পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
২৭৬

আছে সেটা আমাদের ভেবে দেখতে হবে সেভাবে এটাকে বিচার করতে হবে। আমরা আশা করি এই প্রস্তাবকে কার্যকরী করার জন্য আমরা সমস্ত শক্তি নিয়ে এগিয়ে যাব। এই কথা বলে আমার বক্তব্য শেষ করছি।

 শ্রী প্রফুল্ল কুমার সরকার: মাননীয় স্পীকার মহাশয়, আজ মুখ্যমন্ত্রী যে প্রস্তাব বাংলাদেশে সম্পর্কে এই সভায় উপস্থাপনা করেছেন, আমি ভারতীয় জনসঙ্ঘ দলের পক্ষ থেকে সেই প্রস্তাবকে সর্বান্তকরণে সমর্থন করছি। সমর্থন প্রসঙ্গে আমি কিছু আলোচনা এই সভার সামনে উত্থাপন করতে চাই। মাননীয় স্পীকার মহাশয় নিশ্চয়ই জানেন যে দ্বিজাতিতত্ত্বের পর ভিত্তি করে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিল। তৎকালীন মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা মুসলিম লীগ নেতা জিন্না সাহেব ভারতবর্ষের মুসলমান সমাজকে বুঝিয়েছিলেন একথা যে, ভারতবর্ষের মুসলমান তারা জাতি হিসাবে ভারতীয় নয় ভারতবর্ষের মুসলমান জাতি হিসাবে মুসলমান এবং তার জন্য একটা আলাদা রাষ্ট্র চাই। বৃটিশ সরকার মুসলিম লীগের এই দাবির ভিত্তিতে তৎকালীন ভারতবর্ষের কংগ্রেস দলের নেতৃবৃন্দ এই দাবিকে স্বীকার করে নিয়ে ভারতবর্ষকে দ্বিধা বিভক্ত করেছিল। একদিকে পাকিস্তান আর একদিকে ভারতবর্ষ তৈরী করা হয়েছিল। বাংলাদেশ বিভক্ত হয়েছিল এবং বাংলাদেশের একটা অংশ পূর্ব পাকিস্তান নামে খ্যাত হয়েছিল। কিন্তু মুসলিম লীগের এই সাম্প্রদায়িক প্ররোচনার জন্য ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়েছিল এবং তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ মুসলিম লীগের এই দাবী স্বীকার করে নিয়ে যে ভুল করেছিল আজকে বহু রকমভাবে ভারতবর্ষের জনতাকে এবং পূর্ববঙ্গের জনতাকে তার খেসারত দিতে হচ্ছে। স্পীকার মহাশয় ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠন করা যায় না। ধর্ম এক হলেও একটা জাতি হয় না। আজকে দিবালোকের মত এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, মুসলমান হিসাবে তারা যে জাতি গঠন করতে চেয়েছিল - পাকিস্তানের এক অংশের মুসলমান আর এক অংশের মুসলমানদের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। পাঞ্জাবী, বেলুচী মুসলমানরা বাঙ্গালী মুসলমানদের উপর আজকে অত্যাচার চালাচ্ছে। জাতি হিসাবে ধর্ম দিয়ে যে জাতি গড়া যায় না এটা তার পরিষ্কার নিদর্শন। এবং দ্বিজাতিতত্ত্ব সম্পুর্ণরূপে ভ্রান্ত নীতির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা আজকে প্রমাণিত হয়েছে। স্পীকার মহাশয়, আজকে মুজিবুর রহামানকে দেশদ্রোহী বলা হচ্ছে। মুজিবুর রহমান দেশদ্রোহী নয় এবং আওয়ামী লীগ প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার। এই কথা আমি এইজন্য বলছি যে পুর্ববঙ্গে আজকে যে ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে সেই ঘটনার পটভুমিকা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে ভারতবর্ষ বিভক্ত হবার পর থেকে পাকিস্তান সৃষ্টি হবার পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের উপর যে নির্মম শাসন এবং শোষণ চালিয়ে আসা হচ্ছিল, শুধু মাসন এবং শোষণ নয় তাদের কালচারের উপর তাদের কৃষ্টির উপর বাঙ্গালী সভ্যতার উপর বাংলা ভাষার উপর যে ভাবে অত্যাচার চালানো হচ্ছিল, বাঙ্গালী জাতিকে যেভাবে শ্বাসরোধ করে মারার উপক্রম করা হয়েছিল আজকের ঘটনাবলী তারই বিস্ফোরণ মাত্র। মুজিবর পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে চাননি। মুজিবর চেয়েছিলেন যে পাকিস্তানের সংবিধান এমন ভবে তৈরী করা হোক যে, সংবিধানের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ, শাসন, অত্যাচার করতে না পারে তার জন্য ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু কেন্দ্রে একটা সরকার থাকুক এটা মুজিবর রহমান বা আওয়ামী লীগ চেয়েছিলেন এবং প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ইয়াহিয়া আর ভুট্টো ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটাধিক্য জয়লাভ করেছিলেন এবং পূর্ব বঙ্গের মানুষদের একত্রিত করে সংগটিত করে এক জায়গায় এনেছিলেন। তার ফলে পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক শাসকরা ভীত এবং সন্ত্রস্ত হয়েছিলেন। তাই কিভাবে এই জাতিকে নস্যাৎ করা যায় সেই চক্রান্ত তাঁরা করেছিলেন এবং তারপর ১১ দিন ধরে সেখানে আলাপ-আলোচনার নাম করে ভিতরে ভিতরে সামরিক সমস্ত প্রস্তুতি চালিয়ে তাঁরা গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন এবং গণতন্ত্রের বিশ্বাসঘাতকতা করে হঠাৎ ২৫ তারিখে আলোচনা ভেঙ্গে দিয়ে আবার নতুন করে সামরিক শাসন প্রবর্তন করেছিলেন। তখন সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষনা হয়ে গেল, এবং মুজিবর স্বাধীনতা ঘোষনা করলেন। তাই আজকে বাঙ্গালী জাতি সেখানে মরণপণ করে স্বাধীনতার জন্য লড়ছেন। আমরা বাঙ্গালী হিসাবে মনে করি ওরা আমাদের স্বজাতি, তারা বাঙ্গালী জাতি, পাকিস্তানী নয়, মুসলমান নয়, বাঙ্গালী জাতি। সেখানে হিন্দুরাও স্বাধীনতার জন্য লড়ছেন, মুসলমানরাও স্বাধীনতার জন্য লড়ছেন। কাজেই সেখানকার স্বাধীনতা সংগ্রামকে বাঙ্গালী জাতী হিসাবে — এটা আমাদের দেশের একটা অংশ ছিল, ভারতবর্ষের একটা অংশ ছিল, সেই অংশ