পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
116

প্রতিহত করে। পাকসেনারা আর অগ্রসর হতে না পেরে পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়। পাকসেনারা মনরা, বাগরা, নাগাইশ, দুশিয়া, আরাদুয়শিরা, ধান্দুহল, সিদলাই প্রভৃতি প্রায় একুশটিচ গ্রাম জ্বালিয়ে দেয় এবং নিরীহ জনসাধারণকে হত্যা করে। ৯ই সেপ্টেম্বর রাতে ক্যাপ্টেন গাফফার একটি শক্তিশালী রেইডিং পার্টি ৩” মর্টার ও ৬৫ এমএম আর আরসহ পাকসেনাদের অবস্থানের দিকে পাঠিয়ে দেন। এই দলটি শালদা নদীর উত্তর তীর দিয়ে লক্ষ্মীপুরস্থ পাকসেনাদের অবস্থানের পেছনে অনুপ্রবেশ করে এবং দু'দিন রেকি করার পর ১১ই সেপ্টেম্বর বিকাল পাঁচটার সময় পাকসেনাদের অবস্থানের অতি নিকটে পৌঁছে গোলা নিক্ষেপ শুরু করে। এতে শত্রুদের দুটি বাঙ্কার রকেটের গোলায় ধ্বংস হয়। গোলার আঘাতে ১১ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৭ জন আহত হয়। পাকসেনারা পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলি জ্বালিয়ে দেয় এবং বিক্ষিপ্তভাবে গ্রামের মধ্যে কামানের গোলাবর্ষণ করে। এরপর আমাদের রেইডিং পার্টি ১৪ই সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় কায়েকপুরে পাকসেনাদের আরো দু'টি বাঙ্কার রকেটের সাহায্যে ধ্বংস করে। এতে ১৬ জন পাকসেনা নিহত এবং ৮ জন আহত হয়। ১৫ই সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার সময় আমাদের আরেকটি রেইডিং পার্টি লক্ষ্মীপুরের নিকট পাকসেনরাদের দুটি বাঙ্কার অতর্কিত আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেয়। এতে ৩ জন পাকসেনা নিহত এবং ৮ন আহত হয়। ১৯শে সেপ্টেম্বর সকাল ৬টায় লক্ষ্মীপুরস্থ পাকসেনাদের আরো দু'টি বাঙ্কার রকেটের গুলিতে উড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে দু'জন পাকসেনা নিহত এবং একজন আহত হয়।

 ফরিদপুরে আমাদের মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা তাদের কর্মতৎপরতা অব্যাহত রাখে। ৩রা আগষ্ট বিকাল ৪টার সময় আমাদের গেরিলারা মাদারীপুরের ভাঙ্গা এবং মুহাফিজ সেতুগুলোতে পাহারারত শত্রুসেনাদের ওপর আক্রমণ চালায়। সে আক্রমণে তারা সেতুগুলো ধ্বংস করে দেয় ও ৭টি রাইফেল দখল করে। ১০ তারিখে মিঠাপুরের ডাকঘর এবং ইউসুফপুরের তহসীল অফিস জ্বালিয়ে দেয়। ১৪ তারিখ সকাল ৬টায় আমগ্রামের সমাদ্দার সেতু সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। ঐ দিনই গেরিলাদের আরেকটি দল পাকসেনাদের একটি গাড়ী মাদারীপুর-টেকেরহাট রাস্তায় গাটমাকির নিকট এ্যামবুশ করে। গাড়ীটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ৯ জন পাকসেনা আহত হয়।

 ২৭শে আগষ্ট আমাদের একটি টহলদার দল পরাশুরাম থানার নিকট পাকসেনাদের একটি টহলদারী দলকে এ্যামবুশ করে ৭ জন পাকসেনাকে নিহত করে। দুই ঘণ্টা সংঘর্ষের পর পাকসেনারা মর্টারের সাহায্যে আক্রমণ চালিয়ে আমাদের গেরিলাদের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে পালাতে সক্ষম হয়। আরেকটি দল ফেনী- বেলুনিয়া সড়কের ওপর হাসানপুর সেতুটি ধ্বংস করে দেয়। শালদা নদীর নিকটে আমাদের একটি টহলদার দল দু'জন পাকসেনাকে রাতে টহল দিতে দেখে এ্যামবুশ করে। এই এ্যামবুশে দু'জন পাকসেনাই নিহত হয়। নিহত পাকসেনাদের পকেট থেকে পাওয়া কাজগপত্রে তাদের নাম পাওয়া যায়। এদের একজনের নাম হাবিলদার আবদুল আজিজ এবং অপরজনের নাম ছিল হাবিলদার রহমান গুল। ২০শে সেপ্টেম্বর বিকেল ৪টায় পাকসেনাদের একটি দল আমাদের শালদা নদী অবস্থানের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। ছোট পাহাড়ের উপর অবস্থিত আমাদের অবস্থানের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় আমাদের সৈনিকদের প্রচণ্ড গোলাবর্ষণের ফলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। ক্যাপ্টেন গাফফার একটি শক্তিশালী রেইডিং পার্টি নিয়ে ১৯শে সেপ্টেম্বর কায়েমপুরে পাকসেনাদের অবস্থানের পিছনে অনুপ্রবেশ করে। পরদিন ভোরে রেকি করার পর সকাল ১০টায় পাকসেনাদের পেছন দিকের অবস্থানের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। আক্রমণের ফলে পাকসেনারা হতভম্ব হয়ে পড়ে এবং আতঙ্কিত হয়ে ছুটাছুটি করতে থাকে। আমাদের রেইডিং পার্টির গুলিতে ৩২ জন পাকসেনা নিহত এবং ৭ জন আহত হয়। এরপর আমাদের দলটি আক্রমণ প্রত্যাহার করে শত্রু অবস্থান থেকে নিরাপদ দূরত্বে চলে আসে। পাকসেনাদের একটি দল কায়েমপুরে তাদের অবস্থানের দিকে নৌকাযোগে অগ্রসর হবার পথে আমাদের এ্যামবুশ পার্টি তাদের ওপরও অতর্কিত আক্রমণ চালায়। দুটি নৌকা আক্রমণের ফলে ধ্বংস হয়ে যায় এবং এতে ১৫ জন পাকসেনা নিহত হয়।