পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৪৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
471

আর্মির একজন জে-সি-ও, মিলিশিয়া কাপড় পরা, সম্ভবতঃ মিলিশিয়াই হবে ছেলেটির সাথে এসে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে এবং সারেণ্ডার- এর কথা ব্যক্ত করে। তখন আমরা তাদেরকে সারেণ্ডার-এর পদ্ধতি বলে দিই। সে ফিরে যায় এবং হাতিয়ার মাটিতে রেখে সবাইকে সারেণ্ডার করায়। আমরা তাদের সব হাতিয়ার এবং সকলকে আমাদের পজিশনে নিয়ে আসি। এদের মধ্যে একজন অফিসার, ইনি সম্ভবতঃ ক্যাপ্টেন হাসান কোরেশী, একজন জে-সি-ও, এবং ১০০ জনের মত সিপাই, ৩০ জনের মত রেঞ্জার এবং কিছুসংখ্যক রাজাকার ও ছিল। এদেরকে আনা হলো। সমস্ত হাতিয়ার আনা হলো। আমরা যে হাতিয়ার পেলাম তার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হলো এম-জি ৩৬টি এবং আরও ছোটখাট হাতিয়ার। যারা সারেণ্ডার করে তাদেরকে রাখার ও খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হলো। তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে, আমি অবরুদ্ধ ২৪ ঘণ্টা ব্যস্ত ছিলাম। খাওয়া-দাওয়া ছিল না। তাই বিশ্রামে চলে যাই। Next day morning about 8-O'clock I came back to the same place and there I found one Indian Capt. and one Indian Major. They were talking to Capt. Quorcishi etc.

 যুদ্ধবন্দী আচরণ সংক্রান্ত কথাবার্তা হলো। তারপর দিন আমরা বক্সিগঞ্জ পৌছালাম। ব্রিগেডিয়ার ক্লেয়ার সেখানে একটি রেস্ট হাউজে ছিলেন। আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরলেন এবং কনগ্র্যাচুলেশন জানালেন। বললেন Mannan, our country recognize your country as a sovereign state. Now your morale should be high. We are going to fight a real battle to the pakistanis.

 বক্সিগঞ্জে তখন কোন পাকিস্তানী ছিল না। তারা জামালপুরের দিকে চলে গেল। আমি আমার মুক্তিবাহিনী নিয়ে জামালপুরের দিকে অগ্রসর হলাম। আমি আগেই বলেছিলাম তাদের দুটি ফোর্স কামালপুর বাইপাস করে চলে গিয়েছিল। এই ফোর্সগুলো যখন টাঙ্গাইলের দিকে যাচ্ছিল তখন ইণ্ডিয়ান ফোর্স তাদেরকে বাধা দেয়, যেন তারা টাঙ্গাইল যেতে না পারে। তারা যখন বাধা পেল তখন এক ব্যাটালিয়ন নান্দাইল হয়ে ময়মনসিংহের দিকে যে রাস্তা ছিল সেদিকে যেতে চেষ্টা করে। তারাও বাধাপ্রাপ্ত হলো। আমি আমার ফ্রিডম ফাইটারদের নিয়ে শেরপুর হয়ে জামালপুরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। তখন আমি প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। তখন আমি নদী পার হতে পারি নি, কারণ নদীতে কোন ফেরীর বন্দোবস্ত ছিল না। আর আমি দেখতে পাচ্ছিলাম দুটি ইণ্ডিয়ান এয়ারক্রাফ্ট জামালপুরের উপর ভীষণভাবে গুলিবর্ষণ করে চলেছে। আমি তুমুল গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। প্রায় ঘণ্টা দু'য়েক সংঘর্ষের পর সব শান্ত হলো। ইন দি মিন টাইম আমি ব্রহ্মপুত্র নদ ক্রস করে জামালপুর সাইডে পৌঁছে গেলাম এবং অগ্রসর হতে লাগলাম। খবর পেলাম, পাকসেনাদের পুরো কনভয় ডেস্ট্রয় করা হয়েছে এবং প্রায় ৬ জন অফিসার সহ ৩৬০ জন পাকসেনাকে সেখানে বন্দী করা হয়েছে। তাদেরকে ইণ্ডিয়ান আর্মি ঘেরাও করে জামালপুর পি.টি.আই-তে রাখে। তখন আমি সেখানে যেয়ে তাদের সাথে দেখা করি। বন্দী ছয় জন অফিসারের মধ্যে একজন মেডিক্যাল কোরের সদস্য ছিলেন। আর একজন সিনিয়র মেজর ছিলেন, যিনি এই ব্যাটালিয়নের ও-সি ছিলেন। তার নাম মনে নেই, তিনি পাঠান এবং কর্নেল তাহেরের কোর্স মেট। তার সাথে কর্নেল তাহের সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছিল। আলাপ-আলোচনার মধ্যে একজন ইণ্ডিয়ান গার্ড রেজিমেণ্টের সি-ও এসে যোগ দেন। পাক সিনিয়র মেজর আমাকে প্রশ্ন করেন, Mannan, we are fighting among us. আমি জবাব দেই, স্যার আপনারা পহেলা মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ যে হত্যাকাণ্ড করেছেন তার রিঅ্যকশন স্বরুপ এ ছাড়া আমাদের কিছু করণীয় ছিল না। তারপর আমি তাঁকে আরও ঘটনার কথা বললাম। তিনি বললেন Happy news that you are independent but I wish you are not like Bhutan. আমি প্রত্যুত্তরে বলি, Sir, if we can get rid of you, we can get rid of any one. We will never replace one master by another.

 যাহোক, জামালপুর থেকে আমরা ময়মনসিংহের দিকে অগ্রসর হতে থাকলাম আর ইণ্ডিয়ান আর্মির যে দু'টি ব্যাটালিয়ন ছিল তারা টাঙ্গাইলের দিকে অগ্রসর হলো। আমি সেই দিকে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জেনারেল নাগরা, যিনি এই ডিভিশনের কমাণ্ডার ছিলেন, তিনি আমাকে সেদিকে যেতে বারণ করেন। তিনি বললেন,