পাতা:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র (দ্বাদশ খণ্ড).pdf/৭১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○brど) বাংরাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ দ্বাদশ খন্ড মহোদয়, সম্মানিত সদস্যদের আমি একথাও বলব, ডঃ লোহিয়া সেকালেই সাবধানী উচ্চরন করেছিলেন, পূর্ব বাংলা যখন স্বাধীনতা সংগ্রাম করবে তখন ভারত সরকার তটস্থ থাকতে পারে কিন্তু ভারতে জনগণ যেন কখনই এরূপ অন্যায় না করেন। ডঃ লোহিয়া ভারত সরকার ও ভারতে জনগণকে আলাদ সরকার যদি সরে থাকেন তবে আপনারাও অনুরূপ করবেন না। সেটা হবে মহা অন্যায়, স্বাধীন বাংলার সংগ্রামে আপনারা ত্যাগ স্বীকার করবেন। মহোদয়, এই নিবন্ধের শেষের দিকে আছে ১৯৪৮ সালে দেশ বিভাগের কমাস পরে আমি বলেছিলাম তিনটির মধ্যে কোন একটি কিংবা তিনভাবেই পাকিস্তানের অবসান হবে? আলোচনার মাধ্যমে সংঘীয় ঐক্য, ভারতে সমাজবাদী ক্রান্তি এবং পাকিস্তানের হামলার জবাবে ভারতের আক্রমণ। এই ভাষণে পাকিস্তানের তদানীন্তন গভর্ণর জেনারেল মিঃ জিন্নাহ চটে গিয়েছেলেন। মহাত্মা গান্ধীও সে সময় জীবিত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর ফলে ঐক্যের সমস্ত ক্রম ভেঙ্গে গেছে, এ কারণ ছাড়া আমি এই মত পরিবর্তনের কোন প্রয়োজন বোধ করি না। যতটুকু বিলম্ব ঘটছে তার দায়দায়িত্ব কট্টরপন্থী হিন্দুদের ওপর এটি তাঁর মত। মহোদয়, এখন আমি আপনার অনুমতি নিয়ে বন্ধু শ্ৰী শীলভদ্র ইযাজী, সরদার শরণ সিংহ এবং দীক্ষিত মহাশয়কে বলব, ইতিহাসকে ভুলে যাবেন না। অতীতকে ভুলে যাবেন না। যে প্রস্তাবে দেশ বিভাগ মেনে নেয়া হয়েছিল তার মধ্যে কি কোন অঙ্গীকার করা হয়েছিল ? ১৪-১৫ জুন, ১৯৪৭ দিল্লী। গান্ধীজী, এ আই সিসি ছিলেন। প্রস্তাবে আছেঃ কংগ্রেস সে কংগ্রেস তো মরে গেছে, ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারীতেই ওই কংগ্রেসের মৃত্যু হয়েছে যার নেতা ছিলেন গান্ধীজী কংগ্রেস তার জন্য লগ্ন হতে একটি অখন্ড স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন দেখেছেন, তাকে পেতে লক্ষ লক্ষ নরনারী কষ্ট সয়েছে। আমাদের ভারত যাকে পৃথিবী, যাকে ইতিহাস, যাকে ভূগোল, সমুদ্র, পাহাড়, এক সত্ত্বা বানিয়েছে পৃথিবীর কোন বড় শক্তি তার ভাগ্য প্রতিহত করতে পারবে না। যে ভারতের স্বপ্ন আমরা দেখেছি তা সর্বকাল সর্বক্ষণ আমাদের হৃদয়ে ও ধ্যানে জাগরুক থাকবে। আমি শরণ সিংহ মহাশয়কে জিজ্ঞেস করব এর অর্থ কি? এর অর্থ এই যে, আমাদের ভারতের স্বরূপ তাই হবে আমরা যা অংগীকার করেছিলাম ১৯৪৭ সালে ১৪-১৫ জুনে।...... আমি আবার আপনার মাধ্যমে একথার পুনরাবৃত্তি করতে চাই, আমাদের সংসদের কেন্দ্রীয় ভবণে রাষ্ট্রীয় সমিতির যে তিনজন প্রতিনিধি এসছিলেন তাঁরা কি একথা বলেননি যে তাঁদের পক্ষে চিরদিনের জন্য পাকিস্তানের সামাধি হয়েছে? সাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন কি একথা বলেন না, আর কোন শক্তি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে এক করতে পারবে না, আগের সম্পর্ক আর পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভপর নয়। ইয়াহিয়া খানই পাকিস্তানের সমাধি ঘটিয়েছে। ইয়াহিয়া খাঁর সামরিকশক্তি পাকিস্তানকে খতম করেছে। অতএব আপনারা কেন ভয় পান যে পাকিস্তানের বিলোপ ঘটানোর কথা বললে আমরা কোন বড় পাপ করে ফেলব। আপন মনের দুর্বলতা ঢাকার জন্য, জিনের অকৰ্মণ্যতা লুকানোর জন্য একথা বলা হয় আমরা তো পাকিস্তানকে মেনে চলি। ওদিকে পাকিস্তান হতে পাখতুনিস্থান চলে যাচ্ছে বেলুচিস্থান চলে যাচ্ছে। সবকিছু আপন আপন স্থানে এসে যাবে, এভাবে ইতিহাসের পরিণতি হতে রেহাই পাওয়া যাবে না। এ প্রসংগে আজ মুজিবুর রহমানকে শাস্তি দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, আমি চাই এই পরিষদ (সদন) একই কণ্ঠে আওয়াজ তুলুন, সাবধান, তোমরা যদি মুজিবকে শাস্তি দাও ফাঁসি দাও, তবে ভারতে প্রতিটি নাগরিক নিজের ফাঁসি মনে করে সম্মিলিত শক্তিতে সারা বিশ্বে ফাসির কথা ছড়িয়ে দেবে যাতে মুজিবুর রহমান আমাদের মধ্যে হতে হারিয়ে না যায়। মহোদয়, আমি বলতে চাই স্বাধীন বাংলাদেশকে যদি স্বীকৃতি দিয়ে দেয়া হত তাহলে কি মুজিবের ফাসির কথা উঠতো? কখনো উঠতো না। বাংলাদেশকে এযাবত স্বীকৃতি না দেয়ার পরিণতি আসছে, আজ মুজিবুর রহমানের ফাসি দেয়ার কথা উঠেছে, মামলা চালানোর কথা হচ্ছে। এর দায়- দায়িত্ব ভারত সরকারের। আমি বলতে চাই, স্বাধীন ভারতের শহীদগণের রক্তে কি ভারত সরকারের হাত রঞ্জিত হয়নি।