পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৬৬

কার্জন পার্কে জাতীয়তাবাদী মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে গণতান্ত্রিক অধিকারে অনশন করেছিলেন। তখন আমি জানি সি পি এম-বহু সদস্য প্রস্রাব গায়ে দেবার চেষ্টা করেছিলেন। এ কথা অস্বীকার করতে পারেন? এখন আবার গণতন্ত্রের কথা বলছেন? আমরা বন্দে মাতরম বলি বলে এই অপরাধে স্কুলে যেতে পারন না, আমাদের মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে এসে প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হবে, আমাদের বাড়ি সাঁই পরিবারে পরিণত হবে। এর পরও কি মাননীয় সি পি এম সদস্যদের কাছ থেকে গণতন্ত্রের মত বড় বড় কথা শুনতে হবে? মাননীয় উপাধ্যক্ষ মহাশয়, মানব অভুত্থানের স্রষ্টা হিসাবে পৃথিবীর ইতিহাসে যে ক’টা নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে মহাত্মা গান্ধী এবং মহাত্মাজীর পরে আর একটি নাম যোগ করুন, তিনি হচ্ছেন জাতীয়তাবাদী মহান নেতা মুজিবুর রহমান। দুটোকে এক সঙ্গে দেখিয়ে আমরা বলেছি গণ-অভ্যুত্থানের ব্যাপারে মহাত্মা গান্ধী পৌঁছতে পারেননি, সেখানে মুজিবুর রহমান কোন কোন জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন। আমরা মুজিবুর রহমানের সংগ্রামকে শ্রদ্ধা করি, কিন্তু তার চেয়ে বড় শ্রদ্ধা করি এই সংগ্রামের ক্যারেক্টারকে এবং নেচারকে। আমরা দেখেছিলাম ভিয়েতনামে লড়াই হচ্ছে। আজকে আপনারা চেঁচাচ্ছেন ভিয়েতনামে লড়াই হচ্ছে বলে। কিন্তু আপনারা বুকে হাত দিয়ে বলুন তো ভিয়েতনামের মুক্তি সংগ্রামের প্রতিই যদি আপনাদের সমর্থন হয় এবং সেই সমর্থনে সেদিন যে সুর আপনাদের কাছ থেকে শুনেছিলাম-আপনারা ভাতের হাঁড়ির কাছ পর্যন্ত, বাচ্চা ছেলের কানের কাছে ভিয়েতনাম, ভিয়েতনাম গান পৌঁছে দিয়েছিলেন এবং আপনাদের সমস্ত ক্রেডিট সেদিন ছিল, আমি আজকে তা অস্বীকার করছি না। সেদিন মুক্তি সংগ্রামীদের সমর্থনে হাজার হাজার মিছিল বেরিয়েছিল ব্রিগেড ময়দানে এবং কত লক্ষ টাকা খরচ করে তোরণ গেট নির্মাণ করা হয়েছিল এবং বহুবার ব্রিগেড ময়দানে মিটিং হয়েছিল। আজকে বাংলাদেশে শুধু একটি ভিয়েতনামবাসীর মত নয়, শত শত মুক্তি সংগ্রামী এগিয়ে আসছে দেখছি, তখন তো আপনাদের একটাও গেট দেখিনি, বাংলাদেশের স্বার্থে একটি শ্লোগানও তো দেখিনি, যে, মিছিল ভিয়েতনামের মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থনে দেখেছিলাম, বিরোধী দলের নেতারা তো এখানে বসে আছেন, আপনারা বলুন ভিয়েতনামের জন্য ব্রিগেডে যে ক’টা মিটিং করেছিলেন সেই হিসাব আজকে মিলিয়ে নিতে চাই। মুক্তি সংগ্রামই বড় কথা, না ইডিওলজি অ্যাণ্ড ইজম বড় কথা সেটা আপনারা পরিষ্কার করে বলুন। যদি ইডিওলজি অ্যাণ্ড ইজম বড় কথা হয় তাহলে আর আপনারা লোকদের ভাঁওতা দেবেন না। আর যদি মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বড় কথা হয় তাহলে আমাদের সুরে সুর মিলিয়ে বলুন যে, ভিয়েতনাম যেমন যোগ্য সম্মান পাবে, বাংলাদেশের মুজিবরের মুক্তিযোদ্ধা ও যুদ্ধও তেমনি যোগ্য পাবে। অনেক আন্তরিকতার অভাব দেখলাম, যে আন্তরিকতা তারা অনেক জায়গায় দেখিয়েছেন। তারা চাপ সৃষ্টি করবার কথা বলেছেন। তারা বলেছেন ইন্দিরা গান্ধীর কাছে চাপ সৃষ্টি করতে হবে। ডেফিনিটলি সৃষ্টি করতে হবে। কিন্তু চাপ সৃষ্টি করার মানে এই নয় যে, আগামী দিনে ট্রাম, বাস পুড়িয়ে আপনাদের মসনদ ফিরিয়ে দেবার জন্য-এইরকম চাপ সৃষ্টি যেন না হয় সেদিকে একটু লক্ষ্য রাখবেন। এবং এদিকে লক্ষ্য রেখে সেইভাবে চাপ সৃষ্টি করবেন। আমি জানি এখানে মিলিটারির কথা আগে উঠেছিল। মাননীয় জ্যোতিবাবু তখন পুলিশমন্ত্রী। বিরোধী পক্ষ একবার মিলিটারি, সি আর পি-র কথা তুলেছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন যে মিলিটারি সি আর পি আমাদের পয়সায় পোষা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে তারা আমাদের সার্ভিস দেবে। আমি বহু মাননীয় বিরোধী দলের নেতা, মাননীয় সদস্যদের জানি- বহু বাড়ি জানি- যেখানে শুধুমাত্র তাদের স্ত্রী-পুত্রদের সি আর পি পাহারা দেয়নি, তাদের স্ত্রী-পুত্রের পুতুলকে পর্যন্ত সি আর পি পাহারা দেয়। কলকাতা মহানগরীর বুকের উপর এমন বহু বিরোধী দলের নেতা আছেন, যাদের বাড়ি সি আর পি-তে পাহারা দিচ্ছে আপনারা নিজেই গিয়ে দেখে আসবেন। আপনাদের নেতারা বলেছেন, “সি আর পি হঠাও, একটা বড় জুতো” একটি দেওয়ালে লেখা আছে। সঙ্গে সঙ্গে আর একটি দেওয়ালে দেখবেন সেখানে আমাদের মানে লেখা আছে “সি আর পি-র কোলে জ্যোতিবাবু দোলে” এবং সেখানে দুটি লেখার মানে সত্যিকারে মিলিয়ে নেবেন। তাই আমি মাননীয় সদস্যদের কাছে অনুরোধ করছি যে, আপনারা ইয়াহিয়ার সাথে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে এক করে দেখবেন না এবং এখানে অনেকে এক করে দেখবার চেষ্টা করেছেন।

(গোলমাল)