পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
536

 ১০১ কমিউনিকশন জোন এলাকায় সম্মিলিত বাহিনী তুরা থেকে জামালপুরের দিকে ধাবিত হয়। পাকবাহিনীর একটি ব্রিগেড এই এলাকায় মোতায়েন ছিলো। ব্রিগেড সদর দপ্তর ও দুইটি ব্যাটালিয়ন ময়মনসিংহে এবং একটি ব্যাটালিয়ন জামালপুরে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেয়।

 ডিসেম্বর ৯ তারিখে সম্মিলিত বাহিনী জামালপুরের নিকটবর্তী অঞ্চলে পৌঁছে যায়। একটি দল ব্রাহ্মপুত্র অতিক্রম করে জামালপুরকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। পাকবাহিনী ময়মনসিংহ থেকে একটি ব্যাটালিয়ন জামালপুরে স্থানন্তরিত করে।

 ১১ নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনী হালুয়াঘাট ও নালিতাবাড়ি হয়ে ময়মনসিংহের দিকে ধাবিত হয়। ৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ শত্রুমুক্ত হয়। জামালপুরের মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর সাথে পাকসেনাদের এক প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। ১১ ডিসেম্বর পাকবাহিনী পরাজিত হয়। মেজর জেনারেল গিল গুরুতরভাবে আহত হলে মেজর জেনারেল নাগরা অধিনায়ক নিযুক্ত হন। পাকসেনাদের একটি দল টাঙ্গাইল চলে যায়। সম্মিলিত বাহিনী টাঙ্গাইলের দিকে অগ্রসর হয়।

 ১২ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলে ছত্রী সেনার একটি ব্যাটালিয়ন অবহরণ করে। জামালপুর যুদ্ধে পরাজিত পাকসেনারা টাঙ্গাইলের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো। পাকিস্তানীদের পালাবার সকল পথ রুদ্ধ হয়ে যায়, কারণ ১০১ কমিউনিকেশন জোনের সৈন্যরা টাঙ্গাইলে পৌঁছে যায়। ১৩ ডিসেম্বর পাকবাহিনী টাঙ্গাইলে আত্মসমর্পণ করে। পলায়নপর বিপুলসংখ্যক পাক সেনা গ্রামবাসীর হাতে নিহত হয়। সম্মিলিত বাহিনী ঢাকার পথে মির্জাপুরের দিকে যাত্রা করে। ১৪ই ডিসেম্বর যৌথ দল টঙ্গীর কাছাকাছি এসে পড়ে। এই বাহিনী কালিয়াকৈর হয়ে সাভার এসে পৌঁছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই সম্মিলিত বাহিনী ঢাকার উপকণ্ঠে মীরপুর ব্রীজের কাছে এসে পড়ে। ১১ই নভেম্বর নাগরা তার এডিসি'র মারফত নিয়াজীকে আত্মসমর্পনের উপদেশ দিয়ে পত্র পাঠালেন।

 ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানী ১৪ই ডিভিশন কমাণ্ডার মেজর জেনারেল জামশেদ মীরপুর ব্রীজের কাছে এসে ভারতীয় জেনারেল গান্ধর্ব নাগরার কাছে আত্মসমর্পন করে। মুক্তিবাহিনী লক্ষ লক্ষ মানুষের জয়গান ও উল্লাসের মধ্যে ঢাকা দখল করে।

 পাকিস্তান বিমানবাহিনীর পুর্বাঞ্চলে মাত্র এক স্কোয়াড্রন ১৮ স্যাবর জেট বিমান ছিলো। সর্বাত্মক যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে পাকিস্তানীরা বিমান শক্তি সম্পুর্ণভাবে হারায়। ভারতীয় বিমানবাহিনী একচ্ছত্র আধিপত্য লাভ করে।

 ভারতীয় নৌবাহিনী ফ্লিট এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার 'ভিক্রান্ত' বঙ্গোপসাগরে ঢুকে সমুদ্র পথের গতিরোধ করে। ‘ভিক্রান্ত' থেকে যুদ্ধ বিমানগুদেলা চট্টগ্রাম বন্দর, বিমান বিমান বন্দর ও চালনা বন্দর আক্রমন করে। এই যুদ্ধ জাহাজের প্রধান কর্তব্য ছিলো সমুদ্র পথে পাকসেনা পালিয়ে যেতে না দেয়া এবং সমুদ্র পথে কোন সাহায্য যাতে নাসতে পারে তা নিশ্চিত করা।

 পাকিস্তান পূর্বাঞ্চালীয় নৌবাহিনীর কয়েকটি মাত্র গানবোট সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রথম কয়েকদিনের মধ্যেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ১২ অক্টোবর 'পদ্মা ও পলাশ' নামে দুটি গানবোট সমন্বদেয় বাংলাদেশ নৌবাহিনী সংযোজিত করা হৃদয়। ৬ ডিসেম্বর যশোরের পতনের পর 'পদ্মা ও পলাশ” এবং ভারতীয় গানবোট ‘পানভেল’ হিরণপয়েণ্ট মঙ্গলা বমদর এবং খুলনার খালিশপুরে পাক নৌ ঘাঁটি পি,এন, এস 'তিতুমীর' দখলের জন্য অগ্রসর হয়। ৯ই ডিসেম্বর কোনো বাধা ছাড়াই এই গানবোটগুলো হিরণপয়েণ্ট পৌঁছায়। পরদিন ১০ ডিসেম্বর অভিযান শুরু হয়।

 বেলা ১২টার সময় খুলনা শিপইয়ার্ডের সন্নিকটে আকাশে তিনটি জংগী বিমান দেখা যায়। ভারতীয় নাবিক বলেন যে, বিমানগুলো ভারতীয়। আকস্মিকভাবে জংগী বিমানগুলো বোমাবর্ষণ শুরু করে। ভারতীয় নাবিক