পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

840 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩৪৫ পাকিস্তানকে অস্ত্র দেওয়া না যুগান্তর ৩ জুলাই, ১৯৭১ দেওয়া সম্পাদকীয় খোদ আসামী নিক্সন আমেরিকা আরও অস্ত্র পাঠাচ্ছে পাকিস্তানে। এগুলো ব্যবহৃত হবে বাংলাদেশের মারণযজ্ঞে। বিবেক বলে কোন পদার্থ নেই মার্কিন কর্তাদের। মিথ্যার প্রলেপ দিয়ে ঢাকতে চেয়েছিলেন তাঁরা নিজেদের অপরাধ গত কদিন ধরে প্রচার চলছিল, যত নষ্টের গোড়া আমলাতন্ত্র। ওরাই অনাসৃষ্টির জন্য দায়ী। মার্কিন নীতি পাকিস্থানে । এই ছেদো প্ৰলাপ একেবারে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। আসল রহস্য বেরিয়ে পড়েছে। খোদ আসামী আমলাতন্ত্র নন, প্রেসিডেন্ট নিক্সন নিজে। তিনিই খারিজ করেছেন আমলাতন্ত্রের পরামর্শ। ব্যক্তিগত দায়ত্বে অস্ত্র জোগাচ্ছেন ইয়হিয়া খানকে। অজুহাত পুরানো, পাকিস্তানকে অস্ত্র না দিলে দেশটা চলে যাবে চীনের খপ্পরে। চীনের খপ্পর থেকে পাক-জঙ্গীশাহীকে বাঁচাবার জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সন ডেকে আনছেন বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সর্বনাশ। হাটে হাড়ি ভেঙেছেন শ্রী জয়প্রকাশ নারায়ণ। ওয়াশিংটনে তিনি দেখা করেছিলেন মার্কিন কর্তাদের সঙ্গে। তাঁরা বলেছিলেন, বাংলাদেশের সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ইসলামাবাদে একটা বোঝাপড়া দরকার। কাজের বেলায় দেখা যাচ্ছে অন্যরকম । বোঝাপড়ার বদলে বাংলাদেশকে সাবাড় করার মদত দিচ্ছে আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট আইনেস হাওয়ারের আমলে নিক্সন ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। তিনি তখন রিপোর্ট দিয়েছিলেন, জোটনিরপেক্ষ ভারতকে বিশ্বাস নেই। পাকিস্তানই সত্যিকারের বন্ধু। তাকেই দেওয়া উচিত, বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সাহায্য। তারপর দুনিয়া চেহারা অনেক বদলিয়েছে। পদে পদে ধরা পড়েছে মার্কিন মূল্যায়নের ভূল ভ্রান্তি। প্রেসিডেন্ট নিক্সন শিখেন নি কিছু। সাবেকী মন দিয়ে তিনি ধরে আছেন মার্কিন প্রশাসন তরীর হাল। নয়াদিল্লী রাগে ফেটে পড়ছেন। ভারতীয় জনমত উত্তাল। কিসিঞ্জারের স্বস্তিবচনে জনতার উষ্মা বাড়ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বরণ সিং দিশাহারা। বড় আশা নিয়ে তিনি গিয়েছিলেন আমেরিকায়। অগাধ বিশ্বাস ছিল তাঁর মার্কিন রাষ্ট্রনায়কদের উপর। শেষ পর্যন্ত তাঁর কপালে জুটল বিশ্বাসঘাতকতা। যা বলছিল তা করল না আমেরিকা। ভারতে আগত শরণার্থীদের জন্য ওয়াশিংটন দেবেন টাকা । আর ইয়াহিয়া শরণার্থী তৈরির যন্ত্রে তাঁরা ঢালবেন অঢেল তেল। এই মার্কিন দ্বৈতনীতি বর্তমান দুনিয়ার নিদারুণ অভিশাপ। ইসলামাবাদে নরপশুদের অকৃত্রিম দোস্ত প্রেসিডেন্ট নিক্সনই নাকি স্বাধীন বিশ্বের জিম্মাদার এবং গনতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। দক্ষিণ ভিয়েতনামের জন্য তিনি চান স্বায়ত্ত্বশাসন এবং বাঁচার অধিকার। আর বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁর বিধানইসলামাবাদের জঙ্গীশাহীর ক্রীতদাসতু কিম্বা এবং সর্বাত্মক সংহার। প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি গান্ধী হৈচৈ করে বেড়াচ্ছেন। মাঝে মাঝে ওয়াশিংটনের উপর কড়া বাক্যবাণ ঝাড়ছেন। তাতে লাভ নেই কিছু পাকিস্তানের সঙ্গে মার্কিন কর্তাদের গোপন আঁতাত দীর্ঘদিনের। ওঁরা কিছুতেই ছাড়বেন না আশ্রিত খুণীদের। এমন আশ্রিত বাৎসল্যের কাছে বিবেকের বিলাস প্রত্যাশা অর্থহীন। এখন কি করবেন নয়াদিল্লী? ইয়াহিয়া উপর ছাড়বেন না সত্যিকারের কোন আন্তর্জাতিক চাপ। বেঁকে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। মার্কিন জনমত তাকে সিধে করতে পারবে কিনা সন্দেহ সোভিয়েত রাশিয়ার অবস্থা ধরি মাছ না ছুই পানি । অন্য যাঁরা চেচামেচি করছেন তাদের প্রভাব সীমিত । আরব দুনিয়ার ধর্মবোধ বড় বেশি জাগ্রত। তাদের দৃষ্টিতে ইয়াহিয়া ঐশ্নামিক ঐক্যের ধ্বজাধারী। বাংলাদেশের হিন্দুরা কাফের এবং মুসলমানরা ধর্মচু্যত পাইকারী হারে তাদের নিধন কিম্বা বিতাড়নে কোন দোষ নেই। ইয়াহিয়া যদি মুসলমান না হয়ে ইহুদী, খৃষ্টান কিম্বা হিন্দু হতেন তবে হয়ত আরব নেতাদের টনক নড়ত। আগুনে তাতান বালুর উপর ধান দিলে এগুলো