পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৪৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৪৪৬
শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের সমর্থনে পশ্চিমবঙ্গ জমিয়তে উলামার বক্তব্য কম্পাস ২৮ আগষ্ট, ১৯৭১

বাংলাদেশ ও জমিয়ত উলামা

অমর রাহা

 খিশত্ আউয়াল চুম নেহাদ মেহমার কাঘ তা সুবাইয়া মীর রহওয়াদ দিওয়ারকাঘ, অর্থাৎ ভিত যার বাঁকা তার চুড়া আকাশচুম্বী হলেও বাঁকা থাকবেই- বলেছেন শেখ সাদী। তাই বাংলাদেশ সম্পর্কে অনুষ্ঠিত পশ্চিম বঙ্গ জমিয়তে উলামার, কনভেনশনে অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি মওলানা মোহাম্মদ তাহের সাহেব বলেছেনঃ গোড়ায় যার গলদ রহিয়াছে, তাহার শেষ শোধরান সহজ নয়, সমাপ্তি তার সুন্দর হতে পারে না। এ কথা মওলানা বলেছেন পাকিস্তানের জন্ম ও ইতিহাস মনে করে এবং তারই ভাষায়ঃ “একদা যে স্বার্থন্ধতা ও ক্ষমতা লিপ্সা সাম্প্রদায়িকতার নামে দেশ বিভাগ এবং পাকিস্তানের জন্ম দিয়েছিল, আজ সুদীর্ঘ তেইশ বৎসর যাবৎ পাকিস্তানের ইতিহাসে তাহা বারে বারে নগ্নভাবে আত্মপ্রকাশ করিয়াছে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সেই উগ্র ক্ষমতালিপ্সা এবং স্বার্থপরতারই ক্রমপরিণতি।”

সোনর বাংলা শ্মশান কেন?

 ‘……ধর্মের নামে, ইসলামের নামে, দেশের ঐক্য সমৃদ্ধি এবং নিরাপত্তার নামেই এই শোষণ এবং অবিচার চালিয়েছে। অথচ যে পবিত্র ইসলাম এবং ধর্মের নাম দিয়ে এই শোষণ সেই পবিত্র ইসলাম ধর্মে কিন্তু ইহার অবকাশ মাত্র নাই। ……প্রিয় নবী (দঃ) স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করিয়াছেনঃ যে রাষ্ট্রনায়ক কিংবা সরকার তাহার প্রজা সাধারণের কল্যাণ প্রচেষ্টা করেন না, তাহাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন, নরকের আগুনেই তাহার নিশ্চিত ঠাঁই।

তাই প্রতিবাদ

রবীন্দ্রনাথ বলেছেনঃ

অন্যায় যে করে, আর অন্যয় যে সহে
তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে।

 তাহের সাহেব তাই হাদীস শরীফ উল্লেখ করে বলেনঃ অত্যাচার, অবিচার চুপ করিয়া সহ্য করিতে নাই, অত্যাচার অবিচারের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় এবং নীরব দর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করিতে নাই, ইহাতে সমগ্র সমাজের সর্বনাশ অবশ্যম্ভাবী।

 ……অত্যাচার অবিচারের বিরুদ্ধে মানুষ কাপুরুষতা প্রদর্শন না করিয়া যাহাতে সৎ সাহসে আগাইয়া আসে তজ্জন্য উৎসাহ দান হুজুর (দঃ) ঘোষণা করিয়াছেন; “জালিম রাষ্ট্রনায়কের সম্মুখে সত্য কথা ঘোষণা শ্রেষ্ঠতম জেহাদ।”

 তাই দেখা যায়, ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী হতে ১৯৬৯ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত নানাভাবে এবং জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় এবং ঘোষিত বা অঘোষিত জেহাদ। আর শেষতঃ ২৩ বছর পর সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ রায় দিলো ছয় দফার পর। শেখ মুজিব নেতৃত্ব হোল এই দীর্ঘ সংগ্রামের প্রতীক।