পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
136

উপর পুনরায় আক্রমণ চালায়। প্রচণ্ড আক্রমণের ফলে প্রায় ২০ জন পাকসেনা নিহত ও ২২জন আহত হয়। বিপর্যস্ত হয়ে পাকসেনারা সম্পূর্নরূপে পশ্চাতে হটে যায়। এই আক্রমণের ফলে সম্পূর্ন কসবা আমাদের দখল আসে। পাকসেনারা পিছু হটে গিয়ে মইনপুর; কাশেপুর; কামালপুর; গুরগুইট প্রভৃতি জায়গায় তাদের নতুন অবস্থান তৈরি করে।

 কসবা শত্রুমুক্ত করার পর ৯ম রেজিমেণ্ট কৃশানপুর; বগাবাড়ি; ইয়াকুবপুর এলাকা জুড়ে তাদের নতুন প্রতিরক্ষা ব্যূহ তৈরি করে। এই অবস্থানগুলো থেকে পেট্রোল পার্টি ও শক্তিশালী রেইডিং পার্টি পাক অবস্থানগুলোর উপর ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে যেতে থাকে। ফলে ৭ই নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানের সংঘর্ষে ২২জন পাকসেনা নিহত ও ৩০ জন আহম হয়।

 ৪র্থ রেজিমেণ্ট কোনাবনে তাদের বেইস-এ পুনর্গঠিত হওয়ার পর অক্টোবর মাসে পুনরায় যুদ্ধের জন্য তৈরী হয়ে যায়। আমি এই ব্যাটালিয়নকে শালদা নদী থেকে পাকসেনাদের বিতাড়িত করার নির্দেশ দেই। শালদা এলাকার কমপ্লেক্স ট্যাকটিক্যাল একটি খারাপ এলাকা বলে তাদেরকে পুরো ব্যাটালিয়ন হিসাবে আক্রমন করার নির্দেশ প্রদানকরি। কোম্পানী এবং প্লাটুন-এ ভাগ হয়ে প্রথম তৎপরতা চালিয়ে এলাকার উপর পুরা আধিপত্য অর্জন করার নির্দেশ দেই। এই নির্দেশের পর ক্যাপ্টেন গাফফার তার মন্দভাগ অবস্থান থেকে শালদা নদীর পশ্চিমে ও উত্তরে ৪র্থ রেজিমেণ্টের তৎপরতা বৃদ্ধি করে। অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি ৪র্থ রেজিমেণ্টের একটি প্লাটুন কায়েমপুরের নিকট এ্যামবুশ পাতে। পাকসেনাদের প্রায় ৪০জন সৈনিক এই এ্যামবুশে আক্রান্ত হয়। ফলে ১৫ জন পাকসেনা নিহত এবং অনেক আহত হয়। এর ৩/৪ দিন পর ৪র্থ বেঙ্গলের আরেকটি রেইডিং পার্টি পাকসেনাদের চত্তরা অবস্থানের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে রকেট লাঞ্চার দ্বারা একটি বাঙ্কার উড়িয়ে দিয় এবং ১৫ জন পাকসেনাকে হতাহত করে। এর কিছুদিন পর নায়েব সুবেদার সিকদার আফজাল হোসেনের নেতৃত্বে ৪র্থ বেঙ্গলের একটি কোম্পানী পাকসেনাদের পেছনে অনুপ্রবেশ করে চাপিতলায় এ্যামবুশ পাতে। পরদিন ভোর চারটার সময় পাকসেনাদের দু'টি কোম্পানী তাদের অগ্রবর্তী ঘাঁটিগুলো শক্তিশালী করার জন্য অগ্রসর হচ্ছিলো। পাকসেনাদের এই দলটি ভোর পাঁচটায় আমাদের এ্যামবুশে এসে যায়। প্রায় চার ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। যুদ্ধে ৫০ জন পাকসেনা হতাহত হয়। এই আক্রমণের পরপরই পাকসেনারা আমাদের অবস্থানের উপর জঙ্গী বিমান দিয়ে ৯-৪৫মিঃ পর্যন্ত প্রচণ্ড আক্রমণ করে। আমাদের পক্ষে কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্ট পাকসেনাদের কামালপুর; মইনপুর, লক্ষ্মীপুর অবস্থানগুলোর উপর তাদের চাপ আরো জোরদার করে তোলে। ১১ই নভেম্বর আমাদের একটি শক্তিশালী রেইডিং পার্টি পাকসেনাদের কামালপুরের অবস্থানের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। সাড়ে ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এই আক্রমণে পাকসেনদাদের ১৬ জন নিহত এবং ২২জন আহত হয়। এর পরদিন সকাল সাড়ে পাঁচটায় ৪র্থ বেঙ্গলের আরেকটি কোম্পানী লক্ষ্মীপুর এবং শালদা নদী ফেরী এলাকা আক্রমণ করে দখল করে নেয়। যুদ্ধে প্রায় ১০০জন পাকসেনা হতাহত হয়েছে বলে বিশ্বস্তসূত্রে জানা যায়। আমাদের একজন সৈনিক শহীদ ও সাতজন আহত হয়। শত্রুদের কাছ থেকে ১৫টি রাইফেল; ৩টি এল-এম-জি; ১২টি এল-এম-জি বাক্র দু'টি পিস্তল; একটি ৪০ এম এম রকেট লাঞ্চার; ৭২টি ৬০টি এম-এম বোমা; ৩টি টেলিফোন সেট ৫টি অয়্যারলেস সেট ব্যাটারী; ১টি মেশিনগানের ব্যারেল এবং ৪টি ম্যাপসহ অনেক যুদ্ধ সরঞ্জাম দখল করে নেয়। শালদা নদী ফেরী এবং লক্ষ্মীপুর এলাকা আমাদের দখলে আসার পর ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেণ্টকে শালদা নদী কমপ্লেক্স দখল করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

শালদা নদীর যুদ্ধ

 শালদা নদী এলাকায় শত্রুদের ঘাঁটিটি খুবই শক্তিশালী ছিল। এই ঘাঁটির উত্তর দিয়ে শালদা নদী প্রবাহিত হওয়ায় শত্রুদের উত্তর দিকে সম্পূর্নরুপে নিরাপদ ছিল। পূর্ব দিকে রেলওয়ে স্টেশন উঁচু রেললাইন সম্মুখবর্তী এলাকায় শত্রুদের নিরাপত্তায় প্রাধান্য বিস্তার করে। পশ্চিমের গুদামঘরের উঁচু ভূমি তাদের শক্তিশালী ঘাঁটির