পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

487 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের জয় বাংলা ১৬ জুলাই, ১৯৭১ যৌথ সভার উপর লিখিত আওয়ামী যুক্ত বৈঠকের ঐতিহাসিক গুরুত্ব চলতি মাসের ৫ই ও ৬ই তারিখে মুজিবনগরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের যে অধিবেশন হয়ে গেল- তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ইতিমধ্যেই আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতিভাত হতে শুরু করেছে। শুধু জাতীয় জীবনে নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এই বৈঠকে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ও তার গণপ্রতিনিধিত্বমূলক চরিত্রের একটা যথার্থ প্রেক্ষিত তুলে ধরবে তাতে সন্দেহ নেই। এতে রণাঙ্গনে সংগ্রামরত আমাদের বীর মুক্তিবাহিনী ও গেরিলা যোদ্ধাদের মনোবল ও আক্রমণ ক্ষমতা যেমন আরো বাড়বে, তেমনি বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে যেসব বন্ধুরাষ্ট্র অকৃপণভাবে সমর্থন জোগাচ্ছেন, তাদের এই সমর্থনের নৈতিক ভিত্তি আরো দৃঢ় হবে। কারণ, রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধারা যেমন জানেন তাদের সংসদীয় প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে সকল স্তরের মানুষের ঐক্য অটুট ও অনড় রয়েছে। ভুলভ্রান্তি মানুষ মাত্রেই হয়। বাংলাদেশের মানুষের উপর আকস্মিকভাবে চাপিয়ে দেয়া এই যুদ্ধে প্রাথমিক প্রস্তুতির ক্ষেত্রেও ক্ষেত্রবিশেষে ভুলভ্রান্তি ঘটতে পারে। বিপ্লবের ইতিহাসে স্বাধীনতার যুদ্ধে প্রাথমিক প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এই ধরনের মানবিক ভুলভ্রান্তি- সব দেশে সব যুগেই ঘটতে দেখা গেছে। এই ভুলভ্রান্তি বড় কথা নয়। বড় কথা অটুট গণঐক্য, জাতীয় ঐক্য এবং শত্রর উপর আঘাত হানার ক্রমবর্ধমান মনোবল। গত তিনমাসে বাংলাদেশের মানুষ প্রমাণ করেছে, তারা নিরস্ত্র এবং অপ্রস্ত্তত থাকা সত্ত্বেও আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পাঁচ ডিভিশনের এক বিশাল ও বর্বর দসু্য বাহিনীর বিমান, ট্যাঙ্ক ও গানবোটের ত্রিমুখী আক্রমণতারা সাফল্যের সঙ্গে প্রতিরোধ করে চলেছে। তাদের বড় অস্ত্র অটুট মনোবল ও দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ঐক্য। বাংলাদেশের একজন মানুষ, তিনি বুদ্ধিজীবি, চাকররিজীবি, ব্যবসায়ী, কিম্বা গণপ্রতিনিধি হোন, অথবা ক্ষেতের চাষী ও কারখানার মজুর হোন, নিদেন দিনমজুর হোন, আজ একটিমাত্র লক্ষ্যে তারা সকলেই উদ্দীপিত ও অবিচল, তা হল বাংলাদেশের মুক্তি ও স্বাধীনতা। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকের পটার্নে ইয়াহিয়ার জঙ্গীচক্র বাংলাদেশে যে ঘৃণ্য ঔপনিবেশিক শাসন কায়েম করতে চায়, তার শৃঙ্খল ভেঙ্গে মুক্তির উদয়াচরে- নতুন মুক্তিসূর্যের প্রত্যাশায় ভোরের অরুণিমার মত তাজা বুকের লহু ঢালছে দেশের বীর মুক্তিবাহিনী। এই রক্তদান বৃথা যেতে পারে না। মুজিবনগরের বৈঠকে সম্মিলিত হয়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় সদস্য ও নেতারা সমস্বরে এ কথাই ঘোষণা করেছেন, বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন। এই ঐতিহাসিক বৈঠকে আরো স্পষ্ট করে তুলল, এই মুক্তিযুদ্ধে জনগণের ও জনপ্রতিনিধিদের ঐক্য কত অকৃত্রিম নিবিড়। ফ্যাসিস্ট আইয়ুবের রাজনৈতিক জারজপুত্র জুয়াড়ি ইয়াহিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন জুয়ার চাল চালতে চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্ববাসীকে বোঝাতে চেয়েছিলেন যে, আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে তিনি নিষিদ্ধ করেছেন বটে, তবে আওয়ামী লীগের পরিষদ সদস্যদের সদস্যপদ তিনি নষ্ট করেননি, এমন কি গত ডিসেম্বরের মাসের নির্বাচনকেও তিনি বানচাল করতে চান না। সাধু সাধু! এ না হলে নির্ভেজাল গণতন্ত্রী আর কাকে বলে! দুনিয়া দেখুক, ইয়াহিয়া চক্র গণতন্ত্রের কত বড় পূজারী। তিনি জনগণের দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন, কিন্তু দলের সদস্যদের হাতছাড়া করতে চান না। তিনি নির্বাচন বানচাল করতে চান না, চান নির্বাচনে জনগণের রায় বানচাল করে দিতে। তারপর যারা তার হাতে বয়েৎ হবে তাদের দিয়ে একটা পুতুল সরকার গঠন করে নিজেদের ইচ্ছামত এমন একটা শাসনতন্ত্র তৈরী করা, যে শাসনতন্ত্র জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারা রচিত এই মর্মে অপপ্রচার চালিয়ে বিশ্ববাসীর চোখে ধুলা দেয়া যাবে এবং অন্যদিকে যে শাসনতন্ত্রে নানা