পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (তৃতীয় খণ্ড).pdf/৩৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

326 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র পাকিস্তানে গণতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে স্বৈরতন্ত্র ও সামরিক শাসন চালু করেছে, যারা কাসীম ভাট্রির মত আফগান সীমান্তে চোরাকারবার ও চোরাচালানের খোলাবাজার চালু রেখেছে, যারা ইরান-তুরস্কের মাধ্যমে ইহুদীদের সাথে গোপন সংযোগ রেখেছে, বাংলাদেশের বরেণ্য নেতৃবৃন্দ ও বাংলার গণপ্রতিনিধিবৃন্দকে দেশদ্রোহী বলে অভিযুক্ত করছে। কায়েমী স্বার্থবাদী মহল ও তাদের পদসেবীগন, যারা জাতির স্বার্থের চাইতে, নিজেদের স্বার্থের উপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে আসছে, যারা তাদের স্বার্থে কোটি কোটি লোককে অভুক্ত রেখে, অনটনে রেখে, বেকার রেখে, বন্যা ও জলোচ্ছাসে বাঙালীর জানমাল ধ্বংস হয়ে যেতে ষড়যন্ত্র করেছে আকাশচুম্বী বৈষম্যের সৃষ্টি করে মানুষের মনকে বিষাক্ত করে দিয়েছে; যারা ষড়যন্ত্র করে, সামরিক শক্তির প্রয়োগ এবং নির্বিচার গনহত্যার ও পোড়ামাটি নীতির অনুসরণে বাঙালী, বেলুচী ও পাঠানদের মনকে তিক্ত করে দিয়েছে এবং যার ফলে নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালী, বেলুচী ও পাঠান আজ পশ্চিম পাঞ্জাবীদের সাথে একাত্ম হতে পারছে না, যার অপরিহার্য ফল হিসাবে পাকিস্তান আজ খান খান হয়ে গিয়েছে, সেই কুটচক্রীকায়েমী স্বার্থবাদী পশ্চিম পাঞ্জাবী গোষ্ঠী বেঁচে থাকার দাবীকে মুখর বাংলার মানুষকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে প্রচার করছে। অদৃষ্টের নির্মম পরিহাস! মুসলমান মুসলমানের উপর নির্যাতন করতে পারবে না, হত্যা করতে পারবে না, অমুসলমানদের জানমালের পূর্ণ নিরাপত্তা মুসলমানকে দিতে হবে , অহেতুক অশান্তি সৃষ্টি করতে পারবে না-ইসলামের এই সুস্পষ্ট নির্দেশ লংঘন করে যারা স্রেফ নিজের প্রভুত্ব, শোষণ ও শাসণ অক্ষুণ্ণ রাখার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করছে, তাদের ধন-সম্পত্তি লুট করছে, তাদের বাড়ী ঘর যাদের ভাড়াটিয়া সৈন্য নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করছে আর বাংলার মুসলমান নারীদের উলঙ্গ করে মাবাপের সামনে পর পর পাশবিক অত্যাচার চালিয়ে শেষে গুলি করে মারছে, নিস্পাপ শিশু-কন্যাদের, যাদের সঙ্গে রাজনীতি বা দুনিয়ার কোন সম্পর্ক এখনো গড়ে ওঠেনি তাদের খুন করছে, মুসলমান বাঙ্গালীকে গ্রেপ্তার করে তাদের দিয়ে গর্ত খুঁড়ে গুলী করে মারার পর তাদেরই সেই গর্তে ফেলে দিচ্ছে, নিরপরাধ সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিক্ষাবিদ ও শিল্পীদের নির্বিচারে খুন করেছে ও করছে, যারা মদে চুর হয়ে থাকে, কোরআন-হাদিসের বিধি-বিধানের ধার ধারে না, যারা সুন্নী সম্প্রদায়কে দাবিয়ে রেখে শিয়া-কাদিয়ানী প্রভুত্ব কায়েমের চক্রান্তে মেতে উঠেছে-তারাই ইসলামের জিগির তুলে বাঙালীর সরল মনকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদারগণ যদি ইসলামে বিশ্বাসী হত তাহলে তারা নিরপরাধ বাঙ্গালীকে নির্বিচারে হত্যা করতে পারত না।বাঙ্গালীর বুকে গুলী লেগে যখন মৃত্যু নেমে আসে, তখন তার মুখ দিয়ে কি কলেমা উচ্চারিত হয় না? কি অপরাধ করেছিল বাংলার নারী ও শিশু সন্তানেরা ?কেন আজ তারা সর্বহারা হয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে প্রাণ ভয়ে ছুটে চলেছে? ইয়াহিয়া খান কেন নির্বাচন দিয়েছিল, কেন বলেছিল নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হয়েছিল, আজ আবার কেনই বা আওয়ামী লীগকে বে-আইনী করল, বাঙ্গালীর উপর নরপিশাচ পাঞ্জাবী ভাড়াটিয়াদের অতর্কিতভাবে লেলিয়ি দিল? এর জবাব কে দেবে? মিশর, সিরিয়া ইরাক, ইরান তুরস্ক, লিবিয়া, আলবেনিয়া, তিউনিসিয়া, মরক্কো, সুদান পাকিস্তান এক হতে পারল না কেন? পাকিস্তান কেন আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে? পাকিস্তান ইরান ও তুরস্কের মাধ্যমে কেন ইহুদীদেরও সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে আর বাইরে দেখাচ্ছে তারা ইসরাইলের বিরোধী-এ মোনাফেকীর জবাব দেবে কে? প্যালেস্টাইনের মুসলমান মুক্তিফৌজ আজ জর্দানের মুসলমানদের হাতে কেন খুন হচ্ছে? বাঙ্গালী কি এসব বোঝে না? বাঙ্গালী কি এতই বুজদিল? বাঙ্গালী সব জানে, সব বোঝে, কেবল সময়ের অপেক্ষায় আছে। বাঙ্গালী আজ সম্পূর্ন সচেতন।