পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্থ খণ্ড).pdf/৫৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

541 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থ খন্ড গত এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সরকার গঠনের পর হইতেই আমরা ইহাকে সমর্থন করিয়া আসিয়াছি এবং আমরা এই সরকারকে সমর্থন করি। তবে আমরা মনে করি যে, বর্তমানে দেশের সামনে যে সকল সমস্যা দেখা দিয়াছে, তাহা যথাযথভাবে সমাধান করার জন্য এই সরকারের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল সংগ্রামী শক্তিগুলোর প্রতিনিধিত্ব প্রয়োজন। ইহা দেশবাসীর মনে বিপুল অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ সৃষ্টি করিবে এবং দেশ গঠনের কাজে প্রতিটি মানুষকে সক্রিয় করে তুলিবে। দেশ পরিপূর্ণভাবে স্বাধীনতা অর্জনের পরে দেশে একটি গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র রচনার প্রশ্ন দেখা দিবে। এ জন্য অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্কদের সর্বজনীন ভোটে একটি শাসনতান্ত্রিক পরিষদ গঠন করিতে হইবে। এই শাসনতান্ত্রিক পরিষদ কর্তৃক শাসনতন্ত্র রচিত হওয়ার পূর্বে গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশের একটি অন্তবর্তীকালীন সে জন্য সকল সংগ্রামী শক্তিগুলোর প্রতিনিধিদের সমবায়ে একটি সাময়িক শাসনতন্ত্র পরিষদ গঠন করা প্রয়োজন। ঐক্যবদ্ধ জাতীয় ফ্রন্ট গঠন, উহার একটি সাধারণ কার্যক্রম গ্রহণ, সম্প্রসারিত অস্থায়ী জাতীয় সরকার গঠন এবং অন্তবর্তী শাসনতন্ত্র প্রণয়ন প্রভৃতি বিষয়ে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার, আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ-আলোচনা চালাইতে হইবে এবং দেশবাসীর মধ্যেও উহার সপক্ষে জনমত গড়িয়া তুলিতে হইবে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বিকাশের স্তরে তথা দেশের মধ্যে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও একচেটিয়া পুঁজিবিরোধী একটি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা গঠন করার ক্ষেত্রে বুর্জোয়া-পেটি বুর্জোয়ার দল আওয়ামী লীগকে আমরা সাধারণভাবে মিত্র বলিয়া গণ্য করি। বর্তমান অবস্থায় দেশবাসীর স্বার্থের অনুকুলে ও দেশ পুনর্গঠনের কাজে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সহযোগিতা করিয়া চলাই আমাদের সাধারণ নীতি। এই সহযোগিতার ভিতরেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের মতবিরোধ দেখা দিতে পারে। সেসব ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ সরকারের কাজের সমালোচনা প্রভৃতি মিত্রসুলভভাবেই পরিচালনা করিতে হইবে। কমরেডগণ, মাতৃভূমির যে স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের জনগণ গত আট মাস যাবৎ বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম করিয়া আসিতেছেন, সেই স্বাধীনতা আজ আমাদের দ্বারে আসিয়া উপনীত হইয়াছে। এক দশক আগে আমাদের পার্টি বাঙ্গালী জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের যে দাবী ঘোষণা করিয়াছিল আজ সেই দাবী বাস্তবায়িত হইতে চলিয়াছে। ঘৃণ্য দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ও বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদীদের আশীবাদে রচিত কৃত্রিম এবং সাম্প্রদায়িক-প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্র পাকিস্তান আমাদের মুক্তিযুদ্ধের দুর্বার আঘাতে আজ ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে। পাকিস্তান রাষ্ট্রের অভিশাপ হইতে বাঙ্গালী জাতির মুক্তি আজ আসন্ন। দুনিয়ার বুকে জন্ম নিয়াছে এক নবীন গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র-বাংলাদেশ। আমরা বিশ্বাস করি, পশ্চিম পাকিস্তানের নিপীড়িত জাতিসমূহও শীঘ্রই তাদের ন্যায্য জাতীয় ও গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য রুখিয়া দাঁড়াইবেন এবং তাহাদের ন্যায্য অধিকারগুলো প্রতিষ্ঠা করিবেন। তাঁহাদের এই ন্যায্য সংগ্রামে আমাদের পার্টি সবসময় সাহায্য করিয়াছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। বাঙ্গালী আওয়ামী লীগ জাতির জীবনে আজ এক নূতন দিনের সূচনা হইতেছে। আসুন আমরা সবাই মিলিয়া শপথ গ্রহণ করি যে বাংলাদেশের শ্রমিক, কৃষক ও মেহনতি জনগণকে অতীতের সমস্ত বঞ্চনা, শোষণ ও অত্যাচার হইতে মুক্ত করিব এবং স্বাধীন, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক এক সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠন করিয়া সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে আগাইয়া যাইব৷ কেন্দ্রীয় কমিটি, ৩রা ডিসেম্বর,১৯৭১ বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পাটি।