পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৫২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8b。 বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খন্ড বাড়াচ্ছে এবং আজ হউক কাল হউক সে ঝাঁপিয়ে পড়বে। অন্যদিকে একথাও জানা ইসলামাদস্থিত আমাদের হাইকশিন বরাবর অনেক আশার কথা বলেছেন। দু’জনেই সমান যোগ্য প্রতিনিধি, তাঁদের ওপর দোষারোপ করে লাভ নেই। কিন্তু যখন দুটি সম্ভাবনাই ছিল, রাজনৈতিক নেতৃত্বের কর্তব্য ছিল, যে কোন একিট সম্ভাবনার জন্যই প্রস্তুত থাকা। আমাদের সুদক্ষ প্রধান সেনাপতিকে যদি অত্যন্ত খারাপ সম্ভাবনার জন্য প্রস্তুত থাকতে পরামর্শ দেওয়া হত, তাহলে আমি নিশ্চিত জানতাম আমাদের সৈন্যবাহিনীকে দোষ দেবার কোন কারণই থাকত না। কোন কোন মহলে অনেক করে বলা হয়েছে যে, তেমন কিছু করতে গেলে বাংলাদেশ ব্যাপারটা পাকভারত যুদ্ধে গিয়ে দাঁড়াত। আজ হউক কাল হউক সে ঝুঁকি নিতেই হবে, কেননা আর কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এপ্রিলের সেই গোড়ার দিকে অবস্থা খুবই অনুকূল ছিল এবং বিশ্বের লোক জেগে উঠবার ও চলতি ধরনে শোরগোল তুলবার আগেই প্রশ্নটির মীমাংস হতে পারত। এই অনৈতিক দোষদশী ও হৃদয়হীন পৃথিবীতে কাজ করে ফেললে তবে লোকে তা হিসেবের মধ্যে আনে। আমি একথা বলছি না ভারতের উচিত ছিল বাংলাদেশ দখল করে নেওয়া- কিন্তু তাঁদের সাহায্যে আমাদের ছুটে যাওয়া উচিত ছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে মিলে দশপনের দিনের মধ্যে কাজ শেষ করে ফেলা উচিত ছিল। তারপর আমরা বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরও করতে এবং বাংলাদেশ থেকে সরে আসতে পারতাম যদি না বাংলাদেশ সরকার চাইতেন কোন না কোন ধরনে আমাদের সামরিক সাহায্য বাংলাদেশ আরও কিছুদিন থাকুক, আমাদের আধুনিক সমরাস্ত্র এবং অফিসারগণ বাংলাদেশের নিজস্ব বাহিনী গঠনে কিছুদিন সাহায্য করুক। মাত্র এই একটি সুযোগই হাতছাড়া হয়নি। কিন্তু সেসব কথা বলতে গেলে তা ক্লান্তিকর হবে। কাজের কথা হলঃ যথেষ্ট বিলম্ব ঘটে গেলেও এখন পুরোপুরি সাহস করে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া উচিত এবং তাঁদের স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে সর্বতোভাবে সাহায্য করা উচিত। তাতে হয়ত পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে, কিন্তু তেমন পরিস্থিতির জন্য যে কোন অবস্থাতেই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। শ্রীমতি গান্ধী বারবার জোর দিয়ে বলছেন বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিয়েও স্বাধীনতা সংগ্রামে সম্ভবমত সমস্ত সাহায্য দেওয়া যেতে পারে। এ কথা শুধু এ দেশের লোকের চোখে ধুলো দেওয়া হচ্ছে। কোন সন্দেহ নেই আমরা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রচ্ছন্নভাবে কিছু সাহায্য দিচ্ছি। তা আমরা যতই অস্বীকার করি, গত কয়েক মাস ধরেই পৃথিবীর সংবাদপত্র তা নিয়ে লিখছে এবং পৃথিবীর কোন বৈদেশিক দূতাবাসের কাছেই তা গোপন নয়। আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতা আরও ক্ষুঃ করা ছাড়া এ ধরনের নিরর্থক দোমুখো কাজে কী ফল হচ্ছে? কোন কোন দেশ যদি অভিযোগ করে যে আমরা গোপন সাহায্যের দ্বারা বাংলাদেশে সংঘাত জিইয়ে রাখছি তাহলে সত্যিই কি আমরা তাদের দোষ দিতে পারি? অতএব এখন আর বীরত্বব্যঞ্জক উক্তি নয় বীরত্বপূর্ণ কাজের প্রয়োজন। আমি আগেই বলেছি বাংলাদেশ প্রশ্নের রাজনৈতিক সমাধান শুধু ভারতের হাতেই আছে। ভারত যদি এগিয়ে যায়, নিশ্চিতরূপে অন্যরাও তা অনুসরণ করবে। বারত এত বন্ধুহীন নয়। অন্যদের সাহায্য যদি ভারতের প্রয়োজন, ভারতের সাহায্যও অন্যদের কম প্রয়োজন নয়। শুরুতে ভারতীয় সংসদ পরিষ্কার ভাষায় ও একমত হয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যে প্রস্তাব নিয়েছিলেন তাতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সমগ্র জাতি এই প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু তারপর থেকে তাঁর দ্বিধাগ্রস্থতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে অক্ষমতা, একই সময়ে গরম ও নরম উক্তি জাতির মানসিকতা বিভক্ত ও হীনবল করে দিয়েছে। দুর্ভাগ্যের কথা, এত বড় সংকটে- যখন জাতীয় ঐক্য অত্যন্ত জরুরী প্রয়োজন- তখনও তিনি তাঁর ভাগ করার রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন, কয়েকটি পার্টির বিরুদ্ধে এই অশোভন অভিযোগ করেছেন যে, তারা শুধু দলের স্বার্থে নয়