পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৪৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খণ্ড
৪৪৭

 ইসলামাবাদ চক্র প্রতিনিধি জেনারেল ইয়াহিয়া বাংলাদেশের ভাষাকে এবং রায়কে পদদলিত করবার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের দলনায়কদের সঙ্গে পরামর্শ মাত্র না করিয়া’ জাতীয় পরিষদের বৈঠক বাতিল করে দিলেন। তাছাড়া ইয়াহিয়া শেখ মুজিবুরকে প্রধানমন্ত্রিত্বের টোপ দিয়া ছয়দফা দাবী হইতে বিচ্যুত করিতে টেষ্টা করিলেন কিন্তু, ‘জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা না করিয়া তিনি স্পষ্ট জবাব দিলেন? জাতি আমাকে এবং আওয়ামী লীগকে প্রধানমন্ত্রিত্বের জন্য ভোট দেয় নাই, তাহারা ছয় দফা দাবীতেই ভোট দিয়াছে; আমি তাহা বিসর্জন দিয়া জাতির সংগে বিশ্বাসঘাতকতা করিতে পারিব না।’

 তাহের সাহেব তাই বললেনঃ ইহাতেই শোষকের আঁতে ঘা পড়ে; তাহারা ভাবে ব্রিটিশ সরকারকেও একদা যে অসহযোগ আন্দোলনের অস্ত্র শেষ পর্যন্ত ঘায়েল করিয়াছে, ভারতছাড়া করিয়াছে, শোষিত বাঙ্গালীরা যদি সেই অস্ত্র ব্যবহার করে তবে আর রক্ষা নাই, ইহাতেই জোকের মুখে চুন পড়িবে……। অতএব সূচনাতেই সামাল দাও; এই শোষিত অবাধ্য বাঙ্গালী জাতিকে ডাণ্ডা মরিয়া ঠাণ্ডা করিয়া দাও……… তাহাদের মেরুদণ্ড ভাঙ্গিয়া দাও।……এবং বাঙ্গালী নিধনের নির্দেশ দিয়া ইয়াহিয়া ঢাকা হইতে করাচী যাত্রা করেন।

সবই চলে ধর্মের বাদে

 ইসলাম ধর্ম………রক্ষা নামেই ইয়াহিয়া সবকিছু করিতেছে। শিশু হত্যা ধর্ষণ, নিরাপরাধ জনতা নিধন, বাঙ্গালী নিধনের নামেই সবই চলিতেছে। “তাহারা মযলুমকে ঠাণ্ডা এবং জগৎকে ধোঁকা দিবার জন্য একই সঙ্গে বন্দুকের গুলি এবং ধর্মের বুলি ব্যবহার করতঃ মযলুমের শোণিত রক্তের হোলি খেলিতেছে। বাংলাদেশের সর্বত্র চলছে তাহাদের এই পৈশাচিক নৃত্য।

জেহাদ ও মুক্তিবাহিনী

 প্রায় ২৩ বছর ধরে যে অব্যক্ত ও জেহাদ চলে আসছিল তাই ২৫শে মার্চের রাতে রূপ নিল ভিন্নভাবে।

 ইয়াহিয়া খানের বিশ্বাসঘাতকতার ও বুলেটের গুলীতে পরিবেশে জন্ম নিল মুক্তিবাহিনী। বাধ্য হোল মানুষ জবাব দিতে। তাহারা যে যেখানে পারল শোষক সরকারের জালেম সেনাদের প্রতিরোধে প্রাযস পাইল তাই তাহাদের প্রত্যুত্তর সুসংঘবদ্ধ ছিল না। পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না; ক্রমে মাস দুই পরে তাহারা সুপরিকল্পিতভাবে তাহাদের অভিযান চালাইতে থাকে।”

 এই মুক্তিবাহিনীর উদ্দেশ্যে তাহের সাহেব হাদীস শরীফ হতে উল্লেখ করে বলেনঃ “নিজেদের প্রাণ, ধন-মান রক্ষায় যে নিহত হয় তাহার মৃত্যু শহীদের মৃত্যু”।

 এই কনভেনশনে সভাপতি হিসেবে আজাদ হিন্দ বাহিনীর জেনারেল শাহ নওয়াজ খান, সারা ভারত জমিয়তে উলামার সাধারণ সম্পাদক সদস্য মওলানা আসাদ মাদানী প্রভৃতিও একটি ঐশ্লামিক রাষ্ট্রের স্বরূপ নিয়ে যেমন বলেছেন, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের সংগ্রামী জনসাধারণকেও অভিনন্দন জানান। আর সকলেই তাহের সাহেবের “আমেরিকা, চীন প্রভৃতির নিজ স্বার্থে জালিম ইয়াহিয়া খান ও তার সরকারের সাহায্য যদি দোষের না হয়, তবে নির্যাতিত মযলুম বাংলাদেশবাসীর সাহায্য সহায়তায় হিন্দুস্তানের অপরাধ কি? উক্তির সমর্থনে নিজেদের কথাও বলেন।

শেষতঃ এই কনভেনশন প্রস্তাব গ্রহণ করে

 নিঃশর্ত সমর্থন জানান বাংলাদেশের সংগ্রামকে; (২) ঘৃণা প্রকাশ করে ইসলামাবাদ চক্রের ফাঁসিস্ত পদ্ধতিকে; (৩) দাবী করে মুজিবের মুক্তি এবং ঐ সংগে বিশ্ববাসীর কাছে আবেদন করে ইসলামাবাদ সামরিক চক্রের বিচার, এবং আশা প্রকাশ করে যে ভারত সরকার সময়মত স্বীকৃতি দেবে প্রজাতন্ত্রিক বাংলাদেশকে।