পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৪৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৪১৫
শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের সোশ্যালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টির বক্তব্য পুস্তিকা জুলাই, ১৯৭১

বাংলাদেশ সম্পর্কে বক্তব্য

 প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধী ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের ভাষণ ও বিবৃতি থেকে মনে হয় নয়াদিল্লীর আশা আন্তর্জাতিক চাপের ফলে বাংলাদেশের জনগণের সমস্যা আগামী ছয় মাসের মধ্যে শেষ হবে। এ মন্ত্রীদের ধারণা যে, যে ৭০ লাখ শরণার্থী পশ্চিম বাংলা, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরাতে এসেছে তারা ঐ সময়ের মধ্যে স্বেচ্ছায় তাদের জন্মভূমিতে ফিরে যাবে।

 আওয়ামী লীগের নেতা যাঁরা মুজিবনগর থেকে বাংলাদেশ সরকার চালাচ্ছেন তাঁরাও এ রকমই আশাবাদী। এদের সকলেরই ধারণা ইয়াহিয়া গোষ্ঠী আজ ভীষণ চাপের তলায় আছে। শুধু যে দেশের আর্থিক সমস্যা প্রবল হয়ে তাদের দুর্বল করেছে তা নয়। রুশ ও আমেরিকা প্রমুখ শক্তিশালী দেশগুলিও মুজিবুরের সঙ্গে রাজনৈতিক বোঝাপড়া বা মীমাংসার জন্য চাপ দিচ্ছে।

 কেউ কেউ একথাও বলেন ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবের নরমপন্থী সহযোদ্ধাদের সঙ্গে মীমাংসা না করে পারবেন না। পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক গোষ্ঠীকে বাঁচাবার এ ছাড়া আর পথ নেই। দেরী হলে বিপ্লবের নেতৃত্ব বামপন্থী বা চরমপন্থীদের হাতে চলে যাবে। তখন কোন মীমাংসাও হবে না আর এ গোষ্ঠীকেও বাঁচিয়ে রাখা চলবে না। মুক্তিফৌজের গেরিলা আক্রমণের জোর এখন আগের তুলনায় অনেক বেশী, ফৌজের শক্তিও বেড়েছে, অনেক নতুন লোক অস্ত্র শিক্ষা পেয়েছে। এ সমস্তই ঠিক কিন্তু উদ্দেশ্য হলো ইয়াহিয়া গোষ্ঠীর উপর চাপ বৃদ্ধি। গেরিলা আক্রমণের পক্ষে বর্ষাকাল খুবই উপযোগী। একই পাক সৈন্যের মনোবল ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। তার উপর গেরিলাদের তৎপরতা চলছে বেড়ে। ফলে পাক সেনাবাহিনী ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য। এ হলো আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচার। ইচ্ছা পূরণ ছাড়া একে আর কি বলা যায়।

 মুক্তিফৌজের যে সমস্ত নেতারা হাতে হাতিয়ার নিয়ে লড়াই করছেন তাঁরা কিন্তু এতোটা আশাবাদী নন। অল্প কিছুদিন আগে জাতীয় আওয়ামী পার্টির মৌলানা ভাসানী এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন যে অন্য বামপন্থী দলগুলি গ্রামে গ্রামে সর্বদলীয় কর্মপরিষদ গড়েছে। উদ্দেশ্য হলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের জন্য গণপ্রস্তুতি।

 তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে সংগ্রাম দীর্ঘস্থায়ী হলে কি নতুন নেতৃত্বের উদ্ভব হবে না। উত্তরে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন, বাঘ কখনো মানুষের রক্তের স্বাদ ভুলতে পারে না। বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ১৩ লক্ষ। হাতে হাতিয়ার পেলে মানুষের চাল-চলন, ধ্যান-ধারনা ও আচার ব্যবহার সবই বদলে যায়। অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদের জাতীয় আওয়ামী পার্টি, পূর্ব বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টি (মস্কোপন্থী) ও অন্য কমিউনিস্ট গোষ্ঠী (যারা এককালে মাও নীতি ঘেঁষা ছিল) এ সমস্ত দলের নেতাদের ধারণা বিপ্লব কষ্টসাধ্য ও দীর্ঘায়িত হবে। এর জন্য প্রয়োজন সশস্ত্র মোকাবেলার উপযুক্ত রণকৌশল ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জনগণের রাজনৈতিক প্রতিরোধের কার্যক্রম। বৈপ্লবিক দলগুলির মধ্যে পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি যার নেতা মতিন আলাউদ্দীন ও কমিউনিস্ট গ্রুপ যার নেতা আব্দুল জাফর ও রাসেদ খান মেনন। তৃতীয়টি হলো পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সিলেনিনিস্ট)- এর নেতা মহম্মদ তোহা। এ দলটি পিকিংপন্থীর কাছ ঘেঁষেই চলে। কাজেই