পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৫২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ՏԳ বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খন্ড পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে বন্ধন যতই ঢিলে হোক না কেন। কিন্তু বাংলাদেশের বিপর্যয়ের মধ্যে কী কী প্রশ্ন নিহিত রয়েছে অন্তত ভারতের সে বিষয়ে কোন ভ্রান্ত ধারণা থাকা উচিত ছিল না। ভারতের তো কোন ঔপনিবেশিক উচ্চাশা নেই, আর ভারত সরকারের আজও কিছু সদস্য আছেন যারা নিজেরা এক সময়ে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন। গোড়া থেকেই এটা পরিষ্কার যে, পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রে যা ঘটেছে তা কোন জাতির বিচ্ছিন্নতা নয়। তা হচ্ছে স্বাধীনতার জন্য ঔপনিবেশবিরোধী সংগ্রাম। অত্যন্ত বেদনার কথা, অনেক বেশি অস্ত্রশক্তি সম্পন্ন একটা বাহিনীর বিরুদ্ধে সাত মাসের নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের পরও, সার্বভৌম স্বাধীনতার কম কোন কিছু তাদের এবং তাদের জনগণের কাছে কদাচ গ্রহণীয় হবে না। বাংলাদেশের ন্যায্য সরকার স্বয়ং বারংবার এই ঘোষণার পরও, ভারতের নেতৃবৃন্দ আলোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলে চলেছেন। এর চেয়ে অন্তঃসারশূন্য আর কিছু কল্পনা করা কঠিন। গত সাত মাসের অভিজ্ঞতার পরও তারা কি করে আশা করতে পারেন যে, পাকিস্তানী সামরিক শাসকগোষ্ঠীকে তাদের পূর্বাংশের কলোনী হাতছাড়া হওয়ার ক্ষতি স্বীকারে চাপ দিয়ে রাজী করানো যেতে পারে- বিশেষ করে যখন তার কিছু শক্তিশালী বন্ধু জুটেছে? নাকি আমাদের শাসকরা নিজেরাই পাকিস্তানকে অখন্ড রাখার প্রচ্ছন্ন ইচ্ছা পোষণ করেন, তা-ই যদি হয়, ঈশ্বর এই দেশকে রক্ষা করুন। সমস্যাটি যদি শুধু বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়েই হত তাহলে আমরাও বাস্তবতাবর্জিত অপ্রাসঙ্গিক অনেক বুলি আওড়াতে পারতাম। কিন্তু আমাদের মৌলিক জাতীয় স্বার্থ যে কতখানি বিপন্ন তা আমি আমার কতা দিয়ে হয়ত আমাদের শাকদের বোঝাতে পারবো না, তাই প্রধানমন্ত্রীর কিছু উক্তিই উদ্ধৃত করছি (উক্তিগুলো ২৪শে মে ১৯৭১ লোক সভায় প্রদত্ত এবং সরকারীভাবে মুদ্রিত প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ থেকে): শরণার্থী স্রোতের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “এত অল্প সময়ের মধ্যে এত বিপুল দেশত্যাগ মানুষের লিখিত ইতিহাসে অভূতপূর্ব। গত আট সপ্তাহের মধ্যে বাঙলাদেশ হতে প্রায় ৩৫ লক্ষ লোক ভারতে এসেছে। দেশভাগের পর থেকে উদ্বাস্তু বলতে আমরা যা বুঝে এসেছি এরা তা নন। এরা যুদ্ধের কবলে পড়েছেন, সীমান্তের ওপারে সামরিক সন্ত্রাস হতে আশ্রয়প্রার্থী হয়ে এখানে এসেছে।” এরপর প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, “শত নয় সহস্র নয় লক্ষ সামরিক সন্ত্রাস হতে আশ্রয়প্রার্থী হয়ে এখানে এসেছে।” এরপর প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, “শত নয় সহস্র নয় লক্ষ লক্ষ নাগরিককে বেয়নেটের মুখে তাদের ঘরবাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করার অধিকার কি পাকিস্তানের আছে। আমাদের কাছে এ এক অসহ্য অবস্থা।” তা ছিল মে মাসের চতুর্থ সপ্তাহ, এখন হচ্ছে অক্টোবরের চতুর্থ সপ্তাহ। তখন শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ৩৫ লক্ষ, এখন ৯৫ লক্ষ। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মতে তখনই যদি অবস্থা ‘অসহনীয় হয়ে থাকে তারপর গত পাঁচ মাসে যে ক্রামগত শরণার্থীদের স্রোত বেড়েই চলেছে তা আমরা কি করে সহ্য করতে পারলাম? সম্ভবতঃ আমাদের প্রিয় আন্তর্জাতিক উপকারীদের বন্ধুসুলভ চাপই আমাদের সহ্যের স্তর উন্নীত করতে সাহায্য করেছে। জানি না কোনদিনই আমাদের সহ্যের সীমায় আমরা পৌঁছিব কিনা। একই বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, “ভারতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে এবং ভারতেরই মাটিতে দাঁড়িয়ে পাকিস্তানকে তার রাজনৈতিক বা অন্যান্য সমস্যার সমাধান করতে দেয়া যায় না।” পাকিস্তান কিন্তু ঠিক তাই করে চলেছে, তথাপি তা থামাবার জন্য প্রধানমন্ত্রী এই মাত্রই তিনি করেছেন তার দূতদের অন্যান্য রাষ্ট্রে পাঠিয়ে তাদের অনুরোধ উপরোধ করেছেন যে কাজ পাকিস্তানকে করতে দেয়া যায় না বলে তিনি গম্ভীরভাবে ঘোষণা করেছেন তা থেকে তাঁরা যেন পাকিস্তানকে বিরত রাখেন। পাকিস্তান অন্যান্য রাষ্ট্রের ক্ষতি করে এবং তাদের মাটির উপর দাঁড়িয়ে তো তার সমস্যা সমাধান করতে চায়নি; তাহলে ভারত তার নিজের জাতীয় স্বার্থে করতে প্রস্তুত নয় তা তাদের কেউ করবে- খুন কম করে বললেও এ আত্মবঞ্চনা নয় কি? অন্য কোন রাষ্ট্র যে আমাদের কল্যাণে ভারতকে আর অসহ্য বিড়ম্বনা থেকে উদ্ধার করার জন্য বীর পুঙ্গরবে ভূমিকা নেয়নি তাতে অন্তত আমি তো তাদের দোষ দিতে পারি না। বীর্যবত্তার যুগ যদি কখনও থেকেও থাকে, বহুকাল তা অতিক্রান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন : “শুধু ভারতেই নয় প্রত্যেক দেশকেই তার নিজের স্বাৰ্থ দেখতে হয়। ওরা (অর্থাৎ পাকিস্তানীরা) বিশ্ব মানবতার একটি বিরাট ভূখন্ড এই যে ভারত তার শান্তি ও স্থায়িত্ব বিপন্ন করছে।” তারপর