রিসেনা টাঙ্গাইল শহরের আশেপাশে অবতরণ করেছিলেন। অবস্থা সংকটজনক দেখে পাকবাহিনী ঢাকার দিকে পালিয়ে যেতে শুরু করে। ফলে বিনা রক্তপাতে টাঙ্গাইল মুক্ত হয়। ১২ই ডিসেম্বর সকাল ১০টার সময় মিলিতবাহিনী শহরে প্রবেশ করেন।

 টাঙ্গাইলে ১৪৭২ জন রাজাকার, ৫০০ পাকসেনা ও ২৯৪ জন মিলিশিয়াকে বন্দী করা হয়েছে। এছাড়া কিছুসংখ্যক দালালও ধরা পড়েছে।

 ইতিপূর্বে ময়মনসিংহ, যশোর, সিলেট ও কুমিল্লাসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ শহর মুক্ত হয়ে গেছে। ঢাকা নগরী চারদিক থেকে ঘেরাও করা হয়েছে। খণ্ড খণ্ড লড়াই চলছে। মিত্র বাহিনীর বিমান আক্রমণ ঠেকাবার কোন ক্ষমতাই পাকজঙ্গীবাহিনীর নেই। ফলে ঢাকার পতন আসন্ন ও অবধারিত হয়ে উঠেছে।