পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দশম খণ্ড).pdf/৫৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র : দশম খণ্ড
552

কোন বাধাই পেল না। কারণ একটা পাকবাহিনী লড়াই করেছে জামালপুরে আর একটা গিয়েছে ভৈরববাজারসিলেট সেক্টর। একই বিমান আক্রমণ ও বাড়ানো হল। বিমান ও নৌবাহিনীর জঙ্গী বিমানগুলি সারাদিনে অসংখ্যবার বিভিন্ন পাক সামরিক ঘাঁটিতে আক্রমণ চালাল। বিমান আক্রমনের ভয়ে দিনের বেলা পাক সামরিক বাহিনীর চলাচলও প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। পরিকল্পনা মতই বিমান আক্রমণ বৃদ্ধি করা হল। লক্ষ্যটা একই। প্রথমত,পাক সেনাবাহিনীকে আবার কোথাও রিগ্রািপড হতে না দেওয়া। এবং দ্বিতীয়ত, তাদের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়া ওরা অত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

 ৯ ডিসেম্বর: ৯তারিখ চতুর্দিক মিত্রবাহিনী ঢাকায় দিকে অগ্রসর হল। তখন তাদের চোখের সামনে শুধু ঢাকা। এর আগেই তাদের প্রথম লক্ষ্যাটা পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, মিত্রবাহিনী বাংলাদেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা পাকবাহিনীকে বেশ ভালোমত বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে, তাদের ঢাকা ফেরার বা পালাবার প্রায় সব পথ বন্ধ। এবার দ্বিতীয় লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেল ভারতীয় বাহিনী।

 দ্বিতীয় লক্ষ্যটা হল খুব দ্রুত ঢাকার পাকবাহিনী মনোবল সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দিয়ে নিয়োজিকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা।

 সব দিক থেকেই মিত্রবাহিনী ঢাকার দিকে অগ্রসর হল। পূর্বে পীেছে গেল আশুগঞ্জে, দাউদকান্দিতে এবং চাঁদপুরে। পশ্চিমে বাহিনী পীেছল মধুমতি নদীর তীরে। আর একটা বাহিনী কুষ্টিয়া মুক্ত করে চলল গোয়ালন্দ ঘাটের দিকে। হালুয়াঘাট থেকে এগিয়ে আসা বাহিনীও পৌছে গেল ময়মনসিংহের কাছাকাছি। নৌবাহিনীর গানবোটগুলিও ততক্ষণে নানা দিক থেকে এগোচ্ছে ঢাকার দিকে। এবং বিমান বাহিনীর আক্রমণও পুরোদমেই চলছে। সেদিন বিকালে মিত্রবাহিনীর প্রধান জেনারেল অরোরা কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে বললেন: আমরা এখন ঢাকার লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলেন: পাকিস্তানীরা যদি মাটি কামড়ে ঢাকার লড়াই চালাতে চায় তাহলে আপনি কী করবেন? জেনারেল অরোরা জবাব দিলেন: ওরা কী করবে জানি না। তবে আমরা বড়দের লড়াইয়ের জন্যই প্রস্তত্তত। জেনারেল অরোরাকে সাংবাদিকরা আবার জিজ্ঞেস করলেন: ঢাককে মুক্ত করার পথে আপনার সামনে সবচেয়ে বড় বাধা কী? আরোরা বললেন: নদী। তারপর আবার বললেন: নদী যদিও বড় বাধা সে বাধা অতিক্রমের ব্যবস্থা আমরা করে ফেলেছি। আমাদের পদাতিক সৈন্য এবং রসদ পারাপারের ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে। আর আমাদের পিটি ৬৭ ট্যাঙ্কগুলি নিজ থেকেই নদী সাঁতরে যেতে পারবে।

 ১০ ডিসেম্বর পরদিনই ৫৭ নং ডিভিশন গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিল মিত্রবাহিনী কিভাবে রাজধানী ঢাকার মুক্তিযুদ্ধে নদীর বাধা অতিক্রম করবে। ভোররাত্রি থেকে ভৈরববাজারের তিন চার মাইল দক্ষিণে হেলিকাপ্টারে করে নামানো শুরু হল ৫৭ নং ডিভিশনের সৈন্য। সারাদিন ধরে মেঘনা অতিক্রমের সেই অভিযান চলল। প্রথম বাহিনীটা ওপারে নেমেই ঘাঁটি গেড়ে বসল। কিছুটা উওরে ভৈরববাজারের কাছেই পাক সৈন্যদের একটা বড় বাহিনী মজুত। ব্রিজেটার একটা অংশ ভেঙ্গে দিয়ে নদীর পশ্চিম পারে ওত পেতে বসে আছে। আকাশে সূর্য ইঠতেই তারা দেখতে পেল হেলিকপ্টার। নদী পার হচ্ছে। কিন্তু দেখেও তারা ঘাঁটি ছাড়তে সাহস পেল না। ভাবল, ওটা বোধহয় ভারতীয় বাহিনীর একটা ধাপ্পা। ওদিকে ছুটে গেলেই আশুগঞ্জ থেকে মূল ভারতীয় বাহিনীটা ভৈরববাজারের ওখানে এসে উঠবে। তারপর ভৈরববাজার-ঢাকা রাস্তা ধরবে। সত্যিই কিন্তু পাকবাহিনীকে ভূল বোঝাবার জন্য এসে মিত্রবাহিনীর একটা বড় কলাম তখন ভাবসাব দেখাচ্ছিল যে তারা আশুগঞ্জ দিয়েই মেঘনা পার হবে।

 পাকবাহিনী এইভাবে ভুল বোঝায় মিত্রবাহিনীর সুবিধা হল। একরকম বিনা বাধায় মেঘনা পার হওয়া গেল। হেলিকপ্টারে নদী পার হল কিছু সৈন্য। অনেকে আবার নদী পার হল ষ্টীমারে এবং লঞ্চে করে। কিছু পার হল স্রেফ দেশী নৌকাতেই ট্যাঙ্কগুলি নিয়ে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল প্রথমে। কিন্তু সে সম্যাও দূর হল এক