পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

173 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড প্রশ্ন : আচ্ছা, ইন্ডিয়ান আর্মিদের সাথে আপনাদের সম্পর্ক কেমন ছিল? যেমন- কোন কোন ক্ষেত্রে ইন্ডিয়ান আর্মিরা প্ল্যান-প্রোগ্রাম করেছিল, যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আর্মিদের মধ্যে মতান্তর ঘটেছে। আপনাদের সাথে এমন কিছু কি হয়েছিল? উত্তর : দেখুন, কনভেশনাল ওয়ারের আগে সবটাই বাংলাদেশ আর্মি প্ল্যান-প্রোগ্রাম করেছিল। বাংলাদেশ ফোর্সের যে হেড অফিস ছিল সেখানকার নিদেশাবলী চুড়ান্ত। তবে ইন্ডিয়ান আর্মি নানান দিক থেকে সার্পোট দিয়ে, যেমন আর্মস অন্যান্য জিনিসপত্র দিয়ে সাহায্য করেছে। প্রশ্ন : আপনাকে আরেকটা প্রশ্ন রাখি। আপনি মে মাসে এত তাড়াতাড়ি ইন্ডিয়ায় যাওয়ার চিন্তাভাবনা নিয়েছিলেন কেন? কেননা, আমরা জানি তখন পুরো বাংলাদেশে যুদ্ধ চলছে। তখনও খোলাখুলি কোথাও বাংলাদেশ ফল করেনি, আপনি আগেই যেতে চেয়েছিলেন কেন? উত্তর : তখন খন্ড খন্ড গেরিলা যুদ্ধ হয়েছিল। অলরেডি তখন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। সম্ভব নয়। দ্বিতীয় পক্ষের সাহায্য দরকার। সেই দ্বিতীয় পক্ষ যে ইন্ডিয়া তা আমরা ধরে নিয়েছিলাম এবং বেতার ও অন্যান্য লোকের মারফত জানতে পেরেছিলাম। সে জন্যই ইন্ডিয়ায় যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করি। সাক্ষাৎকারঃ মেজর শহীদুল ইসলাম* এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি ভারতের একিনপুর (বিএসএফ ক্যাম্প) যাই। সেখানে অনেক এমসিএ, সাধারণ লোক, ইপিআর, পুলিশ সবাইকে দেখলাম। ফেনীর উত্তর অঞ্চল এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ভারতে চলে আসে। পাকবাহিনী এসব এলাকার লোকদের নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে। ওখানে ৭০/৮০ জন লোক নিয়ে ছোটখাট কোম্পানী গঠন করি। আমার সাথে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট রউফ ছিলেন। ওখানে আমরা গেরিলা কার্যকলাপ শুরু করে দেই মে মাস পর্যন্ত। আমরা পাকবাহিনীকে অতর্কিতে আক্রমণ করতাম, আবার ঘাঁটিতে ফিরে আসতাম। এখানে-ওখানে পাকবাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তুললাম। ভারতীয় কর্নেল (৯১বিএসএফ) গুপ্ত, ক্যাপ্টেন মুখাজী, মেজর প্রধান আমাদেরকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছেন। মেলাঘর-২ সেক্টরে অধীনে একিনপুর সাবসেক্টরে কাজ করতে থাকি। ইতিমধ্যে ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম (বর্তমান মেজর) কিছু সেনা নিয়ে এসে আমাদের সাথে যোগ দেন। ফেনীর মধ্যে সরিষাদি, বন্দুরা, মুন্সীরহাট, ফুলগাজি, ফেনী জুন মাস পর্যন্ত এসব এলাকাতে ব্যাপকভাবে গেরিলা আক্রমণ চালানো হয়। জুন মাসে আমরা সাবেক বিভিন্ন ইপিআর বিওপিতে অবস্থানরত পাকসেনাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে পাকসেনাকে হত্যা করেছি।আমরা হঠাৎ করে আক্রমণ করতাম- লোক ক্ষয় করে অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে আবার ঘাঁটিতে ফিরে আসতাম। আমরা দু’ভাগে ভাগ হয়ে যেতাম, মাঝখানে থাকতো মর্টার। নির্দিষ্ট সময়ে মর্টার শেলিং শুরু হলে পাকবাহিনীরা পালাতে শুরু করলে আমরা গুলি শুরু করতাম। এভাবে বহু পাকসেনা মাঝে মাঝে মারা যেত। আমাদের কোন ক্ষতি ওরা করতে পারতো না। এত আকস্মিক আক্রমণ আমরা করতাম যে ওরা বুঝতেই বা ভাবতেই পারতো না। ২নং সেক্টরের প্রধান ছিলেন মেজর খালেদ মোশাররফ। তিনি আমাদের হুকুম দেন ছাগলনাইয়াতে যাবার জন্য। জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে আমরা সমরগঞ্জ বিএসএফ ক্যাম্পে যাই। তারা আমাদের সাদরে অভ্যর্থনা করলো। সমরগঞ্জ থেকে ছাগলনাইয়া ৪ মাইল বাংলাদেশের ভিতরে। আমরা থানা ছাগলনাইয়ার বাঁশপারাতে (ফেনী) ঘাঁটি গাড়ি। বাঁশপাড়াতে আমরা প্রায় ১২০ জনের মতো ছিলাম। জুন মাসের শেষের দিকে আমরা ফেনীর দিকে মুখ করে শক্ত ঘাঁটি পড়লাম। প্রথম দিন যাবার দিনই পাঞ্জাবী সৈন্যের গুলি শুনতে পেলাম। পাঞ্জাবীরা ঐ পথেই এগিয়ে আসছিল গুলি করতে করতে। আমরা ভারী অস্ত্রের সাহায্যে গুলি শুরু করলে পাঞ্জাবীরা পালিয়ে যায়। আমরা নির্দিষ্ট স্থানে চলে আসি।

  • ১৯৭৩ সালে বাংলা একাডেমীর পক্ষ থেকে এ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। মেজর শহীদুল ইসলাম একাত্তর সালে ক্যাপ্টেন পদে ছিলেন।