পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৬০

রাজ্যগুলিকে অধিকতর অধিকার না দেওয়া হয় তাহলে ইফ নট ইন দিস জেনারেশন পরবর্তী জেনারেশন-এ সমস্ত দেশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে। আমরা বললে আপনার বলতেন দেশদ্রোহী, কিন্তু যেহেতু তিনি কংগ্রেসকে ১০টি সিট পার্লামেণ্ট-এ দিয়েছেন, অতএব তিনি তা নন। এদিন ঐ ইয়াহিয়া খাঁন, আয়ুব সাহেব স্বায়ত্ত্বশাসন দাবী শুনে হেসেছিলেন, কিন্তু সেটা থাকে নি। তাঁরা ভেবেছিলেন এখানে স্বায়ত্ত্বশাসনের দরকার নেই, শুধু রাজ্যগুলি তাদের প্রয়োজনে ইসলামাবাদের কাছে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে থাকবেন। এটাই ছিল ওদের যুক্তি, যে যুক্তি আমাদের এখানেও দেখান হয়। আমাদের বন্ধুস্থানীয় জনৈক সদস্যের পার্টির একটি পত্রিকায় লেখা হয়েছে যে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারীয়েট পশ্চিম পাকিস্তানের ৬৯২ জন অফিসার আর পূর্ববাংলার মাত্র ৫২ জন। সেই তুলনামূলক হিসাব যদি সম্প্রদায় হিসাবে রাইটার্স বিল্ডিংস অফিসারের বেলায় ধরা হয় তাহলে এর দ্বারা খারাপ ফল হবে। উই উইল প্লে ওনলি ইণ্টু দি হ্যাণ্ডস অফ আদার্স। তাই এ রকম যুক্তি ঠিক নয়। কিন্তু আমি যখন বলব যে, পাক শাসকচক্রের দ্বারা বাংলাদেশের মানুষকে লুট করা হচ্ছে তখন আমি কেন ভুলে যাব যে, পশ্চিম বাংলার মতন একটা সমস্যাসংকুল রাজ্যে চতুর্থ পরিকল্পনার ৫ বছরে ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার হতে আমরা পাব মাত্র ২২১ কোটি টাকা, অথচ প্রতি বছর আমাদের এখান হতে সেণ্টারল ট্যাক্স কেন্দ্রে যাবে ৫০০ কোটি টাকার বেশি। এগুলি কি পাকিস্তান গভর্নমেণ্ট দেখছে না? পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এক যুক্তি, আর ভারতের ক্ষেত্রে উল্টা যুক্তি হতে পারে না। জ্যোতিবাবু ঐ অর্থে বলেছিলেন ইফ ইউ আর সিনসিয়ার, যদি সত্যিই বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামকে আমরা সমর্থন করি, যদি সেটো পাকবিরোধী মনোভাব থেকে নয়, এই মনোভাব থেকে হয় যে, তারা এমন একটা নীতির জন্য লড়ছে যার জন্য মানুষের প্রাণ দেয়া উচিত, তাহলে সেই নীতিকে ভারতেও প্রয়োগ করা উচিত। এবং যদি না হয় তাহলে পাকিস্তানের সামরিক শাসকচক্রের হাত শক্তিশালী করব। তাদের দাবী যদি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে পশ্চিম বাংলায়ও তো সেই দাবীকে মূল্য দেয়া উচিত আমাদের। ওখানে গণতন্ত্রের জন্য মানুষের লড়াইকে যদি শ্রদ্ধা জানাই তাহলে পশ্চিম বাংলাও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের আমরা বিরোধিতা করতে পারি না, তাকেও শ্রদ্ধা জানাতে হবে। এখানে মানুষের যদি আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার আমরা সেলাম জানাই তাহলে আমাদের এখানে অন্ততঃ রাজ্যগুলির একটু অধিকতর অধিকার থাকা উচিত। এগুলি হওয়া উচিত। এ যদি না হয় তাহলে ভুল কার হবে। দ্বিতীয় যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা একটু ভেবে দেখুন। আমাদের এখানে পশ্চিম বাংলায় ৫০ হাজার মিলিটারি যদি মাসের পর মাস থাকে, যদি মাসের পর মাস সিআরপি এখানে থেকে আমাদের উপর উৎপীড়ন চালায় তাহলে কি একথা বলা চলে যে, আমরা সত্যিকারের বাংলাদেশের মানুষকে আন্তরিকতার সঙ্গে সমর্থন করছি? আমি এ কথা বলতে চাই এ জন্য, কারণ পশ্চিম বাংলার হিন্দু, মুসলমান বাঙ্গালী, অবাঙ্গালী সমস্ত মানুষের ঐক্য নির্ভর করছে আমাদের এখানকার গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার উপর।

 মাননীয় উপাধ্যক্ষ মহাশয়, আমি আর একটা কথা বলব। বাংলাদেশের মানুষ দেড় মাস ধরে লড়ছে। এটা আপনিও জানেন, আমরাও জানি যে, এই লড়াই-এ যোদ্ধা বাহিনীর পিছনে কি ছিল। এর পেছনে ছিল জনগণের অপূর্ব সমর্থন কিন্তু প্রধানতঃ যারা হাতিয়ার ধরে লড়েছে তারা হল পূর্ববাংলার পুলিশ, আনসার বাহিনী, বেঙ্গলী রেজিমেণ্ট ইত্যাদি। এরা কিছু অস্ত্র পেয়েছিল, কিন্তু তারা সোজাসুজি লড়তে জানত, স্বভাবতঃই তারা গেরিলা যুদ্ধের সব কায়দা জানে না। পাকিস্তানী মিলিটারির বিরুদ্ধে তারা এলোপাতাড়ি গুলি খরচ করল, ফলে অস্ত্রের অভাব পড়ল, অস্ত্রের খোরাকের অভাব পড়ল। তখন তাদের জরুরী কি প্রয়োজন ছিল? প্রয়োজন ছিল চোখের জল নয়, ঐ সীমান্তে কিছু চিঁড়ে, গুড় দেয়া নয় বা ট্রিপল অ্যাণ্টিজেন ইনজেকসন দেয়া নয়। কেউ কেউ বলেছিল ভলাণ্টিয়ার দিতে রাজী আছি। ওরা ভলাণ্টিয়ার চায়নি-সাড়ে ৭ কোটি মানুষ প্রাণ দেবার জন্য প্রস্তুতই, তারা ভারতবর্ষের কাছে ভলাণ্টিয়ার চাচ্ছি না; তারা চেয়েছে রাইফেল, মর্টার, আ্যাণ্টি-এয়ারক্রাফট গান, যা নিয়ে তারা লড়তে পারে। কিন্তু দেড় মাস দেরী হয়ে গেল, আর কত দেরী হবে? সেখানে কি গেছে না গেছে, তারা কি পেয়েছে বা না পেয়েছে তা আমরা জানি না; কিন্তু গত দেড় মাস ধরে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত একটা আর্মির বিরুদ্ধে তারা লড়েছে, মরেছে, সেখানে অনেক জায়গা আর্মি দখল করে নিয়েছে। ওরা সেখানে থাকতে পারেনি।