পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৮৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

849 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩৫১। বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ যুগান্তর ৯ জুলাই, ১৯৭১ বাংলাদেশের হৃদয় হতে রবীন্দ্র-সদনের মঞ্চে পাশাপাশি দুই কণ্ঠশিল্পী- মাহমুদুর রহমান, শাহীন আখতার। দু’জনেই বাংলাদেশ থেকে সদ্য আগত; সদ্য বিবাহিত। গাইছেন অতুল প্রসাদের একটি রাগপ্রধান গান-‘এসো হে সজল শ্যাম ঘন দোয়া। ছোট ছোট ক্ষিপ্রতান ও সরগম-সহ অনবদ্য সুরেলা, দরাজ গলায়। বাইরে তখন অবিশ্রান্ত ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। বাংলাদেশ সহায়ক শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী সমিতি আয়োজিত অনুষ্ঠানের (৩ ও ৪ জুলাই) বিবরণ দিতে গিয়ে প্রথমেই মনে এল ওই দৃশ্যটি যা আমাদের স্মৃতিতে পাকা রঙের ছবি হয়ে গয়েছে। সেদিন ওদের গান শুনতে শুনতে সমিতির অন্যতম । সম্পাদক শ্রী দীপেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় বর্ণিত বাংলাদেশের তরুণ প্রাণের প্রতীক নবদম্পতিকে সনাক্ত করে নিতেও আমাদের ভুল হয়নি। আমরা জেনে গিয়েছি : এই সেই প্রণয়ীযুগল, মুক্তিযুদ্ধ যাদের বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিল। আবার যুদ্ধের আগুনের মধ্যেই অকুতোভয়, যারা মিলিত; পরিণীত। আজ ঘটনার আবর্তে দু’জনেই কলকাতায়। একজন পুনর্বার রণাঙ্গনে যাবার জন্য প্রস্তুত। তিনি সেখানে গেলে অপরজন কি করবেন? শ্রী বন্দোপাধ্যায়ের ভাষায়, ‘গান গাইবেন,এবং গান গাইবেন, এবং গান গাইবেন। - স্বামীর মঙ্গল-আকাঙ্খায়, দেশের মুক্তির কামনায়। সমিতির দুই দিনব্যাপী ওই অনুষ্ঠানের দু’টি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। এক, বাংলাদেশের নানা শহর থেকে যেসব গায়ক-গায়িকা, যন্ত্রশিল্পী কলকাতায় এসেছেন অথবা আসতে বাধ্য হয়েছেন, সমিতির উদ্যোগে যাঁরা পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন, তাঁদের একটি শিল্পীদল হিসাবে কলকাতার দর্শক-শ্রোতাদের সামনে উপস্থিত করা। দুই, ওই বাংলার শিল্পীদের সঙ্গে এই বাংলার শিল্পীদের অন্তরঙ্গ, ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সূচনা করা। অনুষ্ঠানসূচী সেইভাবে গঠিত। দুই আসরের সভানেত্রী রুপে আমরা পেলাম শ্রীমতি সুচিত্রা মিত্রকে। দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথির আসনে ছিলেন বাংলাদেশের কূটনৈতিক দূতাবাসের শ্ৰী হোসেন আলী। ভিন্নধর্মী এই অনুষ্ঠানে সভানেত্রী শ্রীমতি মিত্র বক্তৃতা দিতে চাননি, দেননি। তিনি আসরে প্রাণ সঞ্চারিত করে দিলেন গান গেয়ে- রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা, বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত শুভারম্ভ। প্রথম দিন অর্থাৎ শনিবারের অধিবেশনটি প্রধানত বাংলাদেশের শিল্পীদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। একে একে তাঁরা আত্মপ্রকাশ করলেন। প্রথমে শ্রীমতি সানজিদা খাতুন। তাঁর আনন্দধ্বনি জাগাও গগনে রবীন্দ্র সংগীতে হামবীর রাগের আকুতি-একটি প্রার্থনার দ্যোতনা। সম্মেলক কষ্ঠে (প্রবাল চৌধুরী, তপন বৈদ্য, আবু নওসেদ, অনিল বড়ুয়া) আনন্দেরই বার্তা ঘোষিত হল: ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি এই অপরূপ রুপে বাহির হলে জননী। ক্রমে ফ্লোরা আহম্মদ শোনালেন, ‘না গো এই যে ধুলা আমার না এ’ (রবীন্দ্র সংগীত); ডালিয়া নীেশিন ঝরা ফুলদলে (নজরুল); কল্যাণী ঘোষগানে গানে ঢাকা আমার গভীর অভিমান’ (নজরুল); রফিকুল আলম তুমি গাও ওগো গাও মম জীবনে (অতুলপ্রসাদ); মাহমুদুর রহমান, শাহীন এসো হে সজল শ্যামঘন’ (অতুলপ্রসাদ)। শেষোক্ত দ্বৈত-সঙ্গীতটি অপূর্ব, যার উল্লেখ আগেই করেছি। লোকসংগীতের আসরে গান গাইলেন মন্মথ বিশ্বাস, মাধবী আচার্য, রথীন রায়। শ্রী রায়ের ভাওয়াইয়া গান দুটি এক কথায় অসাধারণ। কলকাতায় এমন লোকগীতি শোনবার অবকাশ বহুকাল আমদের হয়নি। দোতারা (মন্মথ বিশ্বাস) আর বাঁশির (স্বপন দাস) দ্বৈত-যন্ত্রসংগীতের অনুষ্ঠানটিও আকর্ষক। প্রথম দিনের শেষ অনুষ্ঠান; রূপান্তরের গান। ১৯৪৭ সন থেকে দেশপ্রেমের যে গানগুলি পূর্ব পাকিস্তানকে ধীরে ধীরে এই’৭১ সনে বাংলাদেশে পরিণত করল, সেই সব উদ্দীপক গানেরই একটি অলেখ্য ওই অনুষ্ঠানে