পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/২৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
217

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৬। ৩ নং সেক্টরেরর যুদ্ধ সংক্রান্ত অন্যান্যের বিবিনণ বাংলা একাডেমীর দলিলপত্র ...১৯৭১

সাক্ষাৎকারঃ ব্রিগেডিয়ার এম, এ, মতিন[১]

 আমাদের হেডকোয়ার্টার তেলিয়াপাড়া থেকে তুলে ভারতীয় সীমান্ত সীমানাতে স্থানান্তরিত করা হয়। মে মাসের প্রথমে আমার কোম্পানী নিয়ে তেলিয়াপাড়াতে ঘাঁটি, সংখ্যায় ছিলাম ৮০/৮৫ জন। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ক্যাপ্টেন ভূঁইয়া চট্টগ্রাম থেকে এসে আমার সাথে যোগ দেন। এরপর আমরা দুজন পরামর্শ করে ডিফেন্স নেই।

 মে মাসের প্রথম থেকে পাকবাহিনী ৮/১০ বার হামলা চালিয়েও আমাদের সরাতে পারেনি। ওখানে মাঝে মাঝে যুদ্ধে আমরা পাকবাহিনীর গাড়ী ও অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করেছি। প্রত্যহ হামলা করতো পাকবাহিনী। বেসামরিক লোক, ইপিআর, মুজাহিদ এরা এতো সাহসিকতার সাথে পাকবাহিনীর সাথে মোকাবিলা করে যে আমি বিস্ময় প্রকাশ করি। ইপিআরদের কথা ভোলা যায় না। এত সাহস আমি জীবনে দেখিনি। হেডকোয়ার্টার থেকে খাবার আসতো। এমনও দিন গেছে যে, ২/৩ দিন খাবার পায়নি। বৃষ্টিতে ভিজে অনাহরে যুদ্ধ করতে হয়েছে। মুজাহিদ দুলামিয়ার একটি ঘটনা বলা দরকার। মুকুন্দপুর হরশপুর (সিলেট) ওখানে পাকবাহিনীর সাথে এক যুদ্ধে দুলামিয়ার বেশ কিছু পাক বাহিনীকে খতম করে। পাক বাহিনীর চাপে অন্যান্যরা চলে যায়, দুলামিয়ার পেটে গুলি লেগে মারা যাবার মত তবুও গামছা দিয়ে পেট বেঁধে এলএমজি ফায়ার করতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে প্রায় জ্ঞান হারায় এমন অবস্থা। কর্ণেল শফিউল্লাহ পিছন থেকে দুই কোম্পানী সৈন্য নিয়ে আক্রমণ করে দুলামিয়াকে উদ্ধার করে। দুলামিয়া প্রায় অজ্ঞান হয়ে গেলেও তার ট্রিগারে হাত ছিল। শফিউল্লাহ তাকে উদ্ধার করে উঠে আসার সাথে সাথে বলে আমার এলএমজি কোথায়। আর বলতো, স্যার আমি মরে গেলে ‘জয় বাংলা’ বলবেন।

 ইপিআর নায়েক সুবেদার মালেক, নায়েক আবদুল ওহিদ, ল্যান্স নায়েক মফিজ, নায়েক সালাম, সেপাই হায়দার আলী, গোলাম মওলা, মুজাহিদ তাজুল ইসলাম, ল্যান্স নায়েক নূরুল ইসলাম এবং সিপাই কবীর- এদের নাম ভোলা যায় না। ছাত্রদের মধ্যে সেলিম এবং আনিসের দুই ভাই এবং শাহজামান মজুমদারের কথা অতুলনীয়। সেলিম মীরপুর অপারেশনে শহীদ হয় বিহারী কলোনীতে। মরার সময় সে বলেছিল যে, ‘স্যার পাকবাহিনীর হাতে মারা গেলাম না, কুত্তা বিহারীদের হাতে মারা গেলাম।’

 যাহোক, ১৯শে মে পাকবাহিনীর আর্টিলারী এবং অন্যান্য ভারী অস্ত্রের সাহায্য ব্যাপক আকক্রমণ চালালে আমরা তেলিয়াপাড়া ছাড়তে বাধ্য হই। যুদ্ধে আমাদের ৮/৯ জন মারা যায়। পাকবাহিনীর অনেক সৈন্য মারা যায়। যুদ্ধ চলে সারা দিন ধরে।

 ২০শে মে ভোরে আমি পাল্টা আক্রমণ করি তেলিয়াপাড়াতে। সকালে আমরা ৪/৫ টা আস্কার দখল করে নেই কিন্তু পাকবাহিনীর আরও সৈন্য আসায় আমরা প্রায় ১১টার দিকে পিছু হটে আসি। আমাদের ১০ জন মারা যায়। পাকবাহিনীর ২০/২৫ জন মারা যায়। ইতিমধ্যে যুদ্ধনীতি পরিবর্তন হয়। আমার বাহিনীকে গেরিলা শিক্ষা দিই।

 ১৭ই মে ক্যাপ্টন মুর্শেদ কিছুদিনের জন্য তেলিয়াপাড়াতে আসে। ক্যাপ্টেন মুর্শেদ তার দল নিয়ে তেলিয়াপাড়া সিলেট রাস্তায় মাইন বসিয়ে প্রস্তুত হয়ে থাকে। পাক বাহিনীর ১২টা গাড়ী ওখান দিয়ে যাচ্ছিল।


  1. ১৯৭১ সালে ক্যাপ্টেন পদে ছিলেন। ছুটিতে থাকাকালীন অবস্থায় মার্চ মাসে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দেন।