পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৫২

জনগণকে যেভাবে ঐক্যবদ্ধ এবং সংঘবদ্ধ করেছে তা ভারতবর্ষের পক্ষে সম্ভব নয়। বিরোধী নেতা জ্যোতিবাবু যখন বক্তৃতা করেন তখন তার মুখ থেকে আমি এ কথাটা শুনব আশা করেছিলাম কিন্তু আমি নিশ্চয় করে বলতে পারি, এই আশ্বাস আমি ভারত সরকারকে দিতে পারি-সকলে দিতে পারি, সমস্ত পক্ষ থেকে দিতে পারি, বাংলাদেশের সমস্ত প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল দিতে পারে, সমস্ত জনসাধারণ দিতে পারে যেন স্বীকৃতি দাও, অস্ত্র দাও, কার্যকারী সাহায্য দাও, তারা লডুক, তাদের লড়বার যথেষ্ট লোক আছে, তারা লডুক, তারা জিতুক, তার জন্য যদি কোন বিপদ ভারতের উপর আসে। আমরা সকলে আমদের অন্যান্য বিষয়ে যে-কোন মতপার্থক্য থাক, আমাদের শ্রেণীবিভেদ আছে, শ্রেণীর সঙ্গে শ্রেণীর লড়াই আছে, বিরোধী দলের মধ্যে মতভেদ আছে, আমাদের মধ্যে সংঘর্ষ আছে কিন্তু আমাদের মধ্যে যাই থাকুক না কেন, আমরা সকলে জোট বেঁধে দাঁড়াব এবং আমরা তার মোকাবিলা করব। আমি মনে করি যখন বিরোধী পক্ষ এবং সরকার পক্ষ উভয়ে মিলে এই প্রস্তাব একজোট হয়ে এনেছি তখন নিশ্চয় এই বিষয়ে আমরা একমত আছি এবং এই আশ্বাস আমরা দিতে পারি, এই বিষয়ে আশংকার কোন কারণ নেই। তেমনি জরুরী পরিস্থিতির যদি সৃষ্টি হয় তখন নিশ্চয় আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াব তার সম্মুখীন হওয়ার জন্য। সেই বিষয়ে ভয় পাবার এবং পিছু হটবার কোন কারণ নেই। অনেক কথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্বন্ধে বলার আছে- অনেকেই বলেছেন, অমি সেই সবের পুনরাবৃত্তি করতে চাই না, আজকের দিনে এত কথা শুনবার আমাদের অবকাশ নেই-আজকের দিনে যখন তারা লড়ছে, মরছে, যখন ওদিকে লক্ষ লক্ষ লোক মরছে, অবার লক্ষ লক্ষ লোক যখন পালিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে আমাদের এখানে তখন যে কথাটা সবচেয়ে জোরে সঙ্গে এই প্রস্তাবের মধ্যে বলবার চেষ্টা করা হয়েছে, আমাদের আইনসভার উদ্বেগ, আমাদের পশ্চিম বাংলার জনগনের উদ্বেগ এবং অবস্থার জরুরীত্ব সম্বন্ধে জোর দিয়ে যে কথাটা তুললাম নিশ্চয় আমরা সকলে মিয়ে ভারত সরকারের উপর প্রয়োজনীয় চাপ দেব কিন্তু আমি চাপ দেয়ার কথাটা বলতে গিয়ে বলছি, আমরা এই আশ্বাসেও দেব যে, হ্যাঁ, স্বীকৃতি দাও, সাহায্য কর, তার জন্য যে-কোন ঝামেলা আসুক, ঝক্কি আসুক, বিপদ আসুক আমরা সমস্ত দল সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে তার সম্মুখীন হব-এই আশ্বাস আমরা দিচ্ছি।

 শ্রী সুশীলকুমার ধাড়াঃ মাননীয় উপাধাক্ষ, আজকে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মহাশয় যে প্রস্তাব এখানে উপস্থাপিত করেছেন তাকে সম্পূর্ণভাবে এবং আন্তরিকতার সঙ্গে সমর্থন জানাচ্ছি। আমি এই প্রসঙ্গে দু’চারটি কথা বলার সুযোগ নিচ্ছি, এবং সেই সুযোগ এই কথা বলতে চাই, ওপার বাংলায় যে সংগ্রাম হচ্ছে সেই সংগ্রামে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের জীবন বলি দিয়েছে, সর্বস্ব হারিয়েছে এবং হারাচ্ছে। তাই আমাদের প্রাণ আমাদের মন তাদের কাছে চলে গেছে। এই লক্ষ লক্ষ মানুষের আত্মাহুতির জন্য এপার বাংলার মানুষের একটা বিশেষ উদ্বেগ এবং আবেগ বোধ করছে সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। সারা ভারতবর্ষের মানুষের মধ্যে সেটা হয়েছে। সেটা যত বেশিই হোক না কেন, এপার বাংলার মানুষের অনুভূতি সেটা কিনা তা বলতে পারি না। এটা দেখা গিয়েছে অধিকাংশ বিধানসভায় প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, সেই সংগ্রামকে সমর্থন করে এবং লোকসভায়ও প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে সর্বসম্মতিক্রমে। এর তিনটি মৌলিক কথা হচ্ছে সিমপ্যাথি, সাপোর্ট, সলিডারিটি। এই সিমপ্যাথি কি জন্য, যাতে তারা এই সংগ্রামে জয়ী হতে পারে, সাপোর্ট দিতে হবে এই জন্য যাতে তারা সংগ্রামে জয়ী হতে পারে। এবং বলার পর তারা আশ্বাস পেয়েছে এবং তারা মুখে মুখে একথা বলছে যে তাদের যা কিছু বল তা হচ্ছে ইণ্ডিয়া এবং ইণ্ডিয়া। তাই যদি হয় ইণ্ডিয়া এবং ইন্দিরাকে আজ দেখতে হবে। একথা বলে আমি বলবো-আজকে যে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসছে তাদের প্রকৃত যত্ন নেওয়া হচ্ছে না। সমস্ত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও। আমি বিভিন্ন সময়ে সহকারী কর্মচারীদের টেলিফোন করেছি, খুব ভাল যে সাড়া পেয়েছি তা মনে করি না। সেই গতানুগতিক ধারায় জবাব দিয়েছে, আর কি করতে পারা যায়। এদের স্বাগত করেছি, রিফিউজী বলে মনে করি না এবং বলে দেওয়া হয়েছে তোমরা রিফিউজী নও, কিন্তু তাদের যেভাবে ব্যবহার করা উচিত সেইভাবে করছে না। তাদের এখানে থাকার যে ব্যবস্থা তা অপ্রতুল, স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা অপ্রতুল, খাদ্যের ব্যবস্থাও অপ্রতুল। এমনও দেখেছি যারা এসেছে এপারে তাদের দুই দিন দেড় দিন পরে একটা মীল পেয়েছে। এটা উচিত নয়। এটা অবিলম্বে দেখা উচিত। এবং সঙ্গে সঙ্গে একথাও বলব মুক্তিফৌজের যেসব মানুষ এসেছে এপারে তাদের পরের