পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৪৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

420 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড হিন্দু-মুলমান জনগণের দুর্ভেদ্য একতা। ঐ দুশমনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে বাংলাদেশের জনগণকে বেলুচ-পাঠানসিন্ধি-পাঞ্চাবী মেহনতী জনগণকে মিত্র বলিয়া মনে করিতে হইবে এবং পূর্ব বাংলার সংগ্রামে তাঁহাদের সাহায্য পাইতে সর্বদাই সচেষ্ট থাকিতে হইবে। এই সংগ্রামে এখানকার জনগণের সুদৃঢ় ঐক্য ও বেলুচ-পাঠান প্রভৃতির সমর্থন যত বেশী গড়িয়া উঠিবে গণ-দুশমনের পরাজয়ও ততই নিশ্চিত হইবে। প্রকৃত মুক্তির লক্ষ্যে অবিচল থাকুন ঐক্যবদ্ধ গণশক্তি ও জনতার সংগ্রামের জোরে গণদুশমনদেরও উহাদের সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করিয়া এখানে জনগণের দাবী মতে ‘স্বাধীন গণতান্ত্রিক বাংলা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অগ্রসর করিয়া লইতে হইবে। কিন্তু স্বাধীন বাংলা যাহাতে সাম্রাজ্যবাদীদের ডলারের শৃংখলে বাঁধা না পড়ে, স্বাধীন বাংলার কৃষক সমাজের উপর যাহাতে জোতদার-মহাজনদের শোষণ ও নিপীড়নে ধুকিয়া ধুকিয়া মরিতে না হয়, সেজন্য ও সংগ্রামকে দৃঢ়ভাবে আগাইয়া লওয়ার জন্য কমিউনিষ্ট পার্টি শ্রমিক-কৃষক-ছাত্ৰ-মধ্যবিত্ত জনতাকে তাহদের সংগ্রাম আগাইয়া লওয়ার আহবান জানাইতেছে। কমিউনিষ্ট পার্টি বাংলাদেশে এমন একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামের আহবান জনগণের স্বার্থে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সমাধা করা ও সমাজতন্ত্রের পথে অগ্রসর হইবার বিপ্লবী পথ উন্মুক্ত হইতে পারে। বিভ্রান্ত হইবেন না কতকগুলি তথাকথিত “কমিউনিষ্ট পার্টি” জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য “ধর্মঘট অসহযোগ আন্দোলন প্রভৃতি প্রয়োজন নাই”, “গ্রামে গ্রামে কৃষি বিপ্লব শুরু কর”, “জোতদারদের গলা কাট” প্রভৃতি আওয়াজ তুলিতেছে। কোন কোন নেতা “স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠা হইয়া গিয়াছে’ বলিয়া ধ্বনি তুলিয়া আজিকার গণসংগ্রামের উদ্দীপনা, সংকল্প ও প্রস্ততিতে ভাটা আনিয়া দিতে চাহিতেছেন। মার্কিনী এজেন্টরা এই সংগ্রাম অনুপ্রবেশ করিয়া সংগ্রামকে বিপথগামী করার প্রচেষ্টা করিতে পারে। শাসকগোষ্ঠী ও প্রতিক্রিয়াশীলদের উস্কানিতে সমাজবিরোধী দুষ্কৃতকারীরা দাঙ্গা-হাঙ্গামা, লুটতরাজ প্রভৃতি বাধাইয়া সংগ্রামকে বিনষ্ট করিতে তৎপর হইতে পারে। এই সকল বিষয়ে হুশিয়ার ও সজাগ থাকার জন্য আমরা জনগণের প্রতি আহবান জানাইতেছি। দৃঢ়সংকল্প বজায় রাখুন বাংলাদেশের জনগণ আজ অভূতপূর্ব দৃঢ়তা ও একতার সাথে অফিস-আদালতে হরতাল, খাজনাট্যাক্স বন্ধ প্রভৃতির যে সংগ্রাম চালাইতেছেন, সে সংগ্রাম ইতিমধ্যেই ইতিহাসে এক নূতন নজীর স্থাপন করিয়াছে। সামরিক সরকারের হুমকি, দমন-নীতি, অভাব-অনটন প্রভৃতির মধ্যেও সে সংগ্রাম শিথিল বা দমিত হইবে না এবং শত্রর নিকট আমরা কখনও নতি স্বীকার করিব না- এই বজ্ৰদৃঢ় সংকল্প আজ বাংলার ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য করুন নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, সামরিক শাসন প্রত্যাহার প্রভৃতি যে দাবীগুলি আওয়ামী লীগ প্রধান উত্থাপন করিয়াছেন, সেগুলি আদায় করিতে পারিলে ‘স্বাধীন বাংলা কায়েমের সংগ্রামে অগ্রগতির সুবিধা হইবে-ইহা উপলব্দি করিয়া ঐ দাবীগুলির পিছনে কোটি কোটি জনগণকে সমবেত করা এবং ঐ দাবীগুলি পূরণে ইয়াহিয়া সরকারকে বাধ্য করা, ইহা হইল এই মুহুর্তে জরুরী কর্তব্য। সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করুন সহিত অসহযোগ প্রভৃতি শান্তিপূর্ণ পন্থায় বর্তমান পর্যায়ে জনগণের আকাঙ্খিত স্বতন্ত্র স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালাইতে হইবে।