পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
441

প্রাণ হারায় এবং বাকীরা পালিয়ে যায়। ৫ জনকে বন্দী করে নিয়ে আসা হয় এবং ১২ টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।

সাক্ষাৎকারঃ ডাঃ মোহাম্মদ শাহজাহান

 মেজর জলিলকে ৯ নং সেক্টরের সেক্টর কমাণ্ডার নিযুক্ত করা হয় এবং হাসনাবাদ ৯ নং সেক্টরের হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা হয়। তারপর হাসনাবাদ থেকে টাকীতে হেডকোয়ার্টার স্থানান্তরিত করা হয় এবং স্বাধীনতার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত সেখানে হেডকোয়ার্টার ছিল।

 টাকীর নিকটবর্তী তাকিপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প খোলা হয়। শাহ জাহান মাস্টার টাউন শ্রীপুর হাইস্কুলের হেড মাস্টার ছিলেন। তিনি তার এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন। সে এলাকার ছেলে এবং যারা আমাদের সাথে ছিল সবাইকে নিয়ে প্রথম তাকিপুরে ট্রেনিং শুরু হয়।

 প্রথম দিকে আমাদের খাবার সমস্যা প্রকট ছিল। সেখানে প্রায় ১৮২ জন মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং নিচ্ছিল। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী প্রথম অবস্থায় আমাদের অনেক সাহায্য করেছে। ৭২ ব্যাটালিয়ন বি-এস-এফ'র কমাণ্ডার মুখার্জীর সহযোগিতার কথা অবিস্মরণীয়।

 খারাপ খাদ্য, পানীয় এবং খারাপ অবস্থায় থাকার জন্য অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধার জ্বর এবং নানারকম পেটের অসুখ শুরু হয়। এদের চিকিৎসার জন্য বি-এস-এফ থেকে (৭২ ব্যাটালিয়ন) ঔষধ সাহায্য দেয়া হয়। আমি নিজে সে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার ভার নিয়েছিলাম।

 দিন দিন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়তে লাগল। জুন মাসে প্রথম ভারতে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা ট্রেনিং শুরু হয় বিহারে। আমরা প্রথম বেইস বিহারে পাঠাই তাকিপুর থেকে। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত গেরিলারা বিহার থেকে ফিরে আসলে আমাদের তৃতীয় ক্যাম্প বাকুন্দিয়াতে খোলা হয়। এখানে কেবল ট্রেনিংপ্রাপ্ত গেরিলাদের রাখা হত।

 আমাদরে দ্বিতীয় ক্যাম্প ছিল হিংগলগঞ্জে। এটা খোলা হয় জুন মাসে। এখান থেকেই ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা সর্বপ্রথম খুলনার কালীঞ্জ থানা আক্রমণ করে (জুন) এবং সফলতা অর্জন করে। তারপর মাঝে মাঝে এখান থেকে ভিতরে গিয়ে ছোটখাট অপারেশন চালাত।

 আমার সাথে কয়েকজন মেডিক্যালের ছাত্র ছিল। তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র জাহিদ, মুজিবর এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র সরল এবং মৃণাল এদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

 প্রথমদিকে প্রত্যেকটা ক্যাম্পের সাথে একটি করে আউটডোর ছিল। কয়েকটা স্পেশাল বেড রাখা হতো কেবলমাত্র গুরুতরভাবে আহত রোগীদের জন্য। এখান থেকে পরে আমরা ভারতীয় হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতাম। তারা এ ব্যাপারে আমাদেরকে যথেষ্ট সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। উল্লিখিত চারজন ছেলে চারটি ক্যাম্পের মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কাজ করছিল। আমি প্রত্যেকটি ক্যাম্প মাঝে মাঝে গিয়ে সুপারভাইজ করে আসতাম। অধিকাংশ গেরিলা অপারেশন হিংগলগঞ্জ ক্যাম্প থেকেই পরিচালনা করা হত। তাই প্রায়ই আমাকে সেখানে যেতে হতো।

 সেপ্টেম্বর মাসে টাকীতে সর্বপ্রথম ১৫ বেডের হাসপাতাল খোলা হয়। এখানে অস্ত্রোপচারের কোন ব্যবস্থা ছিল না। প্রকৃতপক্ষে একটা ট্রানজিট হসপিটাল এর কাজ করত- আহত মুক্তিযোদ্ধাদের। এখানে রাখা হত ফার্স্ট এইড দেয়ার জন্য এবং পরে ভারতীয় হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হত। ২২ শে নভেম্বর কালীঞ্জ থানা