পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
146

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র: দশম খণ্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৪। ২নং সেক্টরে সংঘটিত যুদ্ধ সম্পর্কে অন্যান্যের প্রদত্ত বিবরণ বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র ১৯৭১

সাক্ষাৎকারঃ মেজর আইনউদ্দিন[১]
॥গোপিনাথপুর এ্যামবুশ (কসবা, কুমিল্লা)॥

 সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে খবর পেলাম যে, কুমিল্লা থেকে দুটি কোম্পানী পাকসেনা কসবা হয়ে সকাল ১০টার দিকে গঙ্গাসাগর আসবে। খবর পেয়ে মনতালি থেকে ৪৫ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ২টি মেশিনগানসহ এবং বেঙ্গল রেজিমেণ্টের কিছু ছেলে নিয়ে রাতের বেলায়ই কোথায় কোথায় এ্যামবুশ করতে হবে তার স্থান নির্দিষ্ট করে দেই। স্থান হিসাবে গোপিনাথপুর গ্রামের কাছে রেললাইনের ব্রীজের উত্তর ও দক্ষিণে এ্যামবুশ করার কথা বলি। পাকবাহিনী এ্যামবুশ-এর আওতায় আসার পরপরই মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে আঘাত হানে। পাকসেনাদের দুটি কোম্পানীর মাত্র ১০/১২ জন বেঁচে যায়। এ এ্যামবুশের জন্য কৃতিত্বের অধিকারী ছিল হাবিলদার আবুবকর। এ্যামবুশকালে সেই পাকসেনাদের কাছ থেকে ১২টি এল এম জিসহ প্রায় দেড়শ’ অস্ত্র উদ্ধার করে। কিছু অস্ত্র পানিতে ডুবে যাওয়ায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এই এ্যামবুশে পাকবাহিনীর একজন মেজর নিহত ও একজন ক্যাপ্টেন আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে একজন আহত হয়। এই অপারেশনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বেড়ে যায়।

॥ চারগাছ অপারেশন (কসবা, কুমিল্লা)॥

 আমি মনতলা (আগরতলা) থেকে এক কোম্পানী মুক্তিযোদ্ধাকে কসবা, নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর এই তিনটি থানা অপারেশন করার জন্য অস্ত্র দিয়ে পাঠালাম। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে কোম্পানীতে ১৪৫ জন সৈন্য ছিল। কোম্পানী দেড় মাস ধরে উল্লিখিত থানাতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন করে। একদিন পাকবাহিনীর একটি দল লঞ্চযোগে চারগাছ এলাকায় আসে এবং দু’দিন সেখানে থাকে। এ সংবাদ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা ওঁৎ পেতে থাকে। পাকসেনাদের ঐ লঞ্চটি যখন চাঁদপুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে তখন মুক্তিযোদ্ধারা লঞ্চের পিছন দিক থেকে গুলি করতে আরম্ভ করে। পাকাবাহিনী দুটির গতি ঠিক করতে না পেরে এক যায়গায় আটকিয়ে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধাদের আঘাতে পাসনোদের অধিকাংশই খতম হয়। কিছু পাকসেনা সাঁতরিয়ে অন্য গ্রামে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ৪/৫ জন সৈন্য এসাইল বোটে করে লঞ্চ থেকে নেমে পালিয়ে যেতে চেষ্টা করে কিন্তু মক্তিযোদ্ধারা ঐ বোটটিকে গুলি করে ঘায়েল করে। পাকসেনারা প্রায় সবাই খতম হলেও একজন পাকসেনা বোটের মধ্যে লুকিয়ে ছিল। তাকে হাতেনাতে ধরার জন্য একজন মুক্তিফৌজ সাঁতরিয়ে এসাইল বেটের কাছে যেতেই পাকসেনাটি উঠে মুক্তিযোদ্ধাটিকে হত্যা করে। পরে মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাটিকে হত্যা করতে সমর্থ হয়। দুটি লঞ্চের ভিতর যে সমস্ত পাকসেনা জীবিত ছিল তারা অয়ারলেসে সংবাদ পাঠায় তাদের উদ্ধার করার জন্যে। পরে পাঁচটি লঞ্চভর্তি পাকসেনা আসে তাদের উদ্ধার করার জন্য।

(অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহের ঘটনা)

  1. ১৯৭১ সালে এ সাক্ষাৎকার গৃহীত হয়। একাত্তরের মার্চে আইনউদ্দিন ক্যাপ্টেন হিসাবে কুমিল্লা সেনানিবাসে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে কর্মরত আছে।