পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (চতুর্দশ খণ্ড).pdf/৯৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

939 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ চতুর্দশ খন্ড পূর্বাঞ্চল কম্যান্ডের চীফ অব ষ্টাফ মেজর জেনালে জে এফ আর জ্যাকব এদিক সকাল এগারটায় এক সাংবাদিক বৈঠকে ঘোষণা করেনঃ একদিকে যশোর শহরের থেকে প্রায় চার মাইল দূরে প্রচন্ড লড়াই চলেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অগ্রগতি বিশ্লেষণ করতে গিয়ে মেজর জেনারেল জানানঃ ভৌগোলিক দিক থেকে এবং মাটি ও নদী নালার জন্য আমাদের স্থলবাহিনী বাংলাদেশের ভেতরে অগ্রসর হতে অসুবিধে অবশ্যই দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত খারাপ। সামরিক বাহিনীর জনৈক মুখপাত্র আরো বলেনঃ প্রথম সেক্টরে অর্থাৎ গঙ্গা পদ্মা ও সমুদ্রের ধারা ঘেরা এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনী আপাততঃ এগিয়ে গিয়ে যশোর শহরের সীমান্তে পৌছে গেছে। প্রায় তিন মাইল দূরে প্রচন্ড লড়াই চলেছে। দর্শনা, জীবননগর দখল করেছে। আর সেনাবাহিনী চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের ওপর প্রবল চাপ দিয়ে চলেছে। তাছাড়া মুখপাত্র বলেন, ব্ৰহ্মপুত্রের কাছে উত্তর সেক্টারে পার্বত্য অঞ্চলে প্রবল লড়াই চলেছে। নবাবগঞ্জের সামনে যুদ্ধ হচ্ছে। বোদা, ঠাকুরগাঁও দখল করে ভারতীয় জোয়ানরা আরো নীচের দিকে নেমে চলেছে। কালিগঞ্জের দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অগ্রগতির উল্লেখ করে মুখপাত্র জানান, কালিগঞ্জ, কমলপুর আত্মসমর্পণ করেছে। বকসিগঞ্জ শহরও দখল হয়েছে। কানারিঘাটের দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনী দুর্বারগতিতে এগিয়ে চলেছে। শামসের নগর বিমান ঘাঁটি সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত। মৌলভীবাজার দখলে এসেছে। পাক বাহিনীর ১২ নম্বর ফ্রনটিয়ার ফোর্স রেজিমেন্ট সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। লাকসাম দখলের পর তারা মুকাদ্দরগঞ্জের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মেজর জেনারেল জানিয়েছেনঃ বেলোনিয়া পকেট সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় সেনার হাতে এসে গেছে। বিদেশী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মেজর জেনারেল বলেন, পাক সৈন্যদের হতাহতের তুলনায় ভারতীয়দের কমসংখ্যক সৈন্য আহত বা নিহত হয়েছে। তবে পাকিস্তানী সেনারা প্রবলভাবে লড়ছে। তিনি আরো বলেন এখন পর্যন্ত ৩১৭ জন পাক সৈন্য নিহত হয়েছে। ১৯৯ জন আহত এবং ৪২৬ জনকে আজ পর্যন্ত আটক করা হয়েছে। একজন মুখপাত্র একথাও বলেন, কিন্টনের সাতটি লরী ভর্তি পাক সেনা ধৃত হয়েছে। পাক সেনাবাহিনী সবচেয়ে যে কয়টি জায়গায় ভারতীয় সেনাকে বাধা দিয়েছিলি ও দিচ্ছে, তার মধ্যে আখাউড়া, লাকসাম যশোর আছে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র বলেন, ধৃত পাক সেনাদের সঙ্গে জেনেভা চুক্তি অনুযায়ী সৌজন্যমূলক ব্যবহার করা হচ্ছে। শত্রম্নসেনাদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। তারা যদি আত্মসমর্পণ করে, তবে রক্তক্ষয় কম হবে। তিনি আরো জানান, ধৃত পাক সেনারা বলেছে, তাদের কাছে সর্বশেষ যে বার্তা এসেছে, তাতে বলা হয়েছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীকে আটকে রাখ। আমরা সাহায্য পাঠাচ্ছি। ইতিমধ্যে পশ্চিমাঞ্চলে আমরা অমৃতশহর, শ্রীনগর দখল করে নিয়েছি। তিনি একথাও বলেন, এসব মিথ্যা বলা হচ্ছে। পাক সেনাদের মধ্যে নিহতের সখ্যা তিন-চার শয়ের মত হবে। পাকিস্তানের পনেরোটি স্যাবার জেট এই ভূখন্ডে ভূপাতিত করা সম্ভব হয়েছে। তাদের ২২টি মার্কিনী ট্যাংক বিধ্বস্ত হয়েছে। তারা বিভিন্ন স্থানে পোড়া মাটি নীতি অনুসরণ করে চলেছে। মেজর জেনারেল বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী তীব্রবেগে এগিয়ে চলেছে। আমাদের নৌবাহিনী সমুদ্রপথে বাঁধা দিচ্ছে এবং আমাদের বিমান বাংলাদেশের আকাশের ওপর প্রভূত্ব করছে। ইষ্টাৰ্ণ কম্যানন্ডের মুখপাত্র বলেন যে, কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার কাজিপুর পাক সৈন্য মুক্ত হয়েছে। ঝিনাইদহে পাক সেনাবাহিনীর সদর দপ্তরের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় ভারতীয় সৈন্যরা গুরুত্বপূর্ণ খালিসপুর সেতুটি দখল করেছে। মুখপাত্রটি বলেন, হাতিবান্ধা থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় সৈন্যরা রংপুর জেলার উত্তরে লালমনিরহাটের দিকে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।