পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৫০

যাই, নির্বচিত প্রতিনিধি গিয়ে কি দেখে, না খেয়ে মানুষ কুঁকড়ে পড়ে আছে, বিক্ষোভ আর বিক্ষোভ’। চারদিকে বিক্ষোভ দেখছি, শুনছি, আরও দেখছি। হিমালয় থেকে নেমে এসেছে একদিকে গঙ্গা, আর একদিকে পদ্মা। পদ্মায় যে কারেণ্ট রয়েছে, সেই কারেণ্ট চলেছে পূর্ববাংলাকে বিধৌত করে, আর আমাদের এই গঙ্গায় চরা পড়ে গিয়েছে। সেই পদ্মার বান ডাকবে, সেইদিন যারা নির্মমভাবে আমাদের উপর অত্যাচার করে যাচ্ছে তারা টিকবে না, ওই কারেণ্টে ভেসে যাবে, আমাদের সরকারের সাহস হবে না। চীনের কথা বলবো না, রাশিয়ার কথা বলবো না, আমি এ দেশের মানুষ, ভারতবর্ষের কথা বলবো। আমার সরকার কি করছে? সাথে মানে প্রশ্ন জাগে, প্রশ্নটা হচ্ছে এই, কেন অস্ত্র দিচ্ছে না? কারণ লুঙ্গি পরা মানুষগুলো, চাষী-মজুর তারা এক সাথে লড়ছে। তাদের হাতে অস্ত্র পড়লে কি জানি কি হয়। পূর্ব বাংলা মুক্ত করে হয়ত সেই মানুষ এগিয়ে আসবে সেই অস্ত্র নিয়ে। এটা সন্দেহ জাগছে মনে। এটা কি সত্য? এতদিন হয়ে গেল। রেডিও মারফত চারদিকে আওয়াজ, কান্নার আওয়াজ, গানের আওয়াজ। ক্ষুধাতুর শিশু চায় না কিন্তু খালি দুটো ভাত, একটু নুন। কিন্তু সেখানকার মানুষ চায় অস্ত্র, বুলেট। কারণ তারা চাচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানী যারা তাদের উপর অত্যাচার করছে তাদের হাত থেকে বাঁচতে চায়। কিন্তু আমরা এখানে ত্রাণ করছি- তাদের আমরা ত্রাণকর্তা নই। তারা বলছে, আমাদের মুক্তির জন্য অস্ত্র দাও। আমাদের অভ্যাস আছে রিলিফ দেওয়া, কিন্তু রিলিফ চায় না, অস্ত্র চায়, কিন্তু তা দেওয়া হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের জনসাধারণ কত সুন্দর। বাচ্চা ছেলে দুলিটার তৈরি নিয়ে যাচ্ছে কোথায়, না গাছতলায়, কেউ আবার জলখাবার থেকে দু’খানা কাপড় কিনে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আজকে পূর্ব বাংলার অধিবাসীদের বলছি, মীরজাফরের দল রয়েছে- ঐ মুসলিম লীগ- যে দে উইল স্ট্যাব ফ্রম ব্যাক। আমরা জানি পশ্চিম ও পূর্ববাংলার আকাশে-বাতাসে বেইমান ছড়িয়ে আছে- এসেমব্লী হাউসের ভেতরে কি বাইরে চারদিকে বেইমান ছড়িয়ে আছে। তাই বলছি হুঁশিয়ার হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা এক কথায় নিশ্চয়ই সমর্থন করবো ভারত সরকার তাদের যা-কিছু সশস্ত্র সাহায্য দিক এবং সাথে সাথে আমাদের অপোজিশন থেকে স্বেচ্ছাসেবক এগিয়ে যাবে রক্ত দান করার জন্য। আমার নিজের এক্সপিরিয়ান্স হচ্ছে, আমরা নিজেরা গিয়েছিলাম ডাইরেকটর অব মেডিকেল কলেজের কছে, ১০/১৫ হাজার লোক রক্ত দেবার জন্য। কিন্তু তিনি বললেন ৫০ জনের বেশি নিতে পানি না, কারণ আমাদের রক্ত গেলে যদি সেখানে কিছু অসুবিধা হয়। অর্থাৎ আমাদের রক্ত গেলে যদি সেটা বিরুদ্ধে যায়, কারণ আমাদের রক্তে নাকি দোষ হয়ে গেছে। আজ আপনারা যে হাসছেন এ হাসি মিলিয়ে যাবে। কিছুদিন আগে আমি পাড়াগাঁয়ে গিয়েছিলাম সেখানে একজন বুড়ি বললে যে, তোমাদের দেশের লোক সব মাতাল হয়ে আছে। আগে একটা বোতল ছিল তাতে একটা কিংকং মার্কা ছবি ছিল। সেটা একটা বিশ্রী ভদ্রলোকের ছবি ছিল বলে চলছিল না, সেজন্য তারা সে বোতলে একটা ভাল ছবি দিল এবং লোকেও সে খেয়ে নিল। কিন্তু তাতে ভারতবর্ষের বেশির ভাগ আদিবাসীর নেশা কেটে গেল। তাই আজকে বুঝতে পারবেন এ ইন্দিরা মার্কা বোতল খেয়ে লোকের নেশা একদিন কেটে যাবে এবং সেদিন বুঝতে পারবে কোনটা কি? এটাই হবে চোলাই মদের জবাব। এই বলে আমি এইটাকে সমর্থন করছি।

 শ্রী বিশ্বনাথ মুখার্জিঃ মাননীয় ডেপুটি স্পীকার মহাশয় যে প্রস্তাব এখানে উত্থাপন করা হয়েছে আমি তাকে সমর্থন করে সোজাসুজি এই প্রস্তাবের যেটা মূল কথা সেটা সম্বন্ধে বলতে চাই। আমরা এই বিধান সভায় ভারত সরকারের কাছে দাবী করছি যে, “অনতিবিলম্বে বাংলাদেশে সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ও তাহার সরকারকে স্বীকৃতি এবং অস্ত্রশস্ত্রসহ সর্বপ্রকার প্রয়োজনীয় কার্যকরী সাহায্য দিতে হইবে। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ নরনারী যখন বুকের রক্ত দিতেছেন, তখন পশ্চিমবঙ্গের জনগণ ইহার কমে কিছুতেই রাজী হতে পারেন না।” তা আজকে আমরা সকলেই একমত যে, বাংলাদেশের এই লড়াইকে কিছুতেই আমরা হেরে যেতে দিতে পারি না, আমরা পশ্চিম বাংলার লোক, আমরা বাঙ্গালী সেইজন্যই নয়, আমরা সকলেই মানি যে, বাংলাদেশের লড়াই তাদের জাতীয় স্বাধীনতা, এবং তাদের গণতন্ত্রের লড়াই, প্রগতির লড়াই। পৃথিবীর যেকোন দেশে গণতন্ত্র, প্রগতি এবং স্বাধীনতার লড়াই, এবং তাদের ভারতবর্ষের স্বাধীনকামী, প্রগতিশীল জনসাধারণ চিরদিন সর্বান্তঃকরণে তাকে