পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৯৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

905 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড শিরোনাম সূত্র তারিখ ৩৭৯ স্বীকৃতির দাবীতে চাই ঐক্যবদ্ধ ংলাদেশ ১৫ অক্টোবর, ১৯৭১ আন্দোলন (সম্পাদকীয়) (সম্পাদকীয়) স্বীকৃতির দাবীতে চাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ংলাদেশের স্বীকৃতির পরিবর্তে শাসক কংগ্রেসের নেতারা তথাকথিত রাজনৈতিক সমাধানের দিকে ঝুঁকিতেছেন, এ সংবাদ আমরাই বাংলাদেশে প্রথম প্রকাশ করিয়াছিলাম। কিন্তু এক্ষণে সিমলায় নব কংগ্রেসের সদ্য অনুষ্ঠিত অধিবেশনে বর্হিবিষয়কমন্ত্ৰী শ্রী শরণ সিং যে বিবৃতি দিয়াছেন তাকে এককথায় বলা যায় ংলাদেশের মুক্তি-সংগ্রামের প্রতি বেঈমানী। আজকের পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যেই বাংলাদেশ সমস্যার মীমাংসার কথা উচ্চারণ করাটাই অন্যায় এবং পাপ। যে পাকিস্তান বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের বিরুদ্ধে ইতিহাসের জঘণ্যতম গণহত্যার অভিযান শুরু করিয়াছে এবং এক্ষণে যে পাকিস্তানী শাসকচক্র সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ ও সীমান্ত আক্রমণের প্ররোচনার দ্বারা ভারতের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের হুংকার দিতেছে, সেই বর্বর পাকিস্তানের হিংস্র নেকড়েদের হাতে বাংলাদেশের ভাগ্যকে সঁপিয়া দেওয়ার কথা আজ চিন্তাও করা যায় না। তাই আজ ইয়াহিয়ার ফ্যাসিষ্ট শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে ংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামকে সব রকমের সাহায্য এবং সহযোগিতার দ্বারা সফল করিয়া তোলাই প্রতিটি ভারতবাসীর একমাত্র পবিত্র কর্তব্য। বাংলাদেশের মুক্তি-সংগ্রামে ভারতীয় জনগণের এই ইচ্ছা এবং আকাঙ্খাকে ভারত সরকার বাস্তবক্ষেত্রে কার্যকরী রূপদান করিবেন, এইটাই সকলে প্রত্যাশা করে। তাছাড়া লোকসভা থেকে শুরু করিয়া পশ্চিমবঙ্গের ভেঙ্গে দেওয়া বিধানসভাতেও বাংলাদেশের সংগ্রামের প্রতি সর্বাত্মক সাহায্যদানের জন্য দলমত নির্বিশেষে যে কনসেনসাস বা ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে, ভারত সরকার এখনও জনমতের সেই ঐতিহাসিক অভিব্যক্তিকে কেন এবং কার স্বার্থে রূপায়িত করিতেছেন না, চারিদিকে আজ এই প্রশ্নই আলোচিত এবং আলোড়িত হইতেছে। দেখিয়া শুনিয়া অনেকের মনে হইবে, ভারত সরকার যেন তার আগের অবস্থান থেকে অনেকটা পিছাইয়া আসিয়াছে এবং বাংলাদেশ সমস্যা মানেই হইতেছে উদ্বাস্ত্ত সমস্যা এবং এই উদ্বাস্ত্তর বোঝা ভারতবর্ষের ঘাড় থেকে নামিয়া গেলেই নাকি সব ল্যাঠা চুকিয়া যাইবে, প্রধানমন্ত্রী তো এমন কথা খোলাখুলিই বলিতেছেন। অবশ্য এ ব্যাপারে বৃহৎ শক্তিগুলির মনোভাবও অত্যন্ত সুবিধাবাদী এবং তাঁরা প্রায় প্রত্যেকেই যে যার নিজের স্বার্থকেই বড় করিয়া দেখিতেছেন। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের গণতান্ত্রিক এবং মানবিক অধিকারের প্রশ্নটা তাঁদের কাছে গৌণ। তাছাড়া যেসব দেশ বাংলাদেশের মুক্তি-সংগ্রামকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখিতেছেন তাঁরাও অনেকেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতবর্ষ কি করে তাই লক্ষ্য করিতেছেন। কারণ ভারত যেখানে এই ব্যাপারে প্রত্যক্ষ শিকার, অর্থাৎ যখন ভারতে প্রায় এক কোটি উদ্বাস্তত্তর বোঝা আসিয়া পড়িয়াছে তখন ভারতই সর্বপ্রথম বাংলাদেশের সংগ্রামকে স্বীকৃতি দিবে ইহাই তো স্বাভাবিক। তাই ভারতকে স্বীকৃতি দিতে ইতস্তত করিতে দেখিয়া অন্যান্য সহানুভূতিশীল দেশগুলিও একটু থমকাইয়া দাঁড়াইয়াছেন এবং হয়ত ভাবিতেছেন, তা হইলে ব্যাপারটা কি? ভারত নিজেই গড়িমসি করিতেছেন কেন? স্বয়ং শ্রী শরণ সিং সর্বশেষ যে বতৃতা দিয়াছেন এবং নব কংগ্রেস নেতারা ক্রমেই বাংলাদেশ প্রশ্নে যেভাবে ডিগবাজী খাইতেছেন, তাতে আমাদেরও সন্দেহ হইতেছে যে, শেষ পর্যন্ত ভারত সরকারের ভূমিকা এ-ব্যাপারে হয়ত চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতায় পর্যবসিত হইবে। বিশেষ পূর্ব বাংলায় মুক্তি সংগ্রাম যখন আগের চেয়েও আরও অনেক দানা বাঁধিয়া উঠিতেছে, তখন ভারত সরকারের স্বীকৃতিদানে ক্রমেই পশ্চাদপসরণ মুক্তি-যোদ্ধাদের মনোবলকে দুর্বল করিয়া দিতে উদ্যত হইয়াছে।