পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৬১

ওদের অসুবিধা গ্রামগুলি এখনও সংগ্রামের ঘাঁটি হিসাবে তৈরী হয়নি। অবশ্য বাংলাদেশের মানুষের লড়াই কিভাবে চলবে না চলবে সেই বিষয়ে উপদেশ দেবার স্পর্ধা আমার নেই; কারণ ওরা লড়ছে মরছে- কাজেই তাদের উপদেশ দেয়া উচিত নয়। তবে আমি এ কথা বলব যে, এদের লড়াই দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, অর্থাৎ কৃষক ওদের বাহিনীর ভিত্তি হয়ে দাঁড়াবে। এটা তারা শিখবে তাদের অভিজ্ঞতা থেকে। এটা লেলিনের কথা যে,শান্তির সময় যে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে এক বছর সময় লাগে একটা সংগ্রামের মাঝখানে সেই অভিজ্ঞতা পাঁচ দিনে এসে যায়। ওরা নিজেদের প্রয়োজনেই শিখবে। আমার স্টেটসম্যান এবং অন্যান্য কাগজে দেখেছি তারা কি লিখেছে। তারা লিখেছে এই লড়াই যদি দীর্ঘস্থায়ী, এই লড়াই যদি গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে “একট্রিমিস্টস আর ওয়েটিং বিহাইণ্ড দি স্ক্রীন” অর্থাৎ উগ্রবাদীরা পর্দার আড়ালে অপেক্ষা করছে; নেতৃত্ব চলে আসবে। এতে আমাদের বিচলিত হবার কি আছে? ওদের নেতৃত্বে কে থাকবে তা আমরা কেন বিচার করব? এ ব্যাপারে আমরা মাস্টারী না-ই করলাম। আমরা সবাই জানি যে, আজকের বিধানসভায় এই প্রস্তাব কেমন করে রচিত হয়েছে। প্রস্তাবে এই কথাটা দেয়া হয়েছে যে, প্রতিকূল অবস্থা যা-ই হোক না কেন বাংলাদেশের মানুষ শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করবেনই। যারা লড়ছে তারা লড়বে, মরবে, জয়লাভ করবে কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে আমরা ওদের কার্যকরী কিছুই দিচ্ছি না। দেড় মাস দেরী হয়ে গেল, এখনও যদি দেরী করি তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। স্বীকৃতি তো এমন কিছুই নয় যে, শুধু তা ধুয়ে ধুয়ে তারা জল খাবে এবং তাতে তাদের পেট ভরে যাবে। স্বীকৃতির এই জন্য প্রয়োজন যে, তাহলে তাদের অস্ত্র দিতে পারেন, অস্ত্র বিক্রি করতে পারেন, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র তাদের দিতে পারেন। কাজেই এই শব্দটা এই প্রস্তাবে আমার জন্য আমরা খুবই আনন্দিত এবং এরই জন্য আমরা একমত হতে পেরেছি। মাননীয় উপাধ্যক্ষ মহাশয়, কিছু কিছু বন্ধু কাটক্ষ করবার জন্য জ্যোতিবাবুকে বলেছেন তার “বন্ধুদেশ” চীনতে বোঝাতে। আমি পার্টির একজন দায়িত্বশীল কর্মী হিসাবে এই কথা বলতে পারি যে আমাদের বলায় যদি কাজ হত তাহলে বাংলাদেশের লড়াইকে বাঁচাবার জন্য ও তাকে সমর্থন করবার জন্য যা কিছু করবার প্রয়োজন তা করার জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। একথা সবাই জানেন এবং যিনি বলেছেন তিনিও জানেন, জয়নাল আবেদীন সাহেবও জানেন যে, সোভিয়েট বা চীনের প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়। আমরা কারো গুড বুকে নই। উভয়েই আমাদের সমালোচনা করেন- একদল বলেন আমরা বিভেদকামী, আর একদল বলেন আমরা নয়া সংশোধনবাদী। কিন্তু আমি বলি আমরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছি এবং আমদের মাথাটাকে কারো কাছে বন্ধক দিইনি। আমরা সব দেশকে শ্রদ্ধা করি। আর একজন সদস্য বললেন চীনকে বলুন না। ওরা কি জানেন না যে, চীন আমাদের কি চোখে দেখেন? আসলে এই সুযোগে একটু চীনবিরোধী রাজনীতি করছেন ওরা- এটা যদি বলি তাহলে কি অন্যায় চোখে বলা হবে? কই একবারও তো বললেন না আমেরিকার ট্যাঙ্কের কথা-শ্রীমতি গান্ধী নিকসন সাহেবকে একটু কম সেলাম করুন। আগে নিজেরা রেকগনিসন দিন, তারপর তো অন্য কথা বলবেন। কই, বললেন না তো দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাহায্য পাঠান বন্ধ করে দিন। কাজেই আমি বলব আপনারা চীনবিরোধী রাজনীতি করছেন; বাংলাদেশকে আপনারা কার্যতঃ সমর্থন করছেন না। তা যদি করতেন তাহলে আপনারা আমেরিকার ট্যাঙ্কের কথা বলতেন, সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে ভিয়েতনামে যে মিলিটারী যাচ্ছে তার কথা বলতেন, বলতেন ভারতবর্ষ থেকে কেন ট্রাক যাবে, জিনিসপত্র যাবে হত্যাকারীদের সাহায্যে জন্য? পূর্ব জার্মানির স্বীকৃতির কথা বলতেন। আমি সেজন্য বলছি এই যে, বাংলাদেশের লড়াই সত্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ লড়াই। এর সমর্থনের জন্য যে প্রস্তাব তাতে ভারতের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার আমি জানতে চাই না এবং আমরা প্রথমে যে ড্রাফট তৈরী করেছিলাম তাতেও আভ্যন্তরীণ ব্যাপারের কথা ছিল না। আমি শুধু বলতে চাই যে, বাংলাদেশের লড়াইকে বাঁচাতে গেলে শুধু ইয়াহিয়া চক্রের কথা বলে লাভ নেই, কাজে সাহায্য করতে হবে। আমাদের পার্টির তরফ তেকে আমি একথা বলতে চাই যে, আমাদের সমর্থন শুধু মহানুভবতার জন্য নয়, তাদের জন্য শুধু আমাদের প্রাণ কাঁদার জন্য নয়। আজকে বাংলাদেশের মানুষ যদি এগিয়ে যায় তাহলে ভারতবর্ষের মানুষও এগিয়ে যাবে, তারা যদি মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে তাহলে আমাদের গণতন্ত্রের শক্তি বেড়ে যাবে এবং