পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

439 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খন্ড (ঘ) মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়ার জন্য আলাদা ক্যাম্প করা হয়েছিল। রান্না করার জন্য আলাদা লোক নিয়োগ করা হয়েছিল। আলাদা আলাদা গ্রুপ করে খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। রান্না পরিদর্শনের জন্য আলাদা লোক ছিল। (ঙ) হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার খাওয়ার জন্য একদল লোক নিযুক্ত করা হয়েছিল, যারা মাছ ধরে খাওয়াবে এবং অন্য আর এক দল ছিল, যারা হরিণ শিকার করে আনবে। (চ) মুক্তিযোদ্ধাদের রোগ বা দুর্ঘটনাজনিত আঘাত নিরাময়ের জন্য ৪ জন বিজ্ঞ ডাক্তার ছিল এবং হাসপাতালও খোলা হয়েছিল। হাসপাতালে নানা ধরণের ঔষধ ছিল। (ছ) সমস্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নানাবিধ সুবিধা দেয়ার জন্য গুদাম ছিল। গুদামে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল, যা প্রয়োজন অনুযায়ী ওখান থেকে দেয়া হতো। (জ) বিভিন্ন স্থান থেকে নানা ধরণের জিনিসপত্র রাখার জন্য আলাদা একটি ঘর তৈরী করা হয়েছিল। তার মান ছিল ইমার্জেন্সী ষ্টোর। ওখানে নানা ধরণের জিনিস জমা রাখা হয়েছিল। উক্ত মালপত্র দেয়ার জন্য ৫ জনকে নিয়ে একটি ইমার্জেন্সী কমিটি গঠন করা হয়েছিল এবং একজন ইমার্জেসী অফিসার নিযুক্ত করা হয়েছিল। (ঝ) মহিলাদের জন্য আলাদা ক্যাম্প ছিল। সেখানে মহিলারা ট্রেনিং নিত। মহিলাদের কমান্ডার ছিল খুরশিদ জানে আলম তালুকদার। মহিলারা প্রতিদিন প্রায় এক হাজারের মত রুটি তৈরী করত। তারা কাপড়ও সেলাই করত। তাদেরকে ৩০৩ রাইফেল, এস-এল-আর, এস-এম-জি, এলএম-জি চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হোত। নিজেরা নৌকা চালাতো। (ঞ) ভারত হতে যে সমস্ত নেভাল কমান্ডো আসত তাদের জন্য আলাদা ক্যাম্প ছিল। তাদের প্রতি ক্যাম্পের পক্ষ থেকে স্পেশাল কেয়ার নেওয়া হতো। (ট) হেডকোয়ার্টার সমস্ত অস্ত্র ক্যাম্পে ক্যাম্পে যদিও ভাগ করে দিয়েছিল তবুও বিরাট অস্ত্রাগার ছিল। অস্ত্র দেখাশুনা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আলাদা ডিপার্টমেন্ট ছিল। গেরিলা ক্যাম্পঃ সুন্দরবনে দুই প্রকার ট্রেনিং দেয়া হতো। একদল ডাইরেক্ট ফাইট করবে। আর এক দল গেরিলা কায়দায় যুদ্ধ পরিচালনা করবে। তাই গেরিলাদের জন্য একটি আলাদা ক্যাম্প তৈরী করা হয়েছিল। তার কমান্ডার ছিল শহীদ আলী। সেখানে কমান্ডিং অফিসারের জন্য অফিস ছিল। প্যারেড গ্রাউন্ড ছিল। কোত ছিল। গুদাম ছিল। খোনে প্রায় ৫ শত গেরিলা যোদ্ধা ছিল। অপারেশনে যাবার পূর্বে তারা হেডকোয়ার্টারে আসত এবং সেখান থেকে যাত্রা করত। প্রত্যক্ষ সৈন্যদের ক্যাম্পঃ তাম্বুলবুনিয়া নদীর পূর্ব পার্শ্বে একটি খালের মধ্যে রীতিমত সামরিক বাহিনীর ক্যাম্প করা হলো। তার দায়িত্ব দেওয়া হলো বাংলাদেশের সি-এন-সি কর্নেল ওসমানীর স্পেশালিষ্ট আলতাফকে। তার অধীনে এক হাজারের মত সৈন্য ছিল। তারা অত্যন্ত সাহসী যোদ্ধা ছিল। রেকি পার্টিঃ রেকি পার্টির কমান্ডার পরিতোষ কুমার পালকে করা হলো। হেডকোয়ার্টার থেকে ১৫ মাইল দক্ষিণে তামুলকুনিয়ার পূর্ব পাশে পাঙ্গাশিয়া নামক খালের মধ্যে তাদের ক্যাম্প করা হলো। সেখান হতে গানবোট, লঞ্চ বা জাহাজের গতিবিধি লক্ষ্য করে প্রতিদিন হেডকোয়ার্টারে রিপোর্ট পাঠানো হতো। মূলতঃ তার উপর দায়িত্ব ছিল খুলনা এবং বরিশালের শত্রদের যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ করা। হেডকোয়ার্টারে তৈরী করার পর এক মাসের মত সময় লেগেছিল সব ঠিক করে নিতে। তারপর যুদ্ধের পালা শুরু হলো।