পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

477 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড করি নাই, করেছেন ইয়াহিয়া খান সাহেব আর ভুট্টো সাহেব। আর এর জন্য দায়ী পশ্চিম পাকিস্তানের শোষকেরা, যারা ২৩ বছর পর্যন্ত বাংলার গরীব-চাষী মজুরের রক্ত শোষণ করে পাহাড় গড়ে তুলেছে। আওয়ামী লীগের মাননীয় সদস্যবৃন্দ, আমরা কি অপরাধ করেছি? আমাদের একমাত্র অপরাধ ২ বছর পর্যন্ত আমরা পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, বাংলার মানুষকে শোষণ করে, বাংলার চাষী-মজুরের রক্ত শোষণ করে কায়েমী স্বার্থবাদীরা আর পশ্চিম পাকিস্তানের পুঁজিবাদীরা যারা বাংলাকে আজ রিক্ত করেছে, শূন্য করেছে, তারাই পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে চায়। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সেই সমস্যার সমাধান করতে চাইলাম বলে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমাদের নেতা নির্বাচন পরবর্তীকালেও একটার পর একটা চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু যারা কায়েমী স্বাৰ্থবাদের দালাল, পশ্চিম পাকিস্তানের একচেটিয়া পুঁজিবাদের দালাল, পশ্চিম পাকিস্তানের সামন্ত প্ৰভুদের দালাল- আজ যারা পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক জান্তাদের ছত্ৰচ্ছায়ায় রাজনীতি করে শুধু বিলাস আর ভোগ করতে চায়, তারাই বঙ্গবন্ধুর গণতান্ত্রিক প্রচেষ্টায় বাধা হয়ে দাঁড়ালো। আওয়ামী লীগের আন্তরিকতাকে তারা দুর্বলতা মনে করে তাকে বানচাল করতে চেষ্টা করলো। ১লা মার্চের পর থেকে প্রতিটি ঘটনা যে কত দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয়েছিল সে আপনারা নিজের চোখে জন্য মুলতবী ঘোষণা করলেন, সেদিন পূর্বাণী হোটেলে আমরা সম্মেলনে আর একবারের মত বসেছিলাম। সেখানে বঙ্গবন্ধুকে সামনে রেখে আমি ব্যক্তিগতভাবে একটার পর একটা প্রতিজ্ঞাবাণী উচ্চারণ করেছিলাম। আর আপনারা সেই প্রতিজ্ঞা প্রতিধ্বনিত করে আবার বলেছিলেন বাংলার মানুষের কাছে- আপনারা বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। দেশবাসী জানে বিশ্বাসঘাতকতা আপনারা করেন নাই। জঙ্গীশাহীর অত্যাচার, ইয়াহিয়ার প্রলোভন কোন কিছুই আপনাদের টলাতে পারে নাই। ইতিহাস এই কাহিনী একদিন স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখবে বলে আমার নিশ্চিত বিশ্বাস। আপনারা নিজ নিজ এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিলেন- অসহযোগ আন্দোলনের বাণী নিয়ে বাংলাদেশের হাটে, মাঠে, ঘাটে, বাংলাদেশের সরকারী আদালতে। বাংলার দেশ-প্রেমিক ছাত্র-জনতার সাহায্যে আপনারা যে অভূতপূর্ব অসহযোগ আন্দোলন সৃষ্টি করেছিলেন, ইতিহাসে তার নজীর নেই। সেই অসহযোগ আন্দোলনের সময়ে যখন আমরা একটা থেকে একটা সঙ্কটের মুখে উত্তরণ লাভ করেছিলাম, তখন ইয়াহিয়া খান সাহেব ১৫ই মার্চ ঢাকায় আলোচনা করতে এসেছিলেন। ইয়াহিয়া খান সাহেবের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা শুরু হলো। ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি যদি বিন্দুমাত্র সত্য কথা বলেন, আজকে না হোক, কবরে গিয়েও যদি জবাব দেন- তাহলে অস্বীকার করতে পারবেন না যে, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রথম আলোচনাতেই আপনি স্বীকার করেছিলেন, জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবেন, মার্শাল ল’ উঠিয়ে নেবেন এবং ৬-দফার ভিত্তিতে একটা অন্তবর্তীকালীন শাসনতন্ত্র জারী করে ক্ষমতা আওয়ামী লীগের হাতে তুলে দেবেন। এর ভিত্তিতে আলোচনা হলো। বঙ্গবন্ধুর আদেশে এবং নির্দেশে আমি এবং প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন সাহেব, আলোচনা শুরু করলাম। জনাব ইয়াহিয়া খান সাহেবের পক্ষে ছিলেন লেঃ জেঃ পীরজাদা, প্রাক্তন বিচারপতি কর্নেলিয়াস, আর অর্থনীতিবিদ বাংলার মানুষের চিরশত্রু এম, এম, আহম্মদ। ২৪ শে মার্চ পর্যন্ত আলোচনা হলো। ডকুমেন্টও তৈরী হলো। জাষ্টিস কর্নেলিয়াস সাহেব উপস্থিত ছিলেন। উনি যদি একজন সৎ-খ্ৰীষ্টান হয়ে থাকেন তাহলে তাকে এ কথা স্বীকার করতে হবে। বন্ধুরা আমার, আপনারা বলতে পারেন, নিরস্ত্র মানুষকে কেন তারা গুলি করে মারলো? কেন পরিষদ সদস্যদের বাড়িঘরে কামান চালানো হলো? সেই ২৫শে মার্চের রাতের আধারে এই বীভৎস ঘটনার প্রতিবাদে আপনারা রুখে দাঁড়ালেন। বাংলার নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা মফঃস্বল শহরে, জেলা শহরে, গ্রামে, বন্দরে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য রুখে